দিগন্তজোড়া পেঁয়াজের ক্ষেত। এক বিঘা, দুই বিঘা নয়– এ বছর ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৯০ ভাগ ফসল তোলা হয়েছে। কিষানিরা বাড়ির উঠানে সেই পেঁয়াজের অগ্রভাগ কাটছেন। কেউ বস্তাবন্দি করছেন। অনেকেই মাচায় সংরক্ষণ করছেন পরে বেশি দামে বিক্রির আশায়। পেঁয়াজ নিয়ে সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন; যেন দম ফেলার অবকাশ নেই।
এমন চিত্র দেখা গেছে মুকসুদপুর উপজেলার ভাবরাশুর ইউনিয়নের চারটি গ্রামে।
কালিনগর গ্রামের কিষানি কল্পনা মণ্ডল বলেন, এখানকার জমি বছরের সাত মাস পানির নিচে থাকে। এক সময় বোরো ধান আবাদ করতাম। যে পরিমাণ ধান পাওয়া যেত তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানো সম্ভব হতো না। অভাব-অনটন লেগেই থাকত। পেঁয়াজ আবাদের পর থেকে লাভের মুখ দেখছি। এখন বিল এলাকার ৯০ ভাগ জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে। একই গ্রামের কিষানি শিখা মণ্ডল ৫২ শতক জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১০০ মণ পেঁয়াজ ফলেছে। খরচ বাদে পেঁয়াজ বিক্রি করে লাভ হবে ৮০ হাজার টাকা।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ১৫ বছর আগে উপজেলার বিলের জমিতে শুধু বোরো ধান আবাদ হতো। এ ধানে সারাবছর সংসারের চাহিদা মেটাতে পারতেন না কৃষক। অভাব-অনটন লেগেই থাকত। দুর্দশা ঘোঁচাতে তারা বিলের জমিতে পেঁয়াজ আবাদ শুরু করেন। রোপণ করেন বাদশা কিং সুপার, রানী কিং, লাল তীরসহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ। এ বছর ভাবরাশুর ইউনিয়নের কালিনগর, নলডাঙ্গা, টুঙ্গিবাড়ি ও দীঘরা গ্রামের ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ২০ টন পেঁয়াজ পাওয়া গেছে। সে হিসাবে এ বছর ২ হাজার ৪০০ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। পেঁয়াজ তোলার পর শুরু হবে পাট রোপণ।
কালিনগর গ্রামের কৃষক বিব্রত বিশ্বাস বলেন, প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হবে। পেঁয়াজের পর পাট আবাদ হবে। প্রতি বিঘায় অন্তত ১০-১২ মণ পাট পাওয়া যায়। আমরা এখন পরিবার নিয়ে সুখেই আছি।
ভাবরাশুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজু আহমেদ জানান, প্রতিবছর এখানে পেঁয়াজের আবাদ বাড়ছে। এ বছর এই ইউনিয়নে ১০ হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর পর একই জমিতে পাট রোপণ করা হবে। এক জমিতে দুই ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন সেখ বলেন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।
ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল।
নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।