এখনো সময় আছে, নারীসমাজের পাশে দাঁড়ান: ফওজিয়া মোসলেম
Published: 8th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যাঁরা উপদেষ্টা আছেন, তাঁরা নানা আন্দোলনের ফসল। নারী একটা কঠিন সময় পার করছে, কিন্তু আন্দোলনের ফসল সেই নারীদের মুখ থেকে কোনো কথা শুনতে না পাওয়া আমাদের ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। তাঁদের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি, তাঁরা কেন এই পরিস্থিতিতে নারীসমাজের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন না। আহ্বান জানাই, এখনো সময় আছে নারীসমাজের পাশে দাঁড়ান।’
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শনিবার সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে মহিলা পরিষদের সভাপতি এ কথা বলেন।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ফওজিয়া মোসলেম আরও বলেন, ‘সমসুযোগ তৈরি করে নিতে হবে। এই দুঃসময়কে ভয় পাওয়া যাবে না। এই দুঃসময় ভেদ করে আলো ছিনিয়ে আনতে হবে। বাঙালি কোনো ধর্ষণ, খুন কিংবা নিপীড়নের কাছে মাথানত করবে না। সবাইকে একসঙ্গে এই প্রতিকূলতা ভেঙে এগিয়ে যেতে হবে।’
আইনশৃঙ্খলার ভঙ্গুর অবস্থার জন্য কোনো বিচার হচ্ছে না বলেন ফওজিয়া মোসলেম। এর উন্নতি না হলে শুধু নারীরাই নয়, যাঁরা শাসনক্ষমতায় আছেন, তাঁরাও নিরাপদে থাকবেন না, নৈরাজ্যের কাছে ভেসে যাবেন বলে জানান তিনি। তিনি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করার দাবি জানান।
নারী নির্যাতনকারীরা কীভাবে ছাড়া পাচ্ছে, সে প্রশ্ন তুলে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, ‘তারা কীভাবে প্রশ্রয় পাচ্ছে? সরকারের পক্ষ থেকে কেন সুস্পষ্ট বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে না? কেন আশ্বস্ত করা হচ্ছে না? এই সমাজ চাই না। এই সমাজ গ্রহণও করব না।’ নারীর অধিকার রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমি বলেন, ‘শাহবাগে নারী শিক্ষার্থীকে পোশাক নিয়ে হেনস্তা করার এবং সাইবার বুলিংয়ের এত সাহস কোথা থেকে পায়? রাষ্ট্রের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা। কিন্তু ধর্ষক-নিপীড়কেরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।’
আয়োজনে ‘নারীর ক্ষমতায়নে চাই সহিংসতামুক্ত জীবন, সম–অধিকার, সমমর্যাদা এবং সম সুযোগ’ শীর্ষক ঘোষণা পাঠ করেন কর্মজীবী নারী কাজী গুলশান আরা দীপা। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী বিদ্বেষের প্রকাশ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীর প্রতি গণহেনস্তা ও মব সংস্কৃতির যে চিত্র গণমাধ্যমে উঠে আসছে, তা আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই পরিস্থিতি নারীদের নির্ভয়ে চলাফেরার সুযোগ সীমিত করে দিচ্ছে। নারীর অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, জাতীয় নারী শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা, শক্তি ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক নিলুফা বেগম, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা প্রমুখ। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে (৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: ‘তফসিল হয়েছে, তবে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের বাম দলগুলো।
তারা দাবি করছেন, তারিখ ঘোষণার পরও মাঠে এখনো কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি,বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তাই ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন জরুরি।
আরো পড়ুন:
অসত্য তথ্য ছড়ানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ: সিইসি
তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “১৭ বছর পর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে এই তফসিল। জনগণও নিজেদের দল ও প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি মনে করেন, “একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট-বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে নতুন অভিযাত্রার ইঙ্গিত হলেও সামনে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে।”
“একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন, তা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের আস্থা ফেরানো জরুরি। ভোটে টাকার খেলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে”, বলেন সাইফুল হক।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স তফসিল ঘোষণায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এখন থেকে প্রতিটি মুহূর্তে ইসি ও সরকারকে এমন সব পদক্ষেপ নিতে হবে, যা দেখলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে, এবার সত্যিকার অর্থে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।”
তিনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “প্রার্থী হওয়া ও ভোট দেওয়ার সমান সুযোগ সবার জন্য নিশ্চিত করতে ইসিকে আরো সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদকে পুনর্গঠন করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতার বার্তা আরো দৃশ্যমান করতে হবে।”
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “বহুল প্রত্যাশিত তফসিল ঘোষণায় স্বস্তি এসেছে, তবে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ এখনো মসৃণ নয়।”
“নির্বাচনকে টাকার প্রভাব, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা এবং প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত করতে হবে। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে”, যোগ করেন তিনি।
সরকার, ইসি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা এবং জরুরি উদ্যোগ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।
ঢাকা/এএএম/রাসেল