আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি: সেলিমা রহমান
Published: 20th, February 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমরা সবাই মিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, দেশে সুন্দর একটি পরিবেশ আসবে, তাঁরা সুন্দর একটি নির্বাচন দেবেন। কিন্তু পতিত সরকারের দোসররা আজ দেশের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। সরকার তাদের কিছু করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। দেশের মানুষ আজ না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথাগুলো বলেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়। নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান। সমাবেশ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
সমাবেশে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা চাই এই সরকার ব্যর্থ না হোক। তাহলে আমরা ব্যর্থ হয়ে যাব। এ জন্য তারেক রহমান আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখুন।’
ফ্যাসিস্ট সরকার আর ফিরতে পারবে না—উল্লেখ করে সেলিমা রহমান বলেন, ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো দেশের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। তাঁরা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, ক্ষতির ষড়যন্ত্র করছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন কলেজে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে। ফ্যাসিস্টদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আগস্ট অভ্যুত্থানের শক্তি পড়ে গেছে। এটা তাঁদের বুঝতে হবে।
হাসিনা ভারতের সঙ্গে অসম বিভিন্ন চুক্তি করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দেশ ধ্বংস করেছে হাসিনা, দেশের টাকা লুট করে দেশের অর্থনীতি শেষ করে দিয়েছে হাসিনা। এখনো তারা ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হলে দরকার বিএনপি ও দেশপ্রেমিক জনতাকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন, জবাবদিহিমূলক সরকার না হলে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, স্থিতিশীলতা আসে না।’ তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপি ১৬ বছর সংগ্রাম করেছে। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশ ফুঁসে উঠেছিল। এর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছিল।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, ‘হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে। আজও আমরা অপেক্ষায় থাকি আমাদের গুম হওয়া ভাইদের জন্য। বিএনপি যখন ১৬ বছর সংগ্রাম করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে শামিল হয়েছিল।’
মজিবর রহমান বলেন, ‘জনগণের কাছে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা চাই তারেক রহমানের অবিলম্বে দেশে প্রত্যাবর্তন। আমরা চাই, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাসিনার সরকারের হাজার হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার। আমরা চাই, দেশের সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করবে, রাজনীতি করবে।’
সমাবেশ শুরুর আগে বরিশাল জেলার সব উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগদান করেন নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহাবুবুল হক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শরফুদ্দিন আহমেদ, এবায়দুল হক, মোহাম্মদ দুলাল হোসেন, আবু নাসের রহমাতুল্লাহ, শহীদ হাসান প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ষড়যন ত র র সদস য ব এনপ র সরক র র কম ট র আম দ র র রহম
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস