মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় মার্কিন আর্থিক সহায়তা বন্ধের জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। খবর রয়টার্সের।

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন ভূমি আইন ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ওয়াশিংটনের মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার গণহত্যার মামলার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে নির্বাহী আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন। 

মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা বরাদ্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরো পড়ুন:

ইউএসএআইডি কর্মীদের ছুটিতে পাঠাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা আদালতে স্থগিত

বাইডেনের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করেছেন ট্রাম্প

ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ আইনের বিরুদ্ধে এবং এটি সাধারণ মানুষের জন্য হুমকি হতে পারে বলে মনে করেন।

ট্রাম্প প্রমাণ ছাড়াই বলেছেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার নাগরিকদের জমি ছিনিয়ে নিচ্ছে এবং ‘কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণীর লোকদের’ সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।”

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ধনকুবের ইলন মাস্ক বলেছেন, শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানরা ‘বর্ণবাদী মালিকানা আইনের’ শিকার হচ্ছেন।

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, ওয়াশিংটন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষক ও তাদের পরিবারকে শরণার্থী হিসেবে পুনর্বাসনের জন্য একটি পরিকল্পনাও তৈরি করবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নতুন আইনকে ‘ভূমি অধিগ্রহণের অস্ত্র’ হিসেবে না দেখে, এটি একটি সাংবিধানিক অধিকার বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “এই আইনটি মানুষের মধ্যে ভূমির অধিকার নিয়ে ন্যায্যতা আনার জন্য কাজ করছে।” এই আইনের মাধ্যমে সরকার জমি দখল করতে পারবে, তবে যখন জমি অব্যবহৃত থাকবে এবং মালিকের সঙ্গে আলোচনার পর কোনো সমঝোতা হবে না, তখনই এটি করা হবে।

রামাফোসা আরো বলেন, তার দেশ একতাবদ্ধ থাকবে এবং তারা সংকীর্ণ স্বার্থের বিরোধিতা করবে। তিনি জানিয়ে দেন, তারা কোনোভাবেই ভয় পাবে না এবং নিজেদের অবস্থান থেকে সরবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এই আইনটি তৈরি করেছে যাতে, ঔপনিবেশিক সময় এবং জাতিগত বর্গীকরণের কারণে জমির মালিকানা নিয়ে যে বিরাট সমস্যাগুলো রয়েছে, তা সমাধান করা যায়।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা মামলার বিরুদ্ধেও ওয়াশিংটন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের সামরিক আক্রমণের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং মানবিক সংকট দেখা দেয়।

ইসরায়েল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা চালানোর পর আত্মরক্ষায় তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছিল।

হোয়াইট হাউজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার উদাহরণ হিসেবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। 

ঔপনিবেশিক ও বর্ণবাদী যুগের উত্তরাধিকারের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির মালিকানার প্রশ্নটি রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কৃষ্ণাঙ্গদের তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল এবং সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।

শ্বেতাঙ্গরা এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার তিন-চতুর্থাংশ কৃষিজমির মালিক। ২০১৭ সালের সর্বশেষ ভূমি নিরীক্ষা অনুসারে, কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানরা দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, কিন্তু তারা মাত্র ৪ শতাংশ জমির মালিক।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন র জন য সরক র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী