হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় সংসারের অভাব-অনটন নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বিষ পান করেন আবদুর রউফ (৩২) নামের এক যুবক। মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর দুই সন্তানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার সকালে ওই যুবকের মৃত্যু হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চুনারুঘাট উপজেলার আতিকপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুর রউফের মৃত্যু হয়। তার আগে তাঁর দুই মেয়ে আয়েশা আখতার (৩) ও খাদিজা আখতারকে (৫) মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় বলে জানান চিকিৎসকেরা।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুনারুঘাটের আতিকপুর গ্রামের আবদুর রউফ চার সন্তানের জনক। পেশায় মুদিদোকানি রউফ সম্প্রতি গ্রামের একজনের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। এ ছাড়া সংসারে অভাব-অনটন নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এর জেরে দুই দিন আগে এক বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান তাঁর স্ত্রী।

স্ত্রীকে বাড়িতে ফেরানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়ে গতকাল রাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয়। পরে দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঘরে থাকা ইঁদুর মারার বিষ দুই মেয়েকে পান করিয়ে নিজেও পান করেন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে চুনারুঘাট হাসপাতাল ও পরে ভোররাতে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক শিশু দুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রউফ।

হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুই শিশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা আবদুর রউফ সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতালে মারা যান। তাঁদের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

রউফের ছোট ভাই সুজন মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই ঋণগ্রস্ত ছিলেন; পাশাপাশি সংসারে অভাব-অনটন নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এ কারণে সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ভাই।’

আতিকপুর গ্রামের বাসিন্দা ও রানীগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইযুব আলী বলেন, গ্রামবাসীর মাধ্যমে জেনেছেন, রউফ সাত লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েন। ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় গ্রামে তাঁর মুদিদোকানটিও বন্ধ হয়ে যায়। অভাব–অনটন থেকে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেন।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

নূর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম তো ঋণের জ্বালা, পাশাপাশি পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে স্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর ভালো যাচ্ছিল না। শুনছি, আবদুর রউফ বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। যে কারণে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বিষপানে “আত্মহত্যা” করেন তিনি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ র রউফ ন অবস থ য় প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

ক্যারিবীয় সাগরে একটি জাহাজে আবারো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এতে জাহাজটিতে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। 

রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

আরো পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

কানাডার সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা ট্রাম্পের

শনিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই জাহাজটিকে অবৈধ মাদক চোরাচালানে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এই হামলার সময় জাহাজটিতে ‘তিনজন পুরুষ মাদক-সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনজনই নিহত হয়েছেন।” 

শনিবারের এই হামলার আগে গত বুধবার ক্যারিবীয় সাগরে আরো একটি জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত হন। গত সোমবার মার্কিন হামলায় নিহত হন ১৪ জন।

মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকসহ ৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি নৌযান এবং একটি সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে।

তবে নৌযানগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেয়নি।  ফলে হামলার বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং মেক্সিকো উপসাগরে মোতায়েন করেছে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ।

ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালানকারী নৌযানের ওপর তাদের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৌযান সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকা ধ্বংস করা হচ্ছে। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ