রমজানে ইফতার বাজার মানেই উৎসবমুখর পরিবেশে হাজার মানুষের সমাগম। আর চকবাজারের ইফতারের কথা সবার মুখে মুখে। প্রতি রমজানেই এই চকবাজারে বাহারি ইফতারের পসরা বসে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরের দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ আসে এই ইফতার বাজারে ইফতার কিনতে বা করতে।

যেখানে হাজারও মানুষের সমাগম সেখানে খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। তাই গত বছর থেকেই এই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপারটায় কাজ করছে দেশের ‘ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস’ (এফএমসিজি) ব্র্যান্ড ‘লাইফবয়’।

এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এর ধারাবাহিকতায় এবারও লাইফবয় হ্যান্ডওয়াশ শুরু করেছে ‘ইফতারের আগে লাইফবয় টাইম’ ক্যাম্পেইন। যার মূল উদ্দেশ্য- খাবার আগে স্বাস্থবিধি বা হাইজিন রক্ষা করে মানুষকে হাত ধোয়া নিয়ে সচেতন করা।

হাত ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখাও এই ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য।

লাইফবয় ঘরের সঙ্গে ঘরের বাইরেও হাইজিন বা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। জীবাণু থেকে সুরক্ষিত থাকতে চকবাজারের প্রতিটি গলির প্রতিটি দোকান সেজে উঠেছে লাইফবয় ব্র্যান্ডের ছাতা, অ্যাপ্রন, গ্লাভস, হ্যান্ডওয়াশের মতো ‘হাইজিন ইকুইপমেন্ট’।

ফলে চকবাজারে আসা ক্রেতারা পাচ্ছেন আগের থেকে আরও স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার- দাবি করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

ঈদ ও রমজানের মতো উৎসবের সময় পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই জরুরি। আর এই সময়ে হাত পরিষ্কার রাখাটাও খুব দরকারী। তাই লাইফবয় ‘ইফতারের আগে লাইফবয় টাইম’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জনসাধারণকে ইফতার ও অন্যান্য খাবার খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সচেতন করছে। এর মাধ্যমে উৎসবের সময় পরিবারগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত ও সুন্দর অভিজ্ঞতা দেওয়াই লাইফবয়ের মূল লক্ষ্য।

চকবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা এই অনন্য উদ্যোগের জন্য লাইফবয় এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। লাইফবয় আশাবাদী শুধু রমজান নয়, সারা বছরই এই হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় থাকবে।

জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখার এই প্রয়াস লাইফবয় হ্যান্ডওয়াশ-এর পক্ষ থেকে নতুন কিছু নয়। ২০২৩ সালে লাইফবয় একটি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশের নানান প্রান্তের স্কুলগুলোতে প্রায় ১০ লাখ ছাত্রছাত্রীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করে।

শুধু তাই নয়, ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি মানুষের মধ্যে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছে। ব্র্যান্ডটি নিজ উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে যুক্ত থেকেও কাজ করছে। এর আওতায় ৫ লাখ হ্যান্ডওয়াশ স্যাশে বিতরণ করেছে। দিয়েছে ‘বাইলোভেল পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার’ মেশিন এবং দেশের নানান অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ টাকা সমমূল্যের ডাক্তারি সেবা।

ক্যাম্পেইনের আয়োজকরা মনে করেন, দেশের সকল মানুষ হাত ধোয়া এবং জীবাণু সম্পর্কে সচেতন হলেই এই ক্যাম্পেইন সফল হবে। এর সঙ্গে জীবাণুর মাধ্যমে ছড়ানো রোগব্যাধির সংক্রমণ কমে আসবে বলে তাদের ধারণা।

ইউনিলিভার ব্র্যান্ড টিম রমজানের এই ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি জীবাণু সম্পর্কে সচেতনতা গড়তে বছর জুড়েই আরও নতুন নতুন ক্যাম্পেইন নিয়ে আসবে বলে জানান বিজ্ঞপ্তিতে। দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাই হবে এসব ক্যাম্পেইনের মূল লক্ষ্য।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক য ম প ইন র হ য ন ডওয় শ ইফত র র চকব জ র রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ