ঢাকা থেকে লর্ডস: চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আটকাহন
Published: 19th, February 2025 GMT
১৯৯৮ওয়ালেসের হাসি ক্যালিসের
বাংলাদেশের আক্ষেপ, ফিলো ওয়ালেসের শুরুর আনন্দ ম্লান করে শেষের হাসি জ্যাক ক্যালিসের আর দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপা জয়—১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপের সারকথা এটাই। টুর্নামেন্টের আয়োজন করেও আট দলের নকআউট টুর্নামেন্টটিতে শুধুই দর্শক হয়ে থাকাটাই বাংলাদেশের আক্ষেপ। টুর্নামেন্টজুড়ে বিস্ফোরক ব্যাটিং করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা জেতাতে পারেননি ওয়ালেস। শুধু একটি অস্ত্র চালিয়ে কি আর যুদ্ধ জেতা যায়! ক্যালিস যে ছিলেন দ্বৈত অস্ত্রে সজ্জিত। ব্যাটিং-বোলিংয়ে সব্যসাচী পারফরম্যান্স করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র শিরোপা জিতিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন ক্যালিস।
২০০০কেয়ার্নসে কিউইদের প্রথমবাংলাদেশের তুলনায় কেনিয়ার ভাগ্য অনেকটাই ভালো। আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরেই যে টুর্নামেন্টের ফরম্যাট বদলায়। সেবার টেস্ট খেলুড়ে ১০টি দলের সঙ্গে স্বাগতিক কেনিয়াসহ খেলেছে মোট ১১টি দল। তবে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাংলাদেশ ও কেনিয়ার সঙ্গে ছিটকে যায় আগেরবারের রানার্সআপ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দুই সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটিতে ৩৪৮ রান নিয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেন ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও ভারতেরই একজন, পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ (৮)। ফাইনালেও সেঞ্চুরি পেয়েছেন সৌরভ, প্রসাদ নিয়েছেন ৩ উইকেট। কিন্তু সেদিনটি ভারতের ছিলই না। সৌরভ ও প্রসাদের কীর্তিকে ম্লান করে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে (১০২*) নিউজিল্যান্ডকে প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা জেতান ক্রিস কেয়ার্নস।
২০০২সাম্যবাদের টুর্নামেন্টআগের দুবারের চেয়ে এবার যেন সব দিক থেকেই আলাদা হতে চাইল আইসিসির দ্বিতীয় সেরা টুর্নামেন্টটি। আইসিসি সেবার টুর্নামেন্টের ফরম্যাট বদলে ‘নকআউট’ নামটা তুলে দিল। দল বাড়িয়ে করা হলো ১২টি। ১২ দলকে চার গ্রুপে ভাগ করে গ্রুপ পর্ব। এরপর চার গ্রুপের সেরা চার দলকে নিয়ে সেমিফাইনাল। আইসিসি ফরম্যাট বদলেছে আর ক্রিকেট-দেবতা বদলেছে তার মতিগতি! কীভাবে? এবার আর কাউকে হতাশ না করে যেন লেখা হলো সাম্যবাদের পাণ্ডুলিপি! টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ভারতের বীরেন্দর শেবাগ, সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন। ফাইনালও খেলল এই দুজনের দল, যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা ভাগাভাগিও করল দুই দল। বৃষ্টির কারণে দুবার আয়োজন করা হয়েছে ফাইনাল, কিন্তু খেলা শেষ করা যায়নি। বৃষ্টিবিঘ্নিত দুই দিনই শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করেছে, ভারত তাদের ব্যাটিং শেষ করতে পারেনি।
২০০৪দায় শুধল ক্রিকেট-দেবতামার্কাস ট্রেসকোথিক ও অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, তথা ইংল্যান্ডকে হতাশ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যেন দায় শুধলেন ক্রিকেট-দেবতা। ১৯৯৮ সালে টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেন এবারের ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠে দারুণ ক্রিকেট উপহার দিয়েছে তারা। ট্রেসকোথিকের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক আর ফ্লিনটফের সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়াও সেটাই বলে। ওভালের ফাইনালেও তো বলতে গেলে জিততে জিততে হেরে গেছে ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২১৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল মাইকেল ভনের দল। তাড়া করতে নেমে ১৪৭ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে ৭১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা জেতান কোর্টনি ব্রাউন ও ইয়ান ব্র্যাডশ।
২০০৬‘গেইলদের ট্রফি’ অস্ট্রেলিয়ারমুম্বাইয়ের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে নামার আগে ৩ সেঞ্চুরিতে ক্রিস গেইলের রান ছিল ৪৩৭, জেরোম টেলরের উইকেট ১২টি। গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ফাইনালে গেইল-টেলরদের কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি। ১০ দলের গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে ফাইনালে উঠে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজও শিরোপা ধরে রাখতে পারল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারিয়ে গ্রুপ পর্বের হারের প্রতিশোধ নিয়ে শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে সেমিফাইনালে ১৯৭৫ বিশ্বকাপের পর একটি প্রথমের ঘটনা ঘটেছে ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। ১৯৭৫ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি এশিয়ার কোনো দল।
২০০৯অস্ট্রেলিয়ার টানা দুইআবার আট দলের টুর্নামেন্ট। তবে এবার আর নকআউট নয়। দুই গ্রুপে চারটি করে দল নিয়ে প্রথমে হয়েছে গ্রুপ পর্ব। প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি দল উঠেছে সেমিফাইনালে। টুর্নামেন্টটি ২০০৮ সালে হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানে। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় বেশির ভাগ দল সেখানে যেতে চায়নি বলে পরের বছর টুর্নামেন্টটি আয়োজন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। ঘরের মাঠে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া, আরেক সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে তাদের মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ড। একপেশে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।
২০১৩ধাওয়ান-জাদেজায় আবার ভারতএ যেন ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়নস টুর্নামেন্টেরই জেরক্স কপি। আবার ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, আবার ফাইনালে ইংল্যান্ড। যথারীতি ফাইনালে আরেকটি হারের হতাশা ইংলিশদের! সেবার ইংলিশদের হতাশা উপহার দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এবার ইংল্যান্ডকে হতাশ করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছে ভারত। ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালটা রূপ নিয়েছিল যেন টি-টোয়েন্টিতে। বৃষ্টির কারণে এজবাস্টনের ফাইনালটি নেমে এসেছিল ২০ ওভারের ম্যাচে। টি-টোয়েন্টিতে রূপ নেওয়া সেই ফাইনালে ১৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। সেই হিসাব মেলাতে পারেননি উইকেটে থাকা স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস ট্রেডওয়েল। ৫ রানে হেরে যায় ইংল্যান্ড। আট দলের রাউন্ড রবিন টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্ব শেষে সেমিফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
২০১৭টুর্নামেন্টটা বাংলাদেশেরওভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ মানেই সাজ সাজ রব, চারদিকে উত্তেজনা, ক্রিকেট-বিশ্বের দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া। কিন্তু ২০১৩ সালের জানুয়ারির পর সেই রোমাঞ্চে ক্রিকেটপ্রেমীরা খুব কমই ভাসতে পেরেছেন। দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতার প্রভাবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান যে সেই থেকে আর কোনো দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেট সিরিজে অংশ নেয়নি। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট-দ্বৈরথের যেটুকু রোমাঞ্চ, তা তৈরি হয় শুধু কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট এলেই। এ কারণেই আইসিসি তাদের টুর্নামেন্টগুলোয় দুই দলকে একই গ্রুপে রেখে দেয়। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও এর ব্যতিক্রম ছিল না। গ্রুপ পর্বে অবশ্য ভারতের কাছে পাকিস্তান পাত্তাই পায়নি, বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে হেরেছে ১২৪ রানে। ফাইনালে দুই দল যখন আবার মুখোমুখি, তখনো ভারত ছিল হট ফেবারিট। কিন্তু পাশার দান উল্টে দিয়ে ফাইনালে জিতে যায় পাকিস্তান। বুমরার নো বলের কল্যাণে আউট হয়েও বেঁচে যাওয়া ফখর জামানের ১১৪ রানের ইনিংসের পর বল হাতে আমিরের ১৬ রানে ৩ উইকেট পাকিস্তানকে এনে দেয় ১৮০ রানের বিশাল জয়। সেবারের টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশের জন্যও স্মরণীয়। সেবারই প্রথম ও শেষবারের মতো আইসিসির প্রথম সারির কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। তবে সেমিফাইনালে ৭ উইকেটে ২৬৪ রান করেও ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ, সেটিও ৫৯ বল বাকি থাকতে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ য ম প য়নস ট র গ র প পর ব স ম ফ ইন ল র ফ ইন ল আইস স উইক ট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এবার এক নতুন আলোচনায় এসেছে গণভোট আয়োজনের সম্ভাবনা। রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী প্রস্তাব ও অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, সরকার যদি চায় তাহলে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একযোগে বা আলাদা দিনেও গণভোট আয়োজন সম্ভব। এজন্যই কমিশন সরকারের ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আগাম প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ, আইন, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, স্থানীয় সরকার, তথ্য, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহনসহ ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব উপস্থিত ছিলেন।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল- একদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা, অন্যদিকে গণভোট আয়োজনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনায় আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ।
গণভোটের প্রস্তুতি নির্দেশনা
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “গণভোট নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে এটি হবে কি না, কবে হবে তা নির্ধারণ করবে সরকার। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যদি গণভোট আয়োজনের নির্দেশ আসে, তাহলে যেন তা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায় সে জন্য প্রস্তুতি রাখা।”
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সভায় বলেন, “সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে। সেক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা আগে থেকেই বিদ্যালয়গুলো প্রস্তুত রাখে।”
সভায় আরো জানানো হয়, দুটি ভোট একসঙ্গে হলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ইসি ইতোমধ্যে খসড়া ভোটকেন্দ্র তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকা অনুযায়ী কেন্দ্রগুলোর রাস্তা, বিদ্যুৎ সংযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়।
ভোটকেন্দ্র, অবকাঠামো ও লজিস্টিক প্রস্তুতি
সভায় আলোচনা হয়, দেশের ৪২ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তুতি নিতে হবে। যেসব স্থানে ভবন সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, স্থানীয় সরকার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
ইসির নির্দেশে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তা যেন ভোটের আগে মেরামত ও প্রবেশযোগ্য হয়। দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকায় হেলিপ্যাড সংস্কারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে জরুরি পরিবহন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলে সমস্যা না হয়।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা সচল রাখা, ভোটের দিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের লজিস্টিক সহায়তা ও যানবাহন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেডিকেল টিম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা জানান, নির্বাচনের দিন প্রতিটি উপজেলায় একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। প্রতিটি টিমে একজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকবে। দুর্গম এলাকায় ইউনিয়নভিত্তিক সহায়ক টিমও থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও র্যাবকে যৌথভাবে প্রস্তুত রাখা হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন, যিনি আচরণবিধি প্রতিপালন তদারকি করবেন।
প্রযুক্তি ও নজরদারি ব্যবস্থা
ইসি জানিয়েছে, ভোটগ্রহণ ও ফলাফল প্রেরণে এবার সর্বাধুনিক ডিজিটাল ভোট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিভিএমএস) ব্যবহার করা হবে। এতে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ফলাফল জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে পাঠানো সম্ভব হবে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমরা চাই ফলাফল যেন দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ঘোষণা করা যায়। সেই জন্যই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে।”
তিনি আরো জানান, ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তি রোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হচ্ছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভ্রান্ত তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে।
গণভোটের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের সংবিধানে ১৪২(১)-এর উপধারায় বলা আছে যদি সংবিধান সংশোধন বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনমত জানতে হয়, তবে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।
সরকার ও রাজনৈতিক মহলে সম্প্রতি সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদে সংস্কার এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই সূত্রেই গণভোটের বিষয়টি সামনে এসেছে।
তবে রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি সংবেদনশীল। কিছু দল মনে করছে, একই সঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করলে প্রশাসনিক চাপ বেড়ে যাবে; আবার কেউ কেউ বলছে, এতে ব্যয় কমবে ও জনসম্পৃক্ততা বাড়বে।
একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, “ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে এমনভাবে, যেন সরকার যেদিন গণভোটের সিদ্ধান্ত দেবে, সেদিনই কাজ শুরু করা যায়।”
অর্থনৈতিক প্রস্তুতি ও বাজেট বরাদ্দ
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচন একা আয়োজনের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে তা প্রায় ৮,২০০ কোটি টাকা। কিন্তু গণভোট যুক্ত হলে ব্যয় আরো ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অর্থ বিভাগের সচিব বৈঠকে জানান, বাজেট সংস্থান বিষয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে এবং ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় খরচ না করে শুধু অপরিহার্য খাতে অর্থ ব্যয় করতে বলা হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা
ইসি সচিব বলেন, “আমরা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল তৈরি করছি। শিক্ষক, সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ও অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারীরা এতে থাকবেন।”
ইসি চায়, ভোটগ্রহণে যেন নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিরপেক্ষ শিক্ষকদের তালিকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তথ্য মন্ত্রণালয় ও প্রচার কৌশল
ভোটার সচেতনতা বাড়াতে ইসি সংসদ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) এয়ারটাইম ব্যবহার করবে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভোটাধিকার ও আচরণবিধি বিষয়ে সচেতনতামূলক ভিডিও প্রচার করা হবে। তথ্য মন্ত্রণালয় ও ইসি যৌথভাবে এই প্রচার অভিযান পরিচালনা করবে।
বিদেশি পর্যবেক্ষক ও প্রবাসী ভোটার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা ও অনুমতি প্রক্রিয়া দ্রুত করা হবে। একই সঙ্গে ইসি প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের জন্য ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম চালু করছে। আগামী ১৬ নভেম্বর এর ট্রায়াল অ্যাপ উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন সচিব আখতার আহমেদ।
সরকারি সফরে সচিবদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিল ইসি
বৈঠকে সিইসি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা সরকারি সফরে দেশের যেখানেই যান না কেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন। এটি আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।”
তিনি আরো বলেন, “নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিতে সরকারের পূর্ণ সহায়তা চায়। কারণ নির্বাচন কমিশন একা এই বিশাল আয়োজন করতে পারে না, সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় জরুরি।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও ঢাকা-১৪ আসনের ভোটার তৌহিদুর রহমান বলেন, “সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের এই বৈঠক শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ইঙ্গিত দেয় যে সরকার গণভোটের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে এবং ইসি চাইছে আগেভাগে প্রস্তুত থাকতে যাতে কোনো অঘটন বা বিলম্ব না ঘটে।”
তিনি বলেন, “এখন অপেক্ষা সরকারের সিদ্ধান্তের। সংসদ নির্বাচন ও গণভোট কি একসঙ্গে হবে, নাকি আলাদা দিনে। যেভাবেই হোক, নির্বাচন কমিশনের এই আগাম প্রস্তুতি বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে আরো সংগঠিত ও প্রযুক্তিনির্ভর হবে।”
ঢাকা/এস