নিপীড়নের ঘটনাগুলোতে সাত দিনের মধ্যে শক্ত অবস্থান নেওয়ার দাবি ঢাবি সাদা দলের
Published: 11th, March 2025 GMT
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, নারীর প্রতি অবমাননা বন্ধ এবং ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
মানববন্ধনে শিক্ষকেরা বলেন, পলাতক শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছেন। নিপীড়নের ঘটনাগুলোতে সাত দিনের মধ্যে শক্তভাবে অবস্থান নেওয়ার দাবিও জানান তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে তাঁরা এ মানববন্ধন করেছেন।
মানববন্ধনে সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে যুগে যুগে। কখনোই আমরা এটি থেকে বের হতে পারিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে যখন হেনস্তা হতে হয় কর্মচারী দ্বারা এবং সেই হেনস্তাকেও কেউ কেউ আবার সমর্থন দেয়, তখন লজ্জায় আমাদের মাথা নত হয়ে যায়। আমরা প্রশাসনকে বলব, এমন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বলেন, শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
ধর্ষণ ও নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনাগুলোতে সাত দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপিকে শক্তভাবে অবস্থান নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপি, আপনাদের সাত দিন সময় দিচ্ছি। এই সাত দিনের মধ্যে শক্তভাবে অবস্থান নিন। না হলে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসব। আমরা রাজপথে নেমে আসব। আমাদের এ প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কলা অনুষদের ডিন ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবনতির কারণে ছিনতাই, রাহাজানি, হত্যাকাণ্ড এবং সর্বোপরি নারীদের হেনস্তা, অনিরাপত্তা ও ধর্ষণের ঘটছে। পলাতক শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানাভাবে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছেন। অডিও কলের মাধ্যমে তাঁদের নেতা–কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবনতিসহ এ দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছেন উসকানি দিয়ে।
কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবা সুলতানা মাগুরার ভয়াবহ ঘটনা গুরুত্বসহকারে দেখতে আহ্বান জানিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ ন ন
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৩) ও তাঁর মা তাহমিনা বেগম (৫২) হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পৃথক তিনটি স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা।
আজ সোমবার বেলা একটার দিকে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন তাঁরা। এরপর বেলা তিনটার দিকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
নিহতের সহপাঠী নূর মোহাম্মদ সোহান বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী ও তাঁর মায়ের হত্যাকারী একজন ধর্ষক। আমাদের বোনের ওপর সে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি। ঘটনার শুরু থেকেই পুলিশের গাফিলতি আমরা লক্ষ করেছি।’
আরেক সহপাঠী মুনিয়া আফরোজ বলেন, ‘আমাদের বান্ধবীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, যা লাশ উদ্ধারের সাত দিন পর জানা গেল। পুলিশ তদন্তে অবহেলা করেছে। আমাদের দাবি, এক সপ্তাহের মধ্যে এই জোড়া খুনের পেছনে আরও বড় কোনো শক্তি আছে কি না, তা সুষ্ঠু তদন্ত করে উন্মোচন করতে হবে। মামলা বিশেষ আদালতে হস্তান্তর করতে হবে। ধর্ষকের সুষ্ঠু বিচার ও ফাঁসি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
সাইফুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী সুমাইয়া ও তাঁর মায়ের হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে, তা বের করতে হবে পুলিশকে। এর পেছনে সুমাইয়ার পরিবারের কেউ জড়িত আছে কি না, সেটিও তদন্ত করতে হবে।’
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, প্রথমে পুলিশ বলেছিল, সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় এবং তা দেখে ফেলার কারণে তাঁর মাকে হত্যা করা হয়। পরে জানা যায়, কবিরাজ মোবারক হোসেন সুমাইয়াকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশে গড়িমসি হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। দ্রুত প্রতিবেদন প্রকাশ ও মামলাটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে হত্যাকারীর ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘স্মারকলিপিটি পেয়েছি। রাষ্ট্রের কাজ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিষয়টি আমরা দেখব।’
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান, ‘আমরা তদন্ত করছি। আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুমিল্লা নগরের কালিয়াজুরি এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে নিহত তাহমিনা বেগম সুজানগর এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী। তাঁর মেয়ে সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় তাঁরা বাসায় একা ছিলেন। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে তাহমিনা বেগমের দুই ছেলে বাসায় ফিরে হত্যার বিষয়টি টের পান। পরদিন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন তাহমিনা বেগমের বড় ছেলে মো. তাজুল ইসলাম। সেদিনই পুলিশ কবিরাজ মোবারক হোসেনকে (২৯) গ্রেপ্তার করে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং ওই দিন রাতেই তাঁকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হন।