শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর ২০২৪ সালের জন্য সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে দেশের টেলিকম খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি গ্রামীণফোন। কোম্পানিটি গত বছরের জন্য সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করবে।

গ্রামীণফোন জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশের মধ্যে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে এ অর্থ বিতরণ করা হয়। আর লভ্যাংশের বাকি ২ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে চলতি বছর।

গ্রামীণফোন দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০০৯ সালে। এরপর এবারই প্রথম কোম্পানিটি প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ লভ্যাংশের রেকর্ডটি ছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর কোম্পানিটি সব মিলিয়ে লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করেছিল ৩ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।

সর্বশেষ গত নভেম্বরের শেয়ারধারণ–সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের শেয়ারের ৯০ শতাংশই রয়েছে দেশি–বিদেশি উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। বাকি ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে। উদ্যোক্তা–পরিচালকদের ৯০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৮০ শতাংশ রয়েছে নরওয়েভিত্তিক টেলিনর মোবাইল কমিউনিকেশনের হাতে। আর গ্রামীণ টেলিকমে হাতে রয়েছে ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার। সেই হিসাবে লভ্যাংশ বাবদ টেলিনর মোবাইল কমিউনিকেশন পাচ্ছে ২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। গ্রামীণ টেলিকম পাবে ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। আর প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন প্রায় ৪৪৬ কোটি টাকা।

কারা কত লভ্যাংশ পাবে* নরওয়েভিত্তিক টেলিনর মোবাইল কমিউনিকেশন পাবে ২,৪৮৬ কোটি টাকা। * গ্রামীণ টেলিকম পাবে ১,৫২৪ কোটি টাকা। * প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ শেয়ারধারীরা পাবেন ৪৪৬ কোটি টাকা।

গ্রামীণফোন সব মিলিয়ে গত বছরের জন্য ৩৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৬০ শতাংশ ছিল অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ। আর চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে ১৭০ শতাংশ। এই দুটি মিলিয়ে পুরো বছরে লভ্যাংশের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৩৩০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি শেয়ারের বিপরীতে একজন শেয়ারধারী ৩৩ টাকা লভ্যাংশ পাবেন।

গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ গত সোমবার চূড়ান্ত লভ্যাংশের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে লভ্যাংশের এ তথ্য শেয়ারধারীদের জানিয়েছে। পাশাপাশি গত বছরের মুনাফার তথ্যও প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। এতে দেখা যায়, গত বছর শেষে গ্রামীণফোন ৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা মুনাফা করে। সেই হিসাবে গত বছরের মুনাফার চেয়েও বেশি লভ্যাংশ বিতরণ করছে কোম্পানিটি।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর গ্রামীণফোনের মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ৩২৪ কোটি টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে গতকাল শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের ওপর কোনো ধরনের মূল্যসীমা বা সার্কিট ব্রেকার আরোপিত ছিল না। এতে এদিন লেনদেন শুরুর এক পর্যায়ে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য আগের দিনের চেয়ে ৫ টাকা বেড়ে ৩৪২ টাকায় উঠেছিল। যদিও দিন শেষে তা কিছুটা কমে যায়। গতকাল লেনদেন শেষে ঢাকার বাজারে গ্রামীণফোনের শেয়ারের বাজারমূল্য আগের দিনের চেয়ে ১ টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৩৯ টাকায়।

ঘোষিত লভ্যাংশ ও মুনাফা বৃদ্ধির খবরে গতকাল ঢাকার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটি লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে। এদিন কোম্পানিটির ১৩ কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ারের হাতবদল হয়।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর শেয়ারবাজারে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দামের বড় উত্থান হয়। মাত্র কয়েক কার্যদিবসের ব্যবধানে ১৪ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৩২ টাকা বেড়ে ৩৭৯ টাকায় ওঠে। কারণ, গ্রামীণফোনের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম। এ জন্য সরকার বদলের পরপরই গ্রামীণফোনের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। সেই আগ্রহের সুফলও এখন বছর শেষে পেয়েছেন বিনিয়োগকারী রেকর্ড লভ্যাংশ প্রাপ্তির মাধ্যমে।

শেয়ারবাজারে গ্রামীণফোনের রেকর্ড লভ্যাংশের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, অবশ্যই এটি বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক খবর। লভ্যাংশ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যে অর্থ পাবেন, এর একটি অংশ আবার বাজারে বিনিয়োগে আসবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র ম ণ ট ল কম গত বছর র র জন য র কর ড গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • সংশোধিত সাইবার অধ্যাদেশও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি
  • জার্মানির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা, জেনে নিন সব তথ্য
  • ২০২৪ সালে মেটার কাছে ৩৭৭১ অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে সরকার
  • কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
  • তিন চ্যাম্পিয়ন দলসহ যেসব তারকাকে দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ