শরীয়তপুরে ৩১টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার
Published: 16th, February 2025 GMT
শরীয়তপুরের নড়িয়ার মর্ডান ফ্যান্টাসি কিংডম এন্ড মিনি চিড়িয়াখানায় অবৈধভাবে রাখা ১০ প্রজাতির ৩১টি বিভিন্ন বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও অবমুক্ত করা হয়েছে। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার কলুকাঠি এলাকায় দিনব্যাপী বনবিভাগ ও বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট যৌথ অভিযান চালিয়ে বন্যপ্রাণীগুলো উদ্ধার ও অবমুক্ত করে।
বনবিভাগ ও বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট জানায়, উপজেলার কলুকাঠি এলাকায় মর্ডান ফ্যান্টাসি কিংডম এন্ড মিনি চিড়িয়াখানায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী খাচায় প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছিল। এরমধ্যে ভাল্লুক, মিঠা পানির কুমির, বার্মিজ অজগর, সজারু, মেছো বিড়াল, কালিম পাখি, ঘুঘু পাখি, বালি হাঁস রয়েছে। যা বন্যপ্রাণী আইন ২০১২ অনুযায়ী অনুমতি ব্যতীত সংগ্রহ, দখলে রাখা, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টি অবগত হলে অভিযান চালায় বনবিভাগ ও বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন যৌথ ইউনিট। অভিযানে ১০ প্রজাতির বিভিন্ন বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়। পরে উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর কিছু সাফারি পার্ক গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কিছু পাখি অবমুক্ত করা হয়।
মর্ডান ফ্যান্টাসি কিংডম এন্ড মিনি চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণীগুলো এভাবে রাখা যাবে না বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। যদি জানতাম তাহলে আমরা ছেড়ে দিতাম। আজ উনারা এসে আমাদের অবগত করার পর আমরা এসব প্রাণী তাদের হাতে তুলে দিয়েছি।’’
আরো পড়ুন:
‘কোরবানির ঈদে পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই’
বাগেরহাটে লোকালয় থেকে বন্য শুকর উদ্ধার
এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস জানান, তাদের কাছে তথ্য ছিল এখানে অবৈধভাবে ১০ প্রজাতির ৩১টি বিভিন্ন বন্যপ্রাণী খাঁচায় বন্দিরত অবস্থায় প্রদর্শন করা হচ্ছিল। সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী সেই সকল বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। কিছু প্রাণী গাজীপুর সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়া হবে এবং কিছু অবমুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা/আকাশ/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’
৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।
লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।
আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’
এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’
লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’
আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।