বরিশালে বালুমহালের দরপত্র নিয়ে এক সেনাসদস্যকে অপহরণ করে মারধর ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মনির হোসেনকে অপর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল সোমবার রাতে অভিযোগ পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করেন। মঙ্গলবার তাঁদের কোতোয়ালি মডেল থানায় সোপর্দ করার পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার (ওসি) মো.

মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় করা একটি মামলায় ওই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বিকেলে বরিশাল মহানগর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক নুরুল আমিন তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। ওসি আরও বলেন, সেনাসদস্যকে অপহরণ, মারধর ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তাঁর চাচা আবদুল মতিন কাজী বাদী হয়ে একটি অভিযোগ করেছেন।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মনির হোসেন, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমানে যুবদল কর্মী নুর হোসেন ওরফে সুজন এবং হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. ইমরান খন্দকার।

মামলার বাদী আবদুল মতিন কাজী চাঁদপুরের উত্তর মতলব থানার মহনপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজী আবুল হোসেনের ছেলে। অপহরণের শিকার সেনাসদস্য তাঁর ভাতিজা মো. জাফর। তিনি রাজশাহী সেনানিবাসে ল্যান্স করপোরাল হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন।

মামলার আসামিরা হলেন বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজ আলম ওরফে মিঠু (৩৬), সাবেক সহসভাপতি নূর হোসেন (৩৫), মো. ইমরান খন্দকার (৩৫), হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মো. মনির হোসেন (৪২), মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ রাঢ়ী (৫২), রুবেল (৫১), বেলায়েত (৩২), মো. জাহিদ (৪৫), মহানগর মহিলা দলনেত্রী ফরিদা বেগম (৪৫), স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলার সদস্যসচিব কামরুল ইসলাম (৫০), মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান ওরফে মঞ্জু (৪৮) ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো. নিজাম।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী আবদুল মতিন কাজী, তাঁর ভাতিজা জাফর এবং তাঁদের সহযোগী বরিশাল নগরের বিমানবন্দর থানার গগনপাড়া এলাকার আবদুল বাছেদ হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর বালুমহালের ইজারার দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য সোমবার বেলা একটার দিকে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা দরপত্র জমা দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এলে বেশ কয়েকজন তাঁদের ঘিরে ধরেন। এ সময় কেন তাঁরা দরপত্র জমা দিয়েছেন, তা জানতে চান। একপর্যায়ে মতিন, বাছেদ ও জাফরকে তাঁরা মারধর শুরু করেন। তখন প্রাণভয়ে দুজন দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারলেও সেনাসদস্য জাফরকে ধরে নিয়ে যান হামলাকারীরা। পরে আবদুল মতিন বিষয়টি বরিশাল সেনা ক্যাম্পে অবহিত করেন।

মামলা সূত্রে আরও জানা গেছে, সেনাসদস্য জাফরকে ধরে নিয়ে নগরের নদীবন্দর এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে আটকে রাখা হয়। এ সময় আটক সেনাসদস্য নিজেকে ল্যান্স করপোরাল পরিচয় দিলে অপহরণকারীরা নিজেদেরও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে জাফরের হাত ও পা বেঁধে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এ সময় জাফরের সঙ্গে থাকা সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্রটি নিয়ে ভেঙে ফেলেন। পরে তাঁর কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন, একটি আইফোন, ১৫ হাজার টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিনিয়ে নেন অপহরণকারীরা। জাফরকে রেখে অপহরণকারীরা বাইরে গেলে জাফর সেখান থেকে বের হন।

সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মনির হোসেন, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নুর হোসেন ও হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. ইমরান খন্দকারকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই হোটেল থেকে আটক করেন।

মামলার ২ নম্বর সাক্ষী ও হামলার শিকার আবুল বাসেদ জানান, ১৩ কোটি টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেঘনার বালুমহাল তাঁরা ইজারা পেয়েছেন।

মামলার অন্যতম আসামি মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদা বেগম বলেন, মেঘনার বালুমহালের বিপরীতে ৩৩টি দরপত্র বিক্রি হয়েছিল। বাসেদ ও আবদুল মতিনের ভাড়াটে গুন্ডাদের বাধায় অন্যরা দরপত্র জমা দিতে পারেননি। আবদুল মতিনসহ তাঁর সহযোগীরা দুটি দরপত্র জমা দিয়ে ওই বালুমহাল বাগিয়ে নিয়েছেন। ফরিদা অভিযোগ করেন, সোমবার ভোরে একদল যুবক তাঁদের চাঁদমারীর বাসায় হানা দিয়ে তাঁর দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

দরপত্র ক্রয়কারী মফিজুল ইসলাম নামে আরেকজন অভিযোগ করেন, তিনি সাড়ে ৩ কোটি টাকার পে-অর্ডার কেটেও দরপত্র জমা দিতে পারেননি। মেঘনার বালুমহাল পুনঃ দরপত্রের জন্য আবেদন করবেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন র হ স ন বর শ ল জ ল স ন সদস য স মব র দল র স ম রধর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।

ঢাকা/হাসনাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল
  • পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন