আনিসুল হকের পরামর্শে রিমান্ড শুনানিতে কথা বলেননি শামসুদ্দিন চৌধুরী
Published: 5th, March 2025 GMT
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের পক্ষে আজ বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে শামসুদ্দিন চৌধুরী আদালতে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে রিমান্ড শুনানির সময় শামসুদ্দিন চৌধুরী সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে কথা বলেন।
রিমান্ডের বিরোধিতা করে শামসুদ্দিন চৌধুরী আদালতে কোনো কথা বলবেন কি না, সে বিষয়ে তিনি আনিসুল হকের পরামর্শ চান। কিন্তু সাবেক আইনমন্ত্রী এই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে (শামসুদ্দিন চৌধুরী) আদালতে কথা না বলার পরামর্শ দেন। তখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।
গুলশান থানায় করা আরজু শেখ হত্যা মামলায় শামসুদ্দিন চৌধুরীকে আজ আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আদালত শুনানি নিয়ে তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর হলে মাথা নিচু করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।
বিমর্ষ মুখে শামসুদ্দিন
সকালে হাজতখানা থেকে বের করার সময় শামসুদ্দিন চৌধুরীর দুই হাত পেছনে নিয়ে পরানো হয় হাতকড়া। তাঁকে আদালতের হাজতখানার ভেতর থেকে হাঁটিয়ে সামনে আনা হয়। তখন সময় সকাল ৯টা ৫৯ মিনিট। তাঁর মাথায় হেলমেট। বুকে পুলিশের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। দুই হাত পেছনে, পরানো হাতকড়া।
সামনের দিকে ঝুঁকে মাথা নিচু করে আদালতের সামনের সড়ক দিয়ে হাঁটতে থাকেন শামসুদ্দিন চৌধুরী। এ সময় তাঁর বাঁ বাহু ধরেছিলেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। আদালতের প্রধান ফটক পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তাঁকে দোতলায় ওঠানো হয়। তাঁর সামনে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আনিসুল হকের সামনে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম।
দোতলায় আদালতকক্ষের সামনে তাঁদের যখন নেওয়া হয়, তখন আদালতকক্ষে আইনজীবী ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। প্রথমে আতিকুল ইসলামের মাথা থেকে পুলিশের হেলমেট খোলা হয়। এরপর আনিসুল হক, শামসুদ্দিন চৌধুরীদের মাথার হেলমেট খোলা হয়। এরপর একে একে তাঁদের নেওয়া হয় আসামির কাঠগড়ায়।
কাঠগড়ায় নেওয়ার পর শামসুদ্দিন চৌধুরীর পেছনের দুই হাত থেকে এক হাতের হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। তখনো তিনি তাঁর দুই হাত পেছনে রেখে বিমর্ষ মুখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন।
শামসুদ্দিন চৌধুরীর ঠিক বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আনিসুল হক। আনিসুলের বাঁ পাশে ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। আনিসুল ও তাজুল দুজনই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন।
সময় তখন সকাল ১০টা ৭ মিনিট। বিচারক তখনো এজলাসে আসেননি। আনিসুলের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন একাত্তর টিভির সাবেক সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা রুপা। আনিসুল হক ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে থাকেন।
তখন কাঠগড়ার লোহায় দুই হাত ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী। তখন আনিসুল হক তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। তবে শামসুদ্দিন চৌধুরী আইনজীবী ও সাংবাদিকদের দিকে চেয়ে ছিলেন। এর মধ্যে আদালতের এক কর্মকর্তা উচ্চৈঃস্বরে বলে ওঠেন, ‘স্যার, আসছেন।’
তখন সকাল ১০টা ১৫ মিনিট। এক পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল হক, তাজুল ইসলাম, আতিকুল ইসলামদের নাম ধরে ডাকতে থাকেন। তখন প্রত্যেকে বিচারকের মুখের দিকে চেয়ে ছিলেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আনিসুল, আতিকুল, তাজুলদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা রয়েছে। তাঁদের এসব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
আনিসুলদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানি শেষ হওয়ার পর এক পুলিশ কর্মকর্তা শামসুদ্দিন চৌধুরীর নাম ধরে ডাকেন। তখনো তাঁর পেছনে ছিল দুই হাত।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলতে থাকেন, গুলশান থানার হত্যা মামলায় শামসুদ্দিন চৌধুরীকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলতে থাকেন, ‘মাননীয় আদালত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই গুলশান থানা এলাকায় আরজু শেখ নামের একজন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলায় শামসুদ্দিন চৌধুরীর নাম রয়েছে। তিনি এই হত্যার নির্দেশদাতা।’
এরপর শামসুদ্দিন চৌধুরীর রিমান্ডের সপক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরতে শুরু করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। এ সময় শামসুদ্দিন চৌধুরী আনিসুল হকের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
আনিসুল হকের কাছে শামসুদ্দিন চৌধুরী জানতে চান, তিনি আদালতে কোনো কথা বলবেন কি না? তবে হাসিমুখে আনিসুল হক শামসুদ্দিন চৌধুরীকে কথা না বলার পরামর্শ দেন। তখন চুপচাপ বিচারকের মুখের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন আনিসুল হক। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মামলায় আনিসুল হকের ৪৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। সম্প্রতি দুটি হত্যা মামলায় আনিসুল হকের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলেও তাঁর পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে আদালতে কোনো কথা বলেননি।
‘শামসুদ্দিন ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম সহযোগী’
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিতর্কিত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছিলাম, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর মানিক দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিচারপতি মানিকের একটি ছবিও দেখেছিলাম। তিনি কলাপাতার ওপর শুয়ে ছিলেন। পরনে ছিল তাঁর হাফপ্যান্ট। গায়ে কাদামাটি।’
বিচারকের উদ্দেশে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন আমলে এই বিচারপতি মানিক তাঁর পক্ষ নিয়ে টক শোতে কথা বলেছেন দিনের পর দিন। এমনকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতনের পক্ষেও তিনি সাফায় গেয়েছেন। তিনি টক শো উপস্থাপককেও ধমকি দিয়েছেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী।’
ঢাকা মহানগরের প্রধান পিপি যখন একের পর এক রিমান্ডের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে থাকেন, তখন শামসুদ্দিন চৌধুরী বিচারকের মুখের দিকে চেয়ে ছিলেন। কোনো কথা বলেননি। তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে হাজির ছিলেন না। পরে বিচারক তাঁকে (শামসুদ্দিন চৌধুরী) দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
যখন রিমান্ডের আদেশ হয়, তখন আনিসুল হকের মুখের দিকে চেয়ে থাকেন শামসুদ্দিন চৌধুরী। দুজনই তখন কোনো কথা বলেননি।
এরপর এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। তখন শামসুদ্দিন চৌধুরী নির্বাক কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর কাছে চলে যান দুই পুলিশ সদস্য। তাঁরা আবার তাঁর দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে দেন।
এ সময় দেখা যায়, পুলিশ শামসুদ্দিন চৌধুরীর মাথায় আবার হেলমেট পরিয়ে দিচ্ছে। আনিসুল, তাজুলদের পেছনে দুই হাত। তবে হাতকড়া পরানো কেবল এক হাতে। তবে তাঁরা হাত দুখানা পেছনে রেখেছিলেন। ব্যতিক্রম ছিল একাত্তর টিভির সাবেক সাংবাদিক শাকিল আহমেদের ক্ষেত্রে। তাঁর দুই হাত পেছনে নিয়ে পরানো হয় হাতকড়া।
তখন আবার আনিসুল, সালমান, শামসুদ্দিন চৌধুরী, তাজুলদের আদালতকক্ষ থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ শুরু করে পুলিশ। প্রথমে আনিসুল, আতিকুল, এরপর তাজুল, শামসুদ্দিন চৌধুরীদের হাত ধরে সিঁড়ির কাছে আনা হয়।
শামসুদ্দিন চৌধুরীর পেছনে দুই হাত থাকায় তাঁকে এক পুলিশ সদস্য হাত ধরে রাখেন। তাঁকে যখন আদালতের সামনের প্রধান ফটকে আনা হয়, তখন উপস্থিত দুই পাশের লোকজনকে তিনি দেখতে থাকেন।
শামসুদ্দিন চৌধুরীকে পুলিশ হাত ধরে হাজতখানার ভেতরে নিয়ে যায়।
শামসুদ্দিন চৌধুরীর দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরানোর বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দুই হাজার নিরীহ ব্যক্তিকে নির্বিচার গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য আন্দোলনকারী আজ পঙ্গু। আমরা যদি ভুলে যায়, রাস্তায় ছোট ছোট বাচ্চাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ভ্যানের ওপর লাশ রেখে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের ষড়যন্ত্রে আজ এতগুলো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের সাধারণ আসামি হিসেবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। এই আসামিদের কীভাবে আদালতে নিয়ে এল, সেটা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। তাঁদের আমরা বিচার চাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওমর ফ র ক ফ র ক কর মকর ত এক প ল শ ল ইসল ম ব চ রপত ক ঠগড় য় হ জতখ ন আইনজ ব র পর ম র স মন মন ত র র সময় হ তকড়
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
বাংলা ওটিটির নিয়মিত দর্শকেরা ভালো করেই জানেন—যে গল্পে থাকেন শিহাব শাহীন, সেখানে থাকে প্রেম, আবেগ, আর বাস্তব জীবনের মৃদু জটিলতা। এবার সেই নির্মাতা ফিরছেন নতুন এক প্রেমের গল্প নিয়ে। চরকি অরিজিনাল ফিল্ম ‘তোমার জন্য মন’ মুক্তি পাবে ৫ নভেম্বর রাত ১২টায় (৬ নভেম্বর)। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন সময়ের আলোচিত জুটি ইয়াশ রোহান ও তটিনী।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় চরকির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয় সিনেমাটির মোশন পোস্টার ও ট্রেলার। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা। কেউ লিখেছেন, ‘চরকির ফিল গুড রোমান্সে এবার নতুন জুটি!’ কেউ–বা বলেছেন, ‘ইয়াশ–তটিনীর কেমিস্ট্রি দেখতে মুখিয়ে আছি।’
নতুন প্রেম, নতুন জুটি
‘তোমার জন্য মন’–এর গল্পে মফস্সলে বেড়ে ওঠা দুই তরুণ–তরুণীর সম্পর্ক উঠে এসেছে। শিহাব শাহীন বলেন, ‘এটা একটা ফিল গুড রোমান্টিক গল্প। এর আগে চরকির সঙ্গে কী ধরনের গল্প করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এবার গল্পটা আমি নিজেই নির্ধারণ করেছি। শুরু থেকেই জানতাম, এই গল্পটা আমি বানাতে চাই।’
গল্পের ভাবনা সম্পর্কে নির্মাতা বলেন, ‘আমাদের কিছু প্রবাদ আছে—“বৃক্ষ তোমার নাম কী ফলে পরিচয়”, “জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো”—এই ভাবনা থেকেই গল্পটা এসেছে। অনেক সময় মানুষের নাম বা পরিচয় বড় হয়ে ওঠে, কিন্তু আসলে মানুষ বড় হয় তার কাজেই। এই দর্শনটাই গল্পের কেন্দ্রে।’
পিউ আর রওনকের গল্প
এই সিনেমায় তটিনী অভিনয় করেছেন পিউ চরিত্রে। নির্মাতার অফিসে গল্প শুনেই তিনি কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই দিনের কথা মনে করে তটিনী বলেন, ‘গল্পটা অর্ধেক শুনে ভেবেছিলাম, এরপর কী হবে আন্দাজ করতে পারব, কিন্তু এমন মোড় নিল যে সেটা ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। সেই বিস্ময়টাই আমাকে আকৃষ্ট করেছে।’ তটিনীর ভাষায়, ‘পিউ একটু আবেগপ্রবণ ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা মেয়ে। একটা ঘটনার পর সে নিজের জীবনের কিছু দিক বুঝে নেয়, আত্মোপলব্ধি ঘটে। এই চরিত্রটা অভিনয় করা আমার জন্য মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং ছিল।’