রেকর্ড ৪,৪৫৬ কোটি টাকা লভ্যাংশ দিচ্ছে গ্রামীণফোন
Published: 5th, February 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর ২০২৪ সালের জন্য সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে দেশের টেলিকম খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি গ্রামীণফোন। কোম্পানিটি গত বছরের জন্য সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করবে।
গ্রামীণফোন জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশের মধ্যে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে এ অর্থ বিতরণ করা হয়। আর লভ্যাংশের বাকি ২ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে চলতি বছর।
গ্রামীণফোন দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০০৯ সালে। এরপর এবারই প্রথম কোম্পানিটি প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ লভ্যাংশের রেকর্ডটি ছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর কোম্পানিটি সব মিলিয়ে লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করেছিল ৩ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।
সর্বশেষ গত নভেম্বরের শেয়ারধারণ–সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের শেয়ারের ৯০ শতাংশই রয়েছে দেশি–বিদেশি উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। বাকি ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে। উদ্যোক্তা–পরিচালকদের ৯০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৮০ শতাংশ রয়েছে নরওয়েভিত্তিক টেলিনর মোবাইল কমিউনিকেশনের হাতে। আর গ্রামীণ টেলিকমে হাতে রয়েছে ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার। সেই হিসাবে লভ্যাংশ বাবদ টেলিনর মোবাইল কমিউনিকেশন পাচ্ছে ২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। গ্রামীণ টেলিকম পাবে ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। আর প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন প্রায় ৪৪৬ কোটি টাকা।
কারা কত লভ্যাংশ পাবে* নরওয়েভিত্তিক টেলিনর মোবাইল কমিউনিকেশন পাবে ২,৪৮৬ কোটি টাকা। * গ্রামীণ টেলিকম পাবে ১,৫২৪ কোটি টাকা। * প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ শেয়ারধারীরা পাবেন ৪৪৬ কোটি টাকা।গ্রামীণফোন সব মিলিয়ে গত বছরের জন্য ৩৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৬০ শতাংশ ছিল অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ। আর চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে ১৭০ শতাংশ। এই দুটি মিলিয়ে পুরো বছরে লভ্যাংশের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৩৩০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি শেয়ারের বিপরীতে একজন শেয়ারধারী ৩৩ টাকা লভ্যাংশ পাবেন।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ গত সোমবার চূড়ান্ত লভ্যাংশের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে লভ্যাংশের এ তথ্য শেয়ারধারীদের জানিয়েছে। পাশাপাশি গত বছরের মুনাফার তথ্যও প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। এতে দেখা যায়, গত বছর শেষে গ্রামীণফোন ৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা মুনাফা করে। সেই হিসাবে গত বছরের মুনাফার চেয়েও বেশি লভ্যাংশ বিতরণ করছে কোম্পানিটি।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর গ্রামীণফোনের মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ৩২৪ কোটি টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে গতকাল শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের ওপর কোনো ধরনের মূল্যসীমা বা সার্কিট ব্রেকার আরোপিত ছিল না। এতে এদিন লেনদেন শুরুর এক পর্যায়ে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য আগের দিনের চেয়ে ৫ টাকা বেড়ে ৩৪২ টাকায় উঠেছিল। যদিও দিন শেষে তা কিছুটা কমে যায়। গতকাল লেনদেন শেষে ঢাকার বাজারে গ্রামীণফোনের শেয়ারের বাজারমূল্য আগের দিনের চেয়ে ১ টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৩৯ টাকায়।
ঘোষিত লভ্যাংশ ও মুনাফা বৃদ্ধির খবরে গতকাল ঢাকার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটি লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে। এদিন কোম্পানিটির ১৩ কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ারের হাতবদল হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর শেয়ারবাজারে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দামের বড় উত্থান হয়। মাত্র কয়েক কার্যদিবসের ব্যবধানে ১৪ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৩২ টাকা বেড়ে ৩৭৯ টাকায় ওঠে। কারণ, গ্রামীণফোনের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম। এ জন্য সরকার বদলের পরপরই গ্রামীণফোনের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। সেই আগ্রহের সুফলও এখন বছর শেষে পেয়েছেন বিনিয়োগকারী রেকর্ড লভ্যাংশ প্রাপ্তির মাধ্যমে।
শেয়ারবাজারে গ্রামীণফোনের রেকর্ড লভ্যাংশের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, অবশ্যই এটি বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক খবর। লভ্যাংশ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যে অর্থ পাবেন, এর একটি অংশ আবার বাজারে বিনিয়োগে আসবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র ম ণ ট ল কম গত বছর র র জন য র কর ড গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৫৪ পয়সা। গত বছরের একই সময় যা ছিল ১ টাকা ২৫ পয়সা।
এ ছাড়া বছরের প্রথম ছয় মাসেও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা বেড়েছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৫৬ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ২ টাকা ৬২ পয়সা, অর্থাৎ বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মূলত ব্যাংকের বিনিয়োগ ও সুদ আয় বৃদ্ধির কারণে ইপিএস বেড়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক ঘোষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, জানুয়ারি-জুন সময়ে শেয়ারপ্রতি নিট নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ২৪ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৩০ টাকা ৯৯ পয়সা। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আমানত সংগ্রহ ও ব্যাংকঋণ বৃদ্ধির কারণে নগদ প্রবাহ বেড়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেছে।
অন্যদিকে ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদের মূল্য (এনএভি) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ৬০ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর যা ছিল ৩৯ টাকা ৩৮ পয়সা। নিট মুনাফা ও সরকারি সিকিউরিটিজের পুনর্মূল্যায়নের ফলে এ বৃদ্ধি হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
২০২৪ সালের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ১২ দশমিক ৫ শতাংশ স্টক। ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিতভাবে আগের বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ফলে তাদের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা (এনপিএটি) হয়েছে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে যা ছিল ৮২৮ কোটি টাকা। একক ভিত্তিতে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের ৭৩০ কোটি টাকার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ।