সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দায় সরকার এড়াতে পারে না, অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল
Published: 10th, February 2025 GMT
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দায় সরকার এড়াতে পারে না।
আজ সোমবার রাত পৌনে আটটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে সার্বিক বিষয়ে দলের উদ্বেগের বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হবে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এটা বিএনপির দায়িত্ব। বিএনপি সেই দায়িত্ব পালন করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার দায় সরকার এড়াতে পারে না। কারণ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বাহিনীর সামনেই একের পর এক ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট বিপন্ন হয়েছে। ফ্যাসিবাদীরা এসব বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।
‘আমরা যেটা বারবার বলে এসেছি, এ সরকার অন্তর্বর্তী কালীন সরকার। সুতরাং দ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা তাঁদের আবারও তাগাদা দিয়েছি’—উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি জানান, তাঁরা ন্যূনতম সংস্কারের ক্ষেত্রে আলোচনার পর দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন।
প্রশাসনে যাঁরা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন, যারা দেশের সম্পদ লুট করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তাঁরা বিগত ১৫-১৬ বছরে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও তুলেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। এ সরকারের অন্যতম বড় ব্যর্থতা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। তারা কাজ করছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ তিনি বলেন, বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি এসেছে। বিএনপি বলেছে, বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্টে’ যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য সরকার কাজ করছে বলে আমাদের জানিয়েছেন [প্রধান উপদেষ্টা]। আমরা আশা করব জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে এবং একটি রোডম্যাপ (রূপকল্প) দেওয়া হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কোনোভাবেই একমত হব না। আগে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না। এটা আগেও পরিষ্কার করে বলেছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।