ঘন কুয়াশার কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। আজ রোববার সকালে প্রায় এক ঘণ্টা ফেরি ও লঞ্চ বন্ধ ছিল। এতে ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তবে কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর চলাচল শুরু হওয়ার পর পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরি থাকায় অনেকটা ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা নৌপথ পারাপার হচ্ছেন।

এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানবাহনের কিছুটা চাপ থাকলেও স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে বাস স্টপেজগুলোতে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে সাময়িক জটের সৃষ্টি হলেও দীর্ঘ সময়ের যানজটের সৃষ্টি হয়নি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোরে আকস্মিকভাবে কুয়াশা পড়তে থাকে। একপর্যায়ে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি ও লঞ্চ চলাচলে বিঘ্নিত হয়। এতে সকাল সোয়া ছয়টার দিকে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় পদ্মা নদীর মাঝে এ নৌপথে তিনটি ফেরি নোঙর করে থাকে। পারাপার বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রায় এক ঘণ্টা পর সকাল সোয়া সাতটার দিকে কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে।

বিআইডব্লিউটিএ-এর আরিচা কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা মো.

সেলিম শেখ বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৭টি ফেরি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৬টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৩২টি লঞ্চ দিয়ে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের পারাপার করা হচ্ছে। এর মধ্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২০টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ১২টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন।

আরও পড়ুনগাজীপুরে দুই মহাসড়কে রাতভর যানবাহনের ধীরগতি, সকাল থেকে অনেকটা ফাঁকা১ ঘণ্টা আগে

ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় দূরপাল্লার যানবাহন ও যাত্রীর কিছুটা চাপ রয়েছে। ঢাকার গাবতলী, নবীনগরসহ আশপাশের এলাকা থেকে এসব যানবাহন যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এসব যাত্রীবাহী এসব যানবাহন ফেরিতে উঠে নদী পারাপার হচ্ছে।

এদিকে ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের লোকাল বাসে করে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসছেন ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা। যাত্রীদের অধিকাংশই বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। পাটুরিয়ার পুরোনো ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় লোকাল বাস থেকে নেমে এসব যাত্রী হেঁটে, রিকশায়, ইজিবাইকে করে লঞ্চঘাটে আসছেন। এরপর টিকিট কেটে লঞ্চে উঠে পড়ছেন তাঁরা।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোববার ভোর থেকে ঈদযাত্রায় ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহন কিছুটা বেড়ে যায়। ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি বন্ধ থাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তবে ফেরি চালু হওয়ার পর এই চাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে। ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের কিছুটা চাপ থাকলেও পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরি থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা নৌপথ পারাপার হচ্ছেন।

আরও পড়ুনচিরচেনা রূপে ফিরেছে লঞ্চের ঈদযাত্রা, বরিশাল বন্দর যাত্রীদের পদচারণে মুখর১৯ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘ ট এল ক য় দ লতদ য় এসব য

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট

পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন বহু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও এখনো সচল করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছে, দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে সচল সব ঘাটই (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ভাঙনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট বেশি ঝুঁকিতে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন দেখা দেওয়ায় ফেরিঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনটি ঘাট সচল থাকলেও ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেরিঘাটের দুই কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণকাজের অংশ হিসেবে তিন দিনে প্রায় সাত শ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় বস্তা ফেলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিললে বাকি কাজ করা যাবে।

ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি

ঘাটসংলগ্ন বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়া, বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে নিয়েছে।

ছাত্তার মেম্বার পাড়ার নদীর পাড়ের শেষ বসতি আলতাফ মোল্লার পরিবারের। বসতভিটা রক্ষা করতে না পেরে দুটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে পরিবারটি। আলতাফ মোল্লার স্ত্রী সূর্য বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ছয়বার ভাঙনে ভিটামাটি হারায়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এইবার ভাঙলে সাতবার হইবে। এখন কোথায় দাঁড়াব বলতে পারছি না। ঘর, টিনের চাল, জিনিসপত্র ভেঙে পাশে রাখছি। এখন কোথাও জায়গা হলে চলে যাব।’

স্থানীয় আলতাফ মোল্লা, শাহাদৎ প্রামাণিক ও ময়ান সরদার বলেন, ‘কয়েক দিনে যে হারে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন চললে ফেরিঘাট, বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়াসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট