‘পুঁজিবাজার আবেগ নয়, মৌলভিত্তি দেখে বিনিয়োগ করতে হয়’
Published: 13th, February 2025 GMT
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেছেন, “পুঁজিবাজার আবেগের স্থান নয়। এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ করে কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল (মৌলভিত্তি) দেখে বিনিয়োগ করতে হয়। ঝুঁকি এড়িয়ে পুঁজিবাজার থেকে ভালো মুনাফা করার জন্য বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির সার্বিক আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবগত হওয়া জরুরি। আর এ বিষয়ে জানার মাধ্যম হলো কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ।”
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর ট্রেনিং একাডেমি আয়োজিত চার দিনব্যাপী "ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস, ইনভেস্টমেন্ট টেকনিক অ্যান্ড টুলস’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী দিনে সার্টিফিকেট বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ডিএসইর মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (ইন-চার্জ) ছামিউল ইসলাম এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক ও ট্রেনিং একাডেমি’র প্রধান আল আমিন রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
তিন ব্রোকারেজ হাউজকে ফিক্স সার্টিফিকেশন দিল ডিএসই
যুক্তরাজ্যের বাজারে রেনাটার ওষুধ
মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, “এই মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্য ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসই গুরুত্বপূর্ণ। ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস এর পাশাপাশি বিনিয়োগ কৌশল ও সরঞ্জামও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো একে অপরের সাথে পারস্পরিকভাবে সম্পর্কিত। এগুলো একটি সিগন্যাল দেয় বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। ডিএসই পক্ষ থেকে আমরা সব সময়ই বলে থাকি ফান্ডামেন্টাল জেনে বুঝে বিনিয়োগ করুন। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীগণ লাভবান হতে পারে। কোম্পানির ইপিএস, এনএভি, পিই রেশিও, উদ্যোক্তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি যাচাই করে বিনিয়োগ করুন। কোম্পানির সার্বিক বিষয়াদির পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণই বিনিয়োগের মূলমন্ত্র হতে হবে। আমরা মনে করি, একটি সচেতন বিনিয়োগকারী বাজারের উন্নয়নের পূর্বশর্ত।”
তিনি বলেন, “দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নতি করতে হলে শক্তিশালী পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই। আর শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষিত-সচেতন বিনিয়োগকারীর গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষিত সচেতন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, বাজার তত বেশি স্থিতিশীল হবে। কারণ শিক্ষিত বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেখে শুনে ভালো মৌলভিত্তি (ফান্ডামেন্টাল) শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। অনেক বিনিয়োগকারীরা না বুঝেই হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। যা বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজারের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
তিনি আরো বলেন, “কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হলে নিজের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।”
চার দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মাইক্রো এনালাইসিস, মাইক্রো-ইকোনোমিক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এনালাইসিস, কোম্পানি এনালাইসিস, ভ্যালুয়েশন ফান্ডামেন্টালস-মেথড বিষয়ে আলোচনা করেন যথাক্রমে এনবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুবায়ের আল-মামুন, শান্তা সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং এস এম গালিবুর রহমান, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর হেড অব ইক্যুইটি রিসার্চ তনয় কুমার রয় এবং সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড এর হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এ.
ঢাকা/এনটি/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ম ট ড এর ব ন য় গ কর
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি
পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পর্যবেক্ষণে অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তাই বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তদন্ত করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে করে কমিশন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
‘অরেঞ্জ বন্ড অন্তর্ভুক্তিমূলক পুঁজিবাজার তৈরির সুযোগ দিচ্ছে’
যমুনা অয়েলের ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ৩৭.৭৮ শতাংশ
তদন্তের বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) অবহিত করা হয়েছে।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ওরিসুল হাসান রিফাত, ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সিডিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারের হাল ধরেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ওই দিন অর্থাৎ ১৯ আগস্ট ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৭৭৫.৪৯ পয়েন্টে। তিনি কাজে যোগ দেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসেনি। বরং, ক্ষেভে বিনিয়োগকারীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
সর্বশেষ সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৫২.৭৯ পয়েন্টে। ফলে প্রায় ৮ মাসে ডিএসইএক্স সূচক ৮২২.৭০ পয়েন্ট কমেছে।
এমন পরিস্থিতি বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখবে। এ কাজে কোনো কারসাজি চক্র জাড়িত আছে কি-না এবং বাজারে চক্রান্তকারী গুজব রটিয়েছে কিনা-তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের নিম্নমুখী প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করেছে বিএসইসি, যা অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। তাই কমিশন বিষয়টি পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর XVII) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিও অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সনের ১৫ নম্বর আইন) এর ১৭(ক) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি, ডিএসই এবং সিডিবিএলের ৪জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
ডিএসইএক্স সূচকের সাম্প্রতিক পতনের কারণ চিহ্নিত করা। বাজারে গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা অন্য কোনো আনুষঙ্গিক বিষয় থাকলে তা চিহ্নিত করা। গঠিত তদন্ত কমিটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ প্রদান করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি কি কি কারণে বাজার পতনমুখী প্রবণতায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য কি কি করা প্রয়োজন সে বিষয়েও সুপারিশ প্রদান করবে তদন্ত কমিটি।”
ঢাকা/এনটি/এসবি