খুলনায় গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের হাত ধরে সংগঠিত হচ্ছে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ইতোমধ্যে তারা নগরীর ৮টি থানায় সমমনাদের নিয়ে ঘরোয়া ইফতার মাহফিল করেছে। আগামী রোববার খুলনা ক্লাবে বড় পরিসরে অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবার, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা এবং সুধীদের নিয়ে আরেকটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে দলটি। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারাও বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
তবে এখন পর্যন্ত খুলনার কোনো প্রবীণ নেতা দলটিতে যোগ দেওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি। শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে থাকা খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু এনসিপিতে যোগ দিচ্ছেন। খুলনার কমিটিতে বড় পদে তাকে পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠকরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মধ্যে যারা রাজনীতিতে আসতে চায় এবং সমমনা ছাত্র-জনতা নিয়ে নতুন দলের কমিটি হবে। নাগরিক কমিটির সেটআপই নতুন দলের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। রমজানের শুরুতে নগরীর বিভিন্ন মসজিদে সেহরি-ইফতারের সূচি বিতরণ, নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বিলবোর্ডে শুভেচ্ছা প্রচারসহ গণমুখী বিভিন্ন কাজে সংগঠনের নেতাকর্মীরা সময় দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা সংগঠকদের নিয়ে পৃথক তিনটি ইফতার মাহফিল করেছে। দু’একদিনের মধ্যেই এনসিপিতে যারা যোগ দিতে চায় তাদের জন্য অনলাইনে গুগল ফর্ম ছাড়া হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি খুলনার সংগঠক হামীম আহম্মেদ রাহাত বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা সাধারণ মানুষের পাশে আছি। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, বিভিন্ন এলাকায় কেউ মারা গেলে তার জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত হচ্ছি। রমজানের শুরু থেকে বিভিন্ন বাজারে আমাদের কুইক রেন্সপন্স টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত গণঅধিকার পরিষদ থেকে ৫০/৬০ জনের একটি দল যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছে। এর সঙ্গে পদবঞ্চিত বিএনপির সাবেক নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে তারা সময় দিচ্ছেন। বিএনপির ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর কমিটির কয়েকজন আমাদের সঙ্গে আসতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, ঈদের পরেই এনসিপির খুলনা মহানগর ও জেলা কমিটি হবে। এজন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আমরা গণসংযোগ করছি। যুব, পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি গঠনের জন্যও কাজ চলছে। মানুষের মাঝে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, অভ্যুত্থানের শুরু থেকেই আমি ছাত্রদের পাশে ছিলাম। নতুন দলের সংগঠকরা আমাকে তাদের সঙ্গে থাকার প্রস্তাব দিয়েছে। আমি রাজি হয়েছি। পুরানো রাজনীতিবিদ ও ছাত্রদের নিয়েই কমিটি হবে বলে তারা নিশ্চিত করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প জ ত য় ন গর ক প র ট ব এনপ র কম ট র আম দ র র কম ট এনস প ইফত র গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।