বরিশালে সেনাসদস্যকে অপহরণ করে মারধর, হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিবসহ তিনজন গ্রেপ্তার
Published: 25th, March 2025 GMT
বরিশালে বালুমহালের দরপত্র নিয়ে এক সেনাসদস্যকে অপহরণ করে মারধর ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মনির হোসেনকে অপর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার রাতে অভিযোগ পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করেন। মঙ্গলবার তাঁদের কোতোয়ালি মডেল থানায় সোপর্দ করার পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার (ওসি) মো.
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মনির হোসেন, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমানে যুবদল কর্মী নুর হোসেন ওরফে সুজন এবং হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. ইমরান খন্দকার।
মামলার বাদী আবদুল মতিন কাজী চাঁদপুরের উত্তর মতলব থানার মহনপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজী আবুল হোসেনের ছেলে। অপহরণের শিকার সেনাসদস্য তাঁর ভাতিজা মো. জাফর। তিনি রাজশাহী সেনানিবাসে ল্যান্স করপোরাল হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন।
মামলার আসামিরা হলেন বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজ আলম ওরফে মিঠু (৩৬), সাবেক সহসভাপতি নূর হোসেন (৩৫), মো. ইমরান খন্দকার (৩৫), হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মো. মনির হোসেন (৪২), মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ রাঢ়ী (৫২), রুবেল (৫১), বেলায়েত (৩২), মো. জাহিদ (৪৫), মহানগর মহিলা দলনেত্রী ফরিদা বেগম (৪৫), স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলার সদস্যসচিব কামরুল ইসলাম (৫০), মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান ওরফে মঞ্জু (৪৮) ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো. নিজাম।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী আবদুল মতিন কাজী, তাঁর ভাতিজা জাফর এবং তাঁদের সহযোগী বরিশাল নগরের বিমানবন্দর থানার গগনপাড়া এলাকার আবদুল বাছেদ হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর বালুমহালের ইজারার দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য সোমবার বেলা একটার দিকে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা দরপত্র জমা দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এলে বেশ কয়েকজন তাঁদের ঘিরে ধরেন। এ সময় কেন তাঁরা দরপত্র জমা দিয়েছেন, তা জানতে চান। একপর্যায়ে মতিন, বাছেদ ও জাফরকে তাঁরা মারধর শুরু করেন। তখন প্রাণভয়ে দুজন দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারলেও সেনাসদস্য জাফরকে ধরে নিয়ে যান হামলাকারীরা। পরে আবদুল মতিন বিষয়টি বরিশাল সেনা ক্যাম্পে অবহিত করেন।
মামলা সূত্রে আরও জানা গেছে, সেনাসদস্য জাফরকে ধরে নিয়ে নগরের নদীবন্দর এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে আটকে রাখা হয়। এ সময় আটক সেনাসদস্য নিজেকে ল্যান্স করপোরাল পরিচয় দিলে অপহরণকারীরা নিজেদেরও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে জাফরের হাত ও পা বেঁধে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এ সময় জাফরের সঙ্গে থাকা সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্রটি নিয়ে ভেঙে ফেলেন। পরে তাঁর কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন, একটি আইফোন, ১৫ হাজার টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিনিয়ে নেন অপহরণকারীরা। জাফরকে রেখে অপহরণকারীরা বাইরে গেলে জাফর সেখান থেকে বের হন।
সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মনির হোসেন, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নুর হোসেন ও হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. ইমরান খন্দকারকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই হোটেল থেকে আটক করেন।
মামলার ২ নম্বর সাক্ষী ও হামলার শিকার আবুল বাসেদ জানান, ১৩ কোটি টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেঘনার বালুমহাল তাঁরা ইজারা পেয়েছেন।
মামলার অন্যতম আসামি মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদা বেগম বলেন, মেঘনার বালুমহালের বিপরীতে ৩৩টি দরপত্র বিক্রি হয়েছিল। বাসেদ ও আবদুল মতিনের ভাড়াটে গুন্ডাদের বাধায় অন্যরা দরপত্র জমা দিতে পারেননি। আবদুল মতিনসহ তাঁর সহযোগীরা দুটি দরপত্র জমা দিয়ে ওই বালুমহাল বাগিয়ে নিয়েছেন। ফরিদা অভিযোগ করেন, সোমবার ভোরে একদল যুবক তাঁদের চাঁদমারীর বাসায় হানা দিয়ে তাঁর দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
দরপত্র ক্রয়কারী মফিজুল ইসলাম নামে আরেকজন অভিযোগ করেন, তিনি সাড়ে ৩ কোটি টাকার পে-অর্ডার কেটেও দরপত্র জমা দিতে পারেননি। মেঘনার বালুমহাল পুনঃ দরপত্রের জন্য আবেদন করবেন তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন র হ স ন বর শ ল জ ল স ন সদস য স মব র দল র স ম রধর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
লিবিয়ায় তিন বাংলাদেশিকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি
লিবিয়ায় মুক্তিপণের দাবিতে তিন বাংলাদেশি নাগরিককে অপহরণের পর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। তাদের দাবি, অপহরণকারীরা নির্যাতনের ভিডিও ও অডিও পাঠিয়ে একটি ব্যাংক নম্বরের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে। এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে স্বজনদের। ইতিমধ্যে মুক্তিপণের কিছু অর্থ পাঠিয়েছে দুটি পরিবার।
ওই তিন প্রবাসী হলেন আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের গুডুম্বা গ্রামের গোলাম রব্বানী, একই ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া দক্ষিণ মণ্ডলপাড়া গ্রামের আবদুল করিম ও সোনামুখী ইউনিয়নের রামশালা গ্রামের রুহুল আমিন। প্রায় ১৫ দিন আগে গোলাম রব্বানীকে এবং ৬-৭ দিন আগে অন্য দুজনকে অপহরণ করা হয়। রুহুল আমিন ও আবদুল করিম সম্পর্কে শ্যালক-ভগ্নিপতি।
গোলাম রব্বানীর স্ত্রী মোছা. জুথি আক্তার জানান, তাঁর স্বামী ২০১৫ সালে লিবিয়ায় যান এবং ২০২৩ সালে ছুটি কাটিয়ে আবার সেখানে ঠাঁই নেন। জিলথান শহরে রঙের কাজের কথা বলে স্থানীয় একটি বাঙালি মাফিয়া চক্র তাঁকে অপহরণ করে। গত ৩০ নভেম্বর রব্বানীর ফোন থেকেই তাঁকে কল দিয়ে অপহরণের কথা জানানো হয় এবং ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখার একটি হিসাব নম্বরে এই টাকা জমা দিতে বলা হয়। এর পরপরই নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। এখন অপহরণকারীরা ১৫ লাখ টাকা চাইছে বলে জানান তিনি।
জুথি আক্তারের ভাষ্য, ‘ওই টাকা না দিলে তারা (অপহরণকারীরা) আমার স্বামীকে হত্যা করবে, বলে হুমকি দিচ্ছে। স্বামীকে উদ্ধারে প্রবাসী কল্যাণের ওয়েজ অর্নার বোর্ডের সহযোগিতা চেয়ে মহাপরিচালকের কাছে আমি ৮ ডিসেম্বর একটি আবেদন করেছি।’
অপহৃত আবদুল করিমের স্ত্রী তাসলিমা বিবি বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে লিবিয়ায় থাকা তাঁর স্বামী গত বছর প্রায় আট মাস দেশে ছিলেন। প্রায় সাত মাস আগে তিনি আবার লিবিয়ায় ফিরে যান। ৬ ডিসেম্বর রঙের কাজ দেখানোর কথা বলে তাঁকে ডেকে নেওয়া হয়। পরে আটকে রেখে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরিবারের সদস্যরা এরই মধ্যে কিছু টাকা ওই ব্যাংক নম্বরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন।
অপহৃত রুহুল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম বলেন, ঘটনার দিনে স্বামী ফোন করে জানিয়েছিলেন, তিনি কাজ দেখতে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর একটি গাড়ির ছবি পাঠান। পরদিন তাঁর ফোন থেকেই নির্যাতনের অডিও পাঠিয়ে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কষ্ট করে এক লাখ টাকা পাঠিয়েছেন তাঁরা।
আক্কেলপুর থানার এসআই গণেশ চন্দ্র বলেন, গোলাম রব্বানীর স্ত্রী নির্যাতনের ভিডিও ও মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়ে থানায় এসেছিলেন। তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনলিবিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলো ১৭০ জনকে১৮ নভেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনলিবিয়া টু ইতালি: ‘মৃত্যুর পথে’ কেন মরিয়া যাত্রা১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫