যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের অবৈধ তহবিল জব্দ করবে বাংলাদেশ
Published: 10th, February 2025 GMT
মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের অবৈধ তহবিল জব্দ করবে বাংলাদেশ। ঢাকাস্থ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরাত দিয়ে রবিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী আমলে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন।
দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিষয়ে তদন্তের জন্য তারা ‘অনেক দেশের’ সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
প্রায় এক মাস আগে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে তিনি এখনও সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়সহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লাউরি ম্যাগনাসের তদন্তে জানা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে উপহার পাওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপ অসাবধানতাবশত জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। তদন্তের জেরে টিউলিপ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
প্রধানমন্ত্রীর নীতিশাস্ত্র উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস জানতে পেরেছিলেন যে হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দলের সাথে যুক্ত একজন ব্যক্তির দ্বারা তাকে উপহার দেওয়া একটি ফ্ল্যাটের বিষয়ে তিনি অসাবধানতাবশত জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করেছেন, যার পরে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিটি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ছিল তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির লন্ডনের সম্পত্তি ব্যবহার করা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রশ্নের পর টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকা ৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এখন ভারতে আছেন। শিক্ষার্থীদের তীব্র বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। বিক্ষোভে ১,৫০০ জন মানুষ নিহত হন।
শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে।
দুদক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি তদন্ত শুরু করেছে, যার মধ্যে কয়েকটিতে টিউলিপ সিদ্দিকের নামও রয়েছে।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি হচ্ছে শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি থেকে ৪ বিলিয়ন পাউন্ডের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ।
রবিবার রাতে জানা গেছে যে, অর্থপাচারের তদন্ত ১২টি দেশে বিস্তৃত করা হয়েছে।
দ্য টাইমস জানিয়েছে, হাসিনা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্তের অংশ হিসেবে দুদকের তদন্তকারীরা ১০ থেকে ১২টি দেশের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছিলেন।
একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমাদের দলগুলো (বিদেশে) পাচার হওয়া তহবিল উদ্ধারের জন্য কাজ করছে। আমরা যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশ সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি।”
জানুয়ারির শেষের দিকে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কর্মকর্তারা দুদকের তদন্তকারীদের তাদের তদন্তে সহায়তা করার জন্য বেশ কয়েকদিন ঢাকায় অবস্থান করেছিলেন।
শনিবার দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন জানান, দুদক এখনো টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করছে এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে।
তিনি বলেন, “আমরা এখনো যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশসহ বিদেশি উৎস থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করছি। প্রাথমিক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, পাচারকৃত অর্থ কেবল যুক্তরাজ্যেই নয়, একাধিক গন্তব্যে স্থানান্তরিত হয়েছে।”
“আমরা যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ পাঠানোর চেষ্টা করছি। তাই, বিদেশি এবং অন্যান্য উৎস থেকে সহায়তা পাওয়ার পর, আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা কীভাবে এগিয়ে যাবে।”
বাংলাদেশের তদন্তকারীদের সহায়তা করতে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কর্মকর্তারা গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা সফর করেছেন।
দুদকের মহাপরিচালক ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তারা যুক্তরাজ্যে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেবে অথবা কর্তৃপক্ষের সাহায্য নেবে।
তিনি বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।”
“এই বিষয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তদন্ত দল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তহবিল ফেরত পাঠানোর জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।”
টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এসব অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এই বিষয়ে কেউ টিউলিপ সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করেনি এবং তিনি দাবিগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তদন ত র র তদন ত য গ কর কর ছ ন র জন য র র জন সহ য ত তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।