রাশিয়ার জ্বালানি সংস্থা গ্যাসপ্রমকে বাংলাদেশের উপকূল ও সমতলে আরো বেশি অসুন্ধান চালানোর আহ্ববান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। 

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের হাইনান প্রদেশের বোয়াও শহরে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনের ফাঁকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই ওভারচুক।

চার দিনের সফরে চীনে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা। 

আরো পড়ুন:

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সড়ক সেতু নির্মাণ করবে রাশিয়া

ইউক্রেন ইস্যুতে সৌদি আরবে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া

বৃহস্পতিবার বোয়াও সম্মেলেনে পার্শ্ব বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস ও আলেক্সেই ওভারচুক দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। যার মধ্যে জ্বালানি অনুসন্ধান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গম ও সার আমদানি এবং রাশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রাশিয়ার বৃহৎ জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রমকে অফশোর ও অনশোরে আরো বেশি অনুসন্ধান কার্যক্রম দেখতে আগ্রহী বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দেখা দেওয়া অনিশ্চয়তা কেটে গেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে অর্থসংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধান হয়েছে এবং বাংলাদেশ ঢাকায় একটি অ্যাকাউন্টে অর্থ পরিশোধ করছে।

তিনি জানান, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র এই বছরের শেষের দিকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারে।

এ সময় আলেক্সেই ওভারচুক বাংলাদেশে আরো বেশি গম ও সার রপ্তানির আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাশিয়া থেকে আরো বেশি গম ও সার আমদানি করবে বাংলাদেশ।

আলেক্সেই ওভারচুক দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “আরো বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাশিয়ায় পড়াশোনা করতে যাক, সেটি আমরা দেখতে চাই।”

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ড.

খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ থেকে ২৯ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল চীনে সরকারি সফরে রয়েছে। বোয়াও সম্মেলনে ২৭ মার্চ পেনিং প্ল্যানারিতে অংশগ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’

৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।

লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।

আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’

এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’

লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’

আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫

জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ