আইফোন-আইপ্যাড ব্যবহারকারীদের এনক্রিপশন করা তথ্য জানতে চায় যুক্তরাজ্য, কেন
Published: 8th, February 2025 GMT
ব্যবহারকারীদের আদান-প্রদান করা তথ্যের নিরাপত্তায় গোপনীয়তা সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই নিজেদের মেসেজিং অ্যাপ ‘আইমেসেজ’-এ এনক্রিপশন পদ্ধতিতে বার্তা আদান-প্রদান করে থাকে অ্যাপল। ফলে চাইলেও আইফোন, আইপ্যাডসহ অন্য কোনো অ্যাপল পণ্য থেকে পাঠানো তথ্য প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারেন না। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার অ্যাপলকে এমন একটি ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দিয়েছে, যার মাধ্যমে দেশটির নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বিশ্বব্যাপী যেকোনো অ্যাপল পণ্য ব্যবহারকারীর ক্লাউডে সংরক্ষণ করা এনক্রিপশন তথ্য পড়ার সুযোগ পাবে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘টেকনিক্যাল ক্যাপাবিলিটি নোটিস’ নামে একটি নির্দেশনা পাঠিয়ে অ্যাপলকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ারস অ্যাক্ট, ২০১৬–এর আওতায় যুক্তরাজ্য সরকার গত মাসে অ্যাপলকে যেকোনো অ্যাপল পণ্য ব্যবহারকারীর ক্লাউডে সংরক্ষণ করা এনক্রিপশন করা তথ্য পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা নীতির সঙ্গে আপস করতে না চাইলে অ্যাপল যুক্তরাজ্যে নিজেদের এনক্রিপ্টেড ক্লাউড স্টোরেজ সেবা বন্ধ করে নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঅ্যাপলের পণ্যের নামের শুরুতে ‘আই’ লেখা থাকে কেন০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, অ্যাপল চাইলে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। তবে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেও প্রতিষ্ঠানটিকে দেশটির সরকারের নির্দেশনা মানতে হবে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘প্রযুক্তিগত নির্দেশনা বা গোয়েন্দাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না।’
আরও পড়ুনআইফোনে থাকা ছবির তথ্য কি অ্যাপল জানতে পারে০৩ জানুয়ারি ২০২৫এর আগেও বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে অ্যাপল। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত এক বন্দুকধারীর আইফোন আনলক করতে অ্যাপলের সহায়তা চেয়েছিল। তবে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটি সেই অনুরোধ নাকচ করে দেয়।
আরও পড়ুনআইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব দ্বিগুণ করতে অ্যাপলের ৩ পরামর্শ১৫ জানুয়ারি ২০২৫প্রসঙ্গত, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন মূলত অনলাইনে নিরাপদে যোগাযোগের পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রেরকের কাছ থেকেই বার্তাতে বিশেষ সংকেত (কোড) যুক্ত করে প্রাপকের কাছে পাঠানো হয়। প্রাপকের কাছে পৌঁছানোর পর কোডযুক্ত বার্তাকে আবার সাধারণ বার্তায় পরিণত করে। এতে নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ বার্তায় থাকা তথ্য জানতে পারেন না। এমনকি তথ্য বিনিময় করা অ্যাপ বা যোগাযোগমাধ্যমগুলোর পক্ষেও কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয় না। ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে অ্যাপল ২০১৪ সালে পূর্ণাঙ্গ এনক্রিপশন–সুবিধা চালু করে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কেন ভারতের ওপর এমন চাপ দিচ্ছেন, কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস পার্টির এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, এখন দেশকে মোদির ‘বন্ধুত্বের মূল্য’ দিতে হচ্ছে।
কংগ্রেস ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষে মোদির প্রচার চালানোকে আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে।
কংগ্রেস বলেছে, ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর সঙ্গে দণ্ড জরিমানাও দিয়েছেন। এখন দেশ মোদির বন্ধুত্বের খেসারত দিচ্ছে। মোদি ট্রাম্পের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ভারতকে শাস্তি দিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতকে অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত ও চীন রাশিয়ার যুদ্ধ খরচ বহন করছে। সেই যুদ্ধ এরই মধ্যে তিন বছর ধরে চলছে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আবার প্রেসিডেন্ট হলে শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধ শেষ করে দেবেন।
ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ভারত সব সময় রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে এবং রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমন এক সময়ে তারা এই কাজ করেছে, যখন সবাই চাইছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। তাই আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতকে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।
কংগ্রেস–দলীয় সংসদ সদস্য মাল্লু রবি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকিতে আমরা উদ্বিগ্ন। শুনে মনে হচ্ছে, তিনি যেন ভারতকে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের উচিত উপযুক্ত জবাব দেওয়া।’
কংগ্রেসের আরেক নেতা রাজীব শুক্লা এই পদক্ষেপকে ‘একেবারে ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘সরকার যাঁকে বন্ধু মনে করত, সেই ট্রাম্প এখন আমাদের আঘাত করেছেন। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা সংসদে এ বিষয়ে কথা বলব। এত বন্ধুত্বের পরও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন করলেন কেন?’
আম আদমি পার্টির (এএপি) সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিদিন ভারতের অপমান করছেন। ট্রাম্প তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে পর্যন্ত ভারত থেকে আইফোন তৈরি না করতে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ভালোবাসেন। এটি নিয়ে ভারতের ভাবা উচিত। মোদির উচিত, এ বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো এবং তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্প প্রায়ই তাঁর বক্তব্য থেকে পেছনে সরে আসেন। তাই ভারতের সরকার কী বলে, তা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজেপি–দলীয় আরেক সংসদ সদস্য প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। আমি নিশ্চিত, ভারত সরকার এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ব্যবসা ও শিল্প খাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’
বিজেপির হেমাং যোশি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট একতরফা বিবৃতি দিতে থাকেন। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু না বলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। আগেও তিনি এক কথা বলেছিলেন, পরে আবার নিজেই তা বদলে ফেলেছিলেন।’
বিজেপির আরেক সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গি বলেন, ‘ভারত শক্তিশালী পাল্টা কৌশল তৈরি করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, মোদির নেতৃত্বে আমেরিকার এই পদক্ষেপ সফল হতে দেওয়া হবে না। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপরই পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন। তাঁর দাবি, এসব দেশ আগে থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে আসছিল।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেবে নয়াদিল্লি১৫ ঘণ্টা আগে