সুনামগঞ্জে বৃষ্টি চেয়ে শিরনীর আয়োজন, সংঘর্ষে আহত ২০
Published: 22nd, February 2025 GMT
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বৃষ্টি চেয়ে শিরনীর আয়োজনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোগ গ্রামে ছয়হাল মাঠে সংঘর্ষ হয়।
ঠাকুরভোগ গ্রামের আবদাল মিয়া-সুফি মিয়া পক্ষ ও নূর মিয়া-আশিক মিয়া পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। আধিপত্য ধরে রাখতে গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) লোকজনদের নিয়ে গ্রামে শিরনীর আয়োজন করে নূর মিয়া-আশিক মিয়া পক্ষ। ওই দিন সন্ধ্যায় আবদাল মিয়া-সুফি মিয়ার পক্ষ মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়, শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে তারাও শিরনীর আয়োজন করবে। মাইকে এমন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে ঠাকুরভোগ গ্রামে। সকালে উত্তেজনা আরো ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছে।
নূর মিয়া-আশিক মিয়ার পক্ষের আহতরা হলেন, ঠাকুরভোগ গ্রামের মৃত তছই মিয়ার ছেলে নূর মিয়া, মৃত আবকুল খাঁর ছেলে শিহাব মিয়া, মৃত রমজান খাঁর ছেলে আরজান খাঁ, মৃত আবদুল নূরের ছেলে মতলিব মিয়া, মৃত ইসবর খাঁর ছেলে শাহ জাহান খান, আকিক মিয়া, সাজিদ মিয়া।
আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহে জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৮
রাজশাহীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা, নারী নিহত
আবদাল মিয়া-সুফি মিয়া পক্ষের আহতরা হলেন, মৃত মনাফ মিয়ার ছেলে আবদাল মিয়া, সুফি মিয়ার ছেলে জুবেল আহমদ, মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব মিয়া, মিজানুর রহমান, মখলিছ মিয়ার ছেলে সেবুল মিয়া, আবুল মিয়া, মনির মিয়ার ছেলে ডালিম মিয়া, সৈয়দ মিয়ার ছেলে জমিদার আলী, মৃত আশাদ খাঁ'র ছেলে রেকুল খান, মৃত আরজু মিয়ার ছেলে ফখরু মিয়া, মৃত কমির মিয়ার ছেলে বাদশা মিয়া। আহত আরো কয়েকজনের নাম ও পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
সংঘর্ষের বিষয়টি রাইজিংবিডি-কে নিশ্চিত করেছেন শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী। তিনি বলেন, বৃষ্টি জন্য দোয়া প্রার্থনায় গ্রামে শিরনীর আয়োজন করাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এনেছে। বর্তমানে গ্রামটি শান্ত রয়েছে।
ঢাকা/মনোয়ার/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ আহত আবদ ল ম য় স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’
৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।
লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।
আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’
এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’
লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’
আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।