কুমিল্লায় শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় ২ তদন্ত কমিটি গঠন
Published: 21st, February 2025 GMT
কুমিল্লায় ২১ ফেব্রুয়ারির রাতে শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় দেশব্যাপী ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের গুণবতী ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শুক্রবার পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.
বিকেলে ইউএনও সমকালকে বলেন, শহীদ মিনার ভাঙার বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। ঘটনা তদন্ত করতে উপজেলা কৃষি অফিসার জোবায়ের আহমেদকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম মীর হোসেন। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে কলেজের পক্ষ থেকে পৃথক আরো একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক সারোয়ার ওসমানকে ওই কমিটির প্রধান ও কলেজের অপর দুই শিক্ষককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা কলেজ চত্বরের শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন। রাত পৌনে ১টার দিকে সবাই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পরে গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা শহীদ মিনারে ভাঙচুর চালায়।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল লতিফ সমকালকে বলেন, কলেজের শহীদ মিনারটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে এটি কেউ না ভাঙলে এভাবে নিচে পড়ে যাওয়ার কথা নয়।
কলেজের নৈশপ্রহরী শামসুল আলমের বরাত দিয়ে অধ্যক্ষ আরো বলেন, রাত প্রায় ২টার দিকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে শহীদ মিনার চত্বরে যান ওই নৈশপ্রহরী। সেখানে গিয়ে দেখেন শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দুটি স্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন রাতে সমকালকে বলেন, কলেজের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করা হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় এখনই ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় ব্যক্তিরাই জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, শহীদ দিবসে শহীদ মিনারের প্রতি এমন আক্রোশ মেনে নেওয়া যায় না, আশা করবো দ্রুত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জড়িতদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবে। অপরাধীরা রক্ষা পেয়ে গেলে এমন ঘটনা আরো ঘটতে থাকবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কল জ ক কল জ র তদন ত উপজ ল এ ঘটন ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’
৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।
লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।
আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’
এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’
লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’
আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।