জীবনে একবার হলেও যে নামাজ পড়তে বলেছেন নবীজি (সা.)
Published: 14th, March 2025 GMT
নফল নামাজগুলোর মধ্যে ‘সালাতুত তাসবিহ’ একটি অনন্য ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত, যা গুনাহ মাফ ও আত্মশুদ্ধির জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। সালাতুত তাসবিহ অর্থ তসবি পাঠের নামাজ। আমরা আল্লাহর প্রশংসাবাচক যে-শব্দগুলো জপমালায় সকাল-সন্ধ্যা জপি, তাকেই তসবি বা প্রচলিত শব্দে তসবি বলে। এই নামাজে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ তসবি বারবার পড়া হয়।
সালাতুত তসবির নিয়মিত আমল একজন মুমিনকে গুনাহ থেকে পবিত্র করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথ সুগম করে।
জীবনে অন্তত একবার হলেও সালাতুত তসবি পড়তে হয়। এ নামাজের সুসংবাদ নবীজি (সা.
চার রাকাত নামাজের প্রতি রাকাতে এভাবে করবেন। যদি প্রতিদিন একবার এই নামাজ পড়তে পারেন, পড়বেন। না হলে প্রতি জুমার দিন একবার পড়বেন। তা-ও না পারলে প্রতি মাসে একবার। তা-ও না হলে বছরে একবার। এবং তা-ও যদি না পারেন তবে জীবনে অন্তত একবার পড়বেন। (আবু দাউদ: ১২৯৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৭)
আরও পড়ুনঅর্থ বুঝে নামাজ পড়ার ফজিলত১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সালাতুত তসবির পদ্ধতি
এই নামাজ ৪ রাকাত। ৪ রাকাত একত্রে বা দুই রাকাত করেও পড়া যায়। ৪ রাকাতে মোট ৩০০ বার পড়তে হয় ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ তাসবিহটি। তাসবিহ পাঠের বিস্তারিত পদ্ধতি হলো:
১. সুরা ফাতিহা ও অতিরিক্ত সুরা পাঠের পর রুকুতে যাওয়ার আগে ১৫ বার তসবি পড়া।
২. রুকুতে রুকুর তাসবিহ পড়ার পর ১০ বার এই তসবি পড়া।
৩. রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ পড়ার পর এই তসবি ১০ বার।
৪. সেজদায় সিজদার তসবি পড়ার পর ১০ বার এই তসবি পড়া।
৫. সেজদা থেকে উঠে বসে ১০ বার এই তসবি পড়া।
৬. দ্বিতীয় সেজদায় সিজদার তসবি পড়ার পর ১০ বার এই তসবি পড়া।
এভাবে প্রতি রাকাতে মোট ৭৫ বার এবং ৪ রাকাতে মোট ৩০০ বার সালাতুত তসবি নামাজের নির্ধারিত তসবি পড়া হবে।
কোথাও তসবি পড়তে ভুলে গেলে বা ভুলক্রমে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে-রোকনে স্মরণ আসুক, তার সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে ভুলে যাওয়া সংখ্যা আদায় করে নিতে হবে। কোনো কারণে ‘সাহু সেজদা’ ওয়াজিব হলে সেই সেজদা এবং তার মধ্যবর্তী বৈঠকে তসবি পাঠ করতে হবে না। তসবির সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙুলের কর গণনা করা যাবে না।
আরও পড়ুনতওবা যেভাবে করা যায়১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সালাতুত তসবির ফজিলত
রাসুল (সা.) বলেছেন, এই নামাজে গুনাহ মাফ হয়, এমনকি গুনাহ সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হলেও। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,২৯৭)।
এই নামাজ যেকোনো সময় পড়া যায়, তবে অন্য নামাজ পড়ার নিষিদ্ধ সময়গুলোতে, অর্থাৎ সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও ঠিক দুপুরের সময়ে পড়া যাবে না। বিশেষত রাতের বেলা বা তাহাজ্জুদ নামাজের সময় পড়া উত্তম।
নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। ‘সালাতুত তাসবিহর ৪ রাকাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি’ এটা ভেবে নামাজ শুরু করলেই হবে।
আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই ন ম জ অবস থ য় ত সব হ আল ল হ ত রপর করব ন একব র পড়ব ন আকব র
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে