নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে ইসির গণবিজ্ঞপ্তি প্রশ্নে রুল
Published: 18th, March 2025 GMT
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ আদেশ দেন।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে ১০ মার্চ ওই গণবিজ্ঞপ্তি দেয় নির্বাচন কমিশন। গণবিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম ১৬ মাার্চ রিটটি করেন। আজ আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আবেদা গুলরুখ।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে ওই গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম রিট আবেদনকারীর দলের (রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) ক্ষেত্রে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধানে উল্লেখিত রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞার চেতনা ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ব্যর্থ করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০খ-এর আলোকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ওই গণবিজ্ঞপ্তি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া রুলে।
ইসির গণবিজ্ঞপ্তির ভাষ্য, ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ক-এর অধীন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করতে ইচ্ছুক এবং ২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালায় উল্লিখিত শর্ত পূরণে সক্ষম রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে বিধিমালায় সংযোজিত ফরম-১ পূরণ করে ২০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ক অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল ৯০খ উল্লিখিত শর্তাবলি পূরণ সাপেক্ষে কমিশনে দলের নাম নিবন্ধন করতে পারবে। ৯০খ ধারায় জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কার্যালয় ছাড়াও নিবন্ধনের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত উল্লেখ রয়েছে। যেমন কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকা, অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস প্রতিষ্ঠা, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটারের তালিকাভুক্তি ইত্যাদি।
রিট আবেদনকারীর ভাষ্য, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কমপক্ষে ১০০ উপজেলা ও ২২ জেলায় দলের কমিটি থাকতে হবে বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে। অথচ পার্বত্য তিন জেলায় ২০টি উপজেলা রয়েছে। যে কারণে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী আগ্রহী হলেও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করতে পারবে না। স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের সময় ২০১১ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ওই শর্ত যুক্ত করা হয়। ৫ শতাংশ উপজেলায় এবং ১০ শতাংশ জেলা কমিটি থাকাসহ সর্বমোট ৫ হাজার সদস্য থাকলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়ার সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে পুরোনো আইনে ওই গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সংবিধানে রাজনৈতিক দলের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, এই গণবিজ্ঞপ্তি সেই চেতনার পরিপন্থী—মূলত এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট
বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আদালত বলেছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে প্রতিটি তথ্য সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত থাকে; ডেটাবেজ সম্পূর্ণ কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয় এবং নাগরিকেরা বিশেষ করে নারীরা সহজেই তথ্য যাচাই করতে ও ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারেন।
বিবাহ ও তালাকের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশনে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন এবং তিন ব্যক্তি ২০২১ সালের ৪ মার্চ রিট করেন।
রিট আবেদনের ভাষ্য, বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর তথা ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। স্বামী বা স্ত্রী বিয়ের তথ্য গোপন করে অনেক ক্ষেত্রে আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ডিজিটাল আর্কাইভের অনুপস্থিতিতে অনেক সময় সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা দেখা যায়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালাইজেশনের জন্য কেন্দ্রীয় একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশে পরিবারের নিরাপত্তা, নারীর সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আইনগত স্বচ্ছতা এবং সবচেয়ে বড় বিষয় বিয়ে–তালাকসংক্রান্ত প্রতারণা বন্ধে ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। ডিজিটাল নিবন্ধন চালু হলে গোপন বিয়ে, একাধিক বিয়ে লুকানো, পূর্ববর্তী তথ্য গোপন, তালাক প্রমাণের জটিলতা—এসব সমস্যা ব্যাপকভাবে কমবে।