জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, রাজস্ব কার্যক্রম সংস্কারের লক্ষ্যে এনবিআর ভেঙে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আলাদা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঈদের আগেই দুই ভাগ হয়ে যাবে এনবিআর। কার্যক্রম শুরু হবে নতুন অর্থবছরের প্রথম থেকেই। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘আয়কর আইন, ২০২৩: সংস্কার ও প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ তথ্য জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিসিএস ট্যাক্সেশন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যরিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী, স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব সৈয়দ মহিদুল হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর কমিশনার ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ মামুন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘টক অব দ্য কান্ট্রি- ট্যাক্স পলিসি এবং কর ব্যবস্থাপনা আলাদা হচ্ছে। এটা এতদিন অনুমান ছিল। সামনে বাস্তবে রূপ পাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা বুধবারও ডেকে জানিয়েছেন, ঈদের আগেই আলাদা হওয়ার বিষয়টি পাস হবে। আগামী ১ জুলাই থেকেই এর কার্যকম শুরু হবে।’
বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এর যে কাঠামো, সফটওয়্যার, সেটা তৈরি করার জন্য যথেষ্ট সময় লাগে। তবে দ্রুত করতে পারলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। এনবিআর সেদিকেই এগোচ্ছে।’
আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। আইনের একটা খসড়া করা হয়েছে। সেটি অচিরেই উপদেষ্টা পরিষদে উঠবে এবং জারি হবে। সেখানে বিশদভাবে এনবিআর যা চাচ্ছে বা সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা হলো রাজস্ব নীতি একটা বিভাগ হবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, যেটা এনবিআরের প্রধান কাজ, আইন প্রয়োগ করা, সেটার জন্য আলাদা একটা বিভাগ হবে। এই দুটো বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কিছু সমন্বয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কিছু বাইরের লোকও থাকবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাঁরা অভিজ্ঞ, তাঁরাই এই কাজগুলো করবেন।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর কমিশনার ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ মামুন। তিনি বলেন, দেশের কর-জিডিপি অনুপাত খুবই কম যা ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ, অনেক বেশি কর অব্যাহতি দিতে হয়। যার কারণে কর ব্যয় অনেক বেশি। কর ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতি দূর করতে প্রশাসনিক সংস্কার, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর আয়কর বিভাগ বিনির্মাণের সংস্কার, আইন ও বিধি সংস্কার এবং সকল অংশীজনের দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার প্রয়োজন।
আয়কর আইনের অসঙ্গতির বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর-জিডিপির হার অত্যন্ত কম, এটা সত্য। জিডিপির হিসাব নিয়ে অনেকেই বলেন, এটি অতিরঞ্জিত। তবে কর অব্যাহতির কারণে রাজস্ব কম আহরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কর অব্যাহতির সংস্কৃতিটা চর্চা চলছে। এখান থেকে ধীরে ধীরে বের হতে হবে।
আব্দুর রহমান বলেন, দেশে যে পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে তা প্রতিযোগিতামূলক দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এর কারণ, সুশাসনের অভাব। এখানে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি বলা হয়, কর দিতে হবে না। উল্টো সরকারি কোষাগার থেকে প্রণোদনা দেওয়া হবে, তারপরও দেশে বিনিয়োগ আসবে কি না সন্দেহ। কারণ, তাদের যে ধরনের সেবা প্রয়োজন, সেটা ঠিক মতো দিতে পারি না। আইনের শাসন একেবারেই অনুপস্থিত।
রাজস্ব আয় বাড়াতে আইন প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যাঁরা করদাতা নন, তাঁরাও কর দেন। গৃহিণী, ছাত্রছাত্রী, তাঁরাও ব্যাংকে টাকা রাখেন। তাঁদের মুনাফা থেকেও কর আদায় হয়। এটা প্রত্যক্ষ কর। এখনও রাজস্ব আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। তার মানে এখনও গরিব মানুষেরা বাংলাদেশে কর দেয়। এটাই সত্য। ৫৩ বছর ধরে ঘাটতি বাজেট চলছে। প্রচুর ঋণ হয়েছে। ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ বলেন, ব্যবসার পরিধি অনুযায়ী উৎসে কর নির্ধারণ করা হয়। সব ব্যবসার আয় ও মুনাফা এক রকম নয়। মুনাফার ভিত্তিতে উৎসে কর বিভিন্ন রকম করা হয়েছে। এগুলোর পুনর্বিবেচনা করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ