ঢাকা থেকে লর্ডস: চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আটকাহন
Published: 19th, February 2025 GMT
১৯৯৮ওয়ালেসের হাসি ক্যালিসের
বাংলাদেশের আক্ষেপ, ফিলো ওয়ালেসের শুরুর আনন্দ ম্লান করে শেষের হাসি জ্যাক ক্যালিসের আর দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপা জয়—১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপের সারকথা এটাই। টুর্নামেন্টের আয়োজন করেও আট দলের নকআউট টুর্নামেন্টটিতে শুধুই দর্শক হয়ে থাকাটাই বাংলাদেশের আক্ষেপ। টুর্নামেন্টজুড়ে বিস্ফোরক ব্যাটিং করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা জেতাতে পারেননি ওয়ালেস। শুধু একটি অস্ত্র চালিয়ে কি আর যুদ্ধ জেতা যায়! ক্যালিস যে ছিলেন দ্বৈত অস্ত্রে সজ্জিত। ব্যাটিং-বোলিংয়ে সব্যসাচী পারফরম্যান্স করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র শিরোপা জিতিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন ক্যালিস।
২০০০কেয়ার্নসে কিউইদের প্রথমবাংলাদেশের তুলনায় কেনিয়ার ভাগ্য অনেকটাই ভালো। আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরেই যে টুর্নামেন্টের ফরম্যাট বদলায়। সেবার টেস্ট খেলুড়ে ১০টি দলের সঙ্গে স্বাগতিক কেনিয়াসহ খেলেছে মোট ১১টি দল। তবে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাংলাদেশ ও কেনিয়ার সঙ্গে ছিটকে যায় আগেরবারের রানার্সআপ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দুই সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটিতে ৩৪৮ রান নিয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেন ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও ভারতেরই একজন, পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ (৮)। ফাইনালেও সেঞ্চুরি পেয়েছেন সৌরভ, প্রসাদ নিয়েছেন ৩ উইকেট। কিন্তু সেদিনটি ভারতের ছিলই না। সৌরভ ও প্রসাদের কীর্তিকে ম্লান করে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে (১০২*) নিউজিল্যান্ডকে প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা জেতান ক্রিস কেয়ার্নস।
২০০২সাম্যবাদের টুর্নামেন্টআগের দুবারের চেয়ে এবার যেন সব দিক থেকেই আলাদা হতে চাইল আইসিসির দ্বিতীয় সেরা টুর্নামেন্টটি। আইসিসি সেবার টুর্নামেন্টের ফরম্যাট বদলে ‘নকআউট’ নামটা তুলে দিল। দল বাড়িয়ে করা হলো ১২টি। ১২ দলকে চার গ্রুপে ভাগ করে গ্রুপ পর্ব। এরপর চার গ্রুপের সেরা চার দলকে নিয়ে সেমিফাইনাল। আইসিসি ফরম্যাট বদলেছে আর ক্রিকেট-দেবতা বদলেছে তার মতিগতি! কীভাবে? এবার আর কাউকে হতাশ না করে যেন লেখা হলো সাম্যবাদের পাণ্ডুলিপি! টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ভারতের বীরেন্দর শেবাগ, সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন। ফাইনালও খেলল এই দুজনের দল, যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা ভাগাভাগিও করল দুই দল। বৃষ্টির কারণে দুবার আয়োজন করা হয়েছে ফাইনাল, কিন্তু খেলা শেষ করা যায়নি। বৃষ্টিবিঘ্নিত দুই দিনই শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করেছে, ভারত তাদের ব্যাটিং শেষ করতে পারেনি।
২০০৪দায় শুধল ক্রিকেট-দেবতামার্কাস ট্রেসকোথিক ও অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, তথা ইংল্যান্ডকে হতাশ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যেন দায় শুধলেন ক্রিকেট-দেবতা। ১৯৯৮ সালে টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেন এবারের ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠে দারুণ ক্রিকেট উপহার দিয়েছে তারা। ট্রেসকোথিকের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক আর ফ্লিনটফের সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়াও সেটাই বলে। ওভালের ফাইনালেও তো বলতে গেলে জিততে জিততে হেরে গেছে ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২১৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল মাইকেল ভনের দল। তাড়া করতে নেমে ১৪৭ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে ৭১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা জেতান কোর্টনি ব্রাউন ও ইয়ান ব্র্যাডশ।
২০০৬‘গেইলদের ট্রফি’ অস্ট্রেলিয়ারমুম্বাইয়ের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে নামার আগে ৩ সেঞ্চুরিতে ক্রিস গেইলের রান ছিল ৪৩৭, জেরোম টেলরের উইকেট ১২টি। গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ফাইনালে গেইল-টেলরদের কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি। ১০ দলের গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে ফাইনালে উঠে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজও শিরোপা ধরে রাখতে পারল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারিয়ে গ্রুপ পর্বের হারের প্রতিশোধ নিয়ে শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে সেমিফাইনালে ১৯৭৫ বিশ্বকাপের পর একটি প্রথমের ঘটনা ঘটেছে ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। ১৯৭৫ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি এশিয়ার কোনো দল।
২০০৯অস্ট্রেলিয়ার টানা দুইআবার আট দলের টুর্নামেন্ট। তবে এবার আর নকআউট নয়। দুই গ্রুপে চারটি করে দল নিয়ে প্রথমে হয়েছে গ্রুপ পর্ব। প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি দল উঠেছে সেমিফাইনালে। টুর্নামেন্টটি ২০০৮ সালে হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানে। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় বেশির ভাগ দল সেখানে যেতে চায়নি বলে পরের বছর টুর্নামেন্টটি আয়োজন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। ঘরের মাঠে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া, আরেক সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে তাদের মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ড। একপেশে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।
২০১৩ধাওয়ান-জাদেজায় আবার ভারতএ যেন ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়নস টুর্নামেন্টেরই জেরক্স কপি। আবার ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, আবার ফাইনালে ইংল্যান্ড। যথারীতি ফাইনালে আরেকটি হারের হতাশা ইংলিশদের! সেবার ইংলিশদের হতাশা উপহার দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এবার ইংল্যান্ডকে হতাশ করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছে ভারত। ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালটা রূপ নিয়েছিল যেন টি-টোয়েন্টিতে। বৃষ্টির কারণে এজবাস্টনের ফাইনালটি নেমে এসেছিল ২০ ওভারের ম্যাচে। টি-টোয়েন্টিতে রূপ নেওয়া সেই ফাইনালে ১৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। সেই হিসাব মেলাতে পারেননি উইকেটে থাকা স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস ট্রেডওয়েল। ৫ রানে হেরে যায় ইংল্যান্ড। আট দলের রাউন্ড রবিন টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্ব শেষে সেমিফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
২০১৭টুর্নামেন্টটা বাংলাদেশেরওভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ মানেই সাজ সাজ রব, চারদিকে উত্তেজনা, ক্রিকেট-বিশ্বের দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া। কিন্তু ২০১৩ সালের জানুয়ারির পর সেই রোমাঞ্চে ক্রিকেটপ্রেমীরা খুব কমই ভাসতে পেরেছেন। দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতার প্রভাবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান যে সেই থেকে আর কোনো দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেট সিরিজে অংশ নেয়নি। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট-দ্বৈরথের যেটুকু রোমাঞ্চ, তা তৈরি হয় শুধু কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট এলেই। এ কারণেই আইসিসি তাদের টুর্নামেন্টগুলোয় দুই দলকে একই গ্রুপে রেখে দেয়। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও এর ব্যতিক্রম ছিল না। গ্রুপ পর্বে অবশ্য ভারতের কাছে পাকিস্তান পাত্তাই পায়নি, বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে হেরেছে ১২৪ রানে। ফাইনালে দুই দল যখন আবার মুখোমুখি, তখনো ভারত ছিল হট ফেবারিট। কিন্তু পাশার দান উল্টে দিয়ে ফাইনালে জিতে যায় পাকিস্তান। বুমরার নো বলের কল্যাণে আউট হয়েও বেঁচে যাওয়া ফখর জামানের ১১৪ রানের ইনিংসের পর বল হাতে আমিরের ১৬ রানে ৩ উইকেট পাকিস্তানকে এনে দেয় ১৮০ রানের বিশাল জয়। সেবারের টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশের জন্যও স্মরণীয়। সেবারই প্রথম ও শেষবারের মতো আইসিসির প্রথম সারির কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। তবে সেমিফাইনালে ৭ উইকেটে ২৬৪ রান করেও ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ, সেটিও ৫৯ বল বাকি থাকতে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ য ম প য়নস ট র গ র প পর ব স ম ফ ইন ল র ফ ইন ল আইস স উইক ট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি মাসের ১৫ দিনে করোনায় ৪ জনের মৃত্যু
দেশে আজ রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তি একজন পুরুষ। তাঁর বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ঢাকায় সরকারি একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে দেশে ৫ জুন একজন ও ১৩ জুন ২ জনের মৃত্যু হয়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫০৩।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৯১ জনের কাছ থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৬টি নমুনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৩।
একই সময়ে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন চারজন। তাঁদের নিয়ে এ পর্যন্ত করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪১০-এ দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুনসরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি ১০ ঘণ্টা আগে২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেয় সরকার। করোনায় প্রথম মৃত্যুর কথা জানা যায় ওই বছরের ১৮ মার্চ। এর তিন বছর পর ২০২৩ সালের মে মাসে করোনার কারণে জারি করা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনার অমিক্রন ধরনের একটি উপধরন জেএন.১-এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। দ্রুত ছড়ানোর কারণে জেএন.১-কে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর একই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুই দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষকেরা করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্তের কথা বলছেন। এর নাম এক্সএফজি। এর পাশাপাশি এক্সএফসি ধরনটিও পাওয়া গেছে। দুটিই করোনার শক্তিশালী ধরন অমিক্রনের জেএন-১ ভেরিয়েন্টের উপধরন।
আরও পড়ুনকরোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ দফা নির্দেশনা১১ জুন ২০২৫