‘শেয়ারবাজার করপোরেট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২৫’ এর প্রথম রাউন্ডে আরও একটি জয় পেয়েছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাবির জগন্নাথ হল মাঠে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বেস্ট হোল্ডিংসকে ৫০ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে।

ওয়ালটন আগে ব্যাট করতে নেমে মো. সাহেল মিয়ার ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান করে। জবাবে বেস্ট হোল্ডিংস ১০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রানের বেশি করতে পারেনি।

আরো পড়ুন:

সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে ফেলে সামনে তাকানোর পরামর্শ

স্বপ্ন আকাশছোঁয়া অথচ পারফরম‌্যান্স গড়পড়তা

ওয়ালটনের সাহেল মিয়া মাত্র ৩৮ বলে ৮টি চার ও ১৩ ছক্কায় ১১৮ রান করেন। তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৩১০.

৫৩। এছাড়া অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন ১২ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ২৯ ও শাকিল ৭ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় করেন ১৯ রান।

বল হাতে বেস্ট হোল্ডিংসের সেরা ছিলেন জুনায়েদুর রহমান। তিনি ২ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। সামি ২ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে নেন ১টি উইকেট।

জবাব দিতে নেমে বেস্ট হোল্ডিংস নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে। তাতে নির্ধারিত ১০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রানের বেশি করতে পারে না তারা। তাদের হয়ে শিফাত আকাশ ১২ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩২ রান করেন। হাসান ১০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ২৬ রান। এছাড়া সামি আল হোসেন ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৩ ও ফারহান মাহিব ফাহিম করেন ১৮ রান।

বল হাতে ওয়ালটনের নাজেল ২ ওভারে ১ মেডেনসহ ১৪ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নেন। জাহিদুল ২ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। আর মামুন ও রাকিবুল নেন ১টি করে উইকেট। ম্যাচসেরা হন ওয়ালটনের সেঞ্চুরিয়ান সাহেল মিয়া।

এবারের আসরে ১২টি দল অংশ নিয়েছে। দলগুলো হলো- সিটি ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিএনআইসিএল, ওয়ালটন, লংকাবাংলা সিকিউরিটিস, বিজিআইসি, নিটোল ইন্স্যুরেন্স, ডিএসই থান্ডার স্ট্রাইকার্স, ইউসিবি স্টোক, দ্য স্ট্রেঞ্জার্স (বিএসইসি)ম বেস্ট হোল্ডিংস ও প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিস।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট হ র

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ