জ্যাক গ্রিলিশ আমুদে মানুষ। হাসিখুশি, উৎসব ও পানীয় ভালোবাসেন। ফর্মে থাকলে ডিফেন্স-চেরা দৌড়েও খুব পটু। সেই গ্রিলিশ ভেতরে-ভেতরে এতটা আবেগ পুষে রাখেন, তা জানত কে!

সেই আবেগ তাঁর ভাইয়ের জন্য। কিলান গ্রিলিশ। সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম (এসআইডিএস) রোগে ২০০০ সালে মাত্র ৯ মাস বয়সী এই ভাইকে হারান গ্রিলিশ। ভাইয়ের সেই মৃত্যুর শোক এখনো যে তাঁকে কুরে কুরে খায়, সেটা বোঝা গেল গতকাল রাতে প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যানচেস্টার সিটির ২-০ গোলে জয়ের পর।

আরও পড়ুনফ্রি কিকে ‘ফ্লপ’ মেসি, মায়ামির হার১ ঘণ্টা আগে

গত ডিসেম্বরের পর গ্রিলিশকে প্রথমবারের মতো একাদশের হয়ে মাঠে নামান সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। দ্বিতীয় মিনিটেই গোল করে কোচের প্রত্যাশার প্রতিদান দেন ২৯ বছর বয়সী এ উইঙ্গার। গোল উদ্‌যাপন দেখে মনে হয়েছে, গ্রিলিশ বুঝি একাদশে খেলার সুযোগ পাওয়া এবং ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর লিগে নিজের প্রথম গোল উদ্‌যাপন করছেন! দুই হাত ওপরে তুলে আকাশে তাকিয়ে কী বা কাকে যেন স্মরণ করেন গ্রিলিশ।

ম্যাচ শেষে জানা গেল আসল ঘটনা। ২৫ বছর আগে এই দিনেই মারা যান তাঁর ভাই কিলান। স্কাই স্পোর্টসকে গ্রিলিশ বলেছেন, ‘আমার ছোট্ট ভাইটি ২৫ বছর আগে এই দিনে চলে গেছে। পরিবারের জন্য কঠিন একটা দিন। মা–বাবা এখানে (ইতিহাদ স্টেডিয়াম) এখানে আছেন। গোল করা এবং জয়টা তাই বিশেষ কিছু।’

কথাগুলো বলার সময় চোখের পানি আটকাতে পারেননি গ্রিলিশ। পরে নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে ভাইকে স্মরণ করে সিটি তারকা লিখেছেন, ‘এই দিনটা আমার জন্য সব সময়ই বিশেষ। ওটা (গোল) তোমার জন্য কিলান।’ এই ক্যাপশনের পাশাপাশি গোলের পর উদ্‌যাপনের একটি ছবিও পোস্ট করেন গ্রিলিশ।

আরও পড়ুনলিভারপুলকে কি তাহলে আর্সেনালই সবার আগে ‘গার্ড অব অনার’ দেবে১ ঘণ্টা আগে

সিটি কোচ গার্দিওলা জানিয়েছেন, গ্রিলিশের এই বিশেষ দিনের বিষয়ে তিনি জানতেন না। তাঁর ২১ বছর বয়সী বোন হলিও সুস্থ নয়। মস্তিষ্ক ও শারীরিক সমস্যাজনিত রোগে (সেরিব্রাল পালসি) ভুগছেন। ভাইয়ের প্রতি গ্রিলিশের আবেগ নিয়ে গার্দিওলা বলেছেন, ‘জ্যাক অসাধারণ মানুষ। সে অবিশ্বাস্যরকম উদার। আমি এটা জানতাম না এবং ভাবতেও পারছি না তার মা, বাবা ও বোনের জন্য ব্যাপারটি মেনে নেওয়া কত কঠিন। এই দিনটা তাঁরা মনে রেখেছেন, সেটা ভালো। আমি নিশ্চিত, তারা প্রতিদিনই তাকে স্মরণ করেন। তবে গোল করাটা ভালো বিষয়।’

ভাইকে আগেও স্মরণ করেছেন গ্রিলিশ। ২০১৩-১৪ মৌসুমে নটস কাউন্টিতে ধারে খেলার সময় সিনিয়র দলে নিজের প্রথম গোলটি করার পর কিলানকে স্মরণ করেছিলেন গ্রিলিশ। ২০১৮ সালে অ্যাস্টন ভিলার হয়ে বার্মিংহাম সিটির বিপক্ষে জয়েও গোল করে ভাইকে স্মরণ করেন।

কিলানের মৃত্যুতে পাওয়া শোক কতটা গভীর, সে সম্পর্কে আগেই একবার বলেছেন গ্রিলিশের বাবা কেভিন, ‘মাত্র নয় মাস বয়স ছিল তার, দেবদূতের মতো। বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলাম, আমরা সবাই। জ্যাক তখন অনেক ছোট। কিন্তু সে এখনো তাকে মনে রেখেছে নিজের সব অর্জনের সঙ্গে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই দ ন গ ল কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’

৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।

লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।

আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’

এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’

লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’

আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫

জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ