পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীর মিছিল নিয়ে উত্তেজনা, সতর্ক অবস্থানে পুলিশ
Published: 5th, April 2025 GMT
রামনবমী উপলক্ষে আগামীকাল রোববার বিজেপির ডাকা শোভাযাত্রাকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। এ শোভাযাত্রাকে ঘিরে সেখানে গোলযোগের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। তবে রাজ্য পুলিশ ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনো শোভাযাত্রা বের হতে পারবে না।
গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জানা গেছে, রামনবমীর ২ হাজার ৫২৫টি শোভাযাত্রার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। কলকাতা থেকে ১ হাজার ৬০০ অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। শুধু তা–ই নয়, ২৯ জন শীর্ষ আইপিএস পুলিশ কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে।
পুলিশ আরও নির্দেশ দিয়েছে, রামনবমীর শোভাযাত্রায় মোটরসাইকেল থাকবে না , বাজানো যাবে না ডিজে। শোভাযাত্রায় কোনো অস্ত্র নেওয়া যাবে না। অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা করা যাবে না। আইন ভাঙলেই কড়া শাস্তির ব্যবস্থা থাকছে এদিন।
কাল সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা হওয়ার কথা রয়েছে কাশীপুরে দুটি, বড়বাজার, এন্টালি, ক্রিস্টোফার রোড, খিদিরপুর, পিকনিক গার্ডেন, হাওড়া থেকে একটি করে। পুলিশ আগামীকাল দুপুর থেকে কলকাতায় পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মিছিলের পথে বহুতল বাড়ির ছাদেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কেউ যাতে মিছিলের ওপর ইটপাটকেল বা বোমা ছুড়তে না পারে, সেদিকে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। শোভাযাত্রার ভিডিও করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।
রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা দিয়েছেন, কাল কলকাতাসহ এই রাজ্যজুড়ে রামনবমীর শোভাযাত্রায় অংশ নেবে দেড় কোটি ভক্ত।
কাল যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ উসকানিমূলক পোস্ট দিতে না পারে, সেদিকে নজর রাখছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে খবর রয়েছে, ভুয়া পোস্ট দিয়ে উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি অশান্তি ছড়ানোর কেউ কেউ চেষ্টা করতে পারে, সেদিকে পুলিশকে কড়া নজর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর, আসানসোল, শিলিগুড়িসহ আটটি জায়গায় নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে মোতায়েন করা হয়েছে নারী পুলিশ সদস্য।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাল সবচেয়ে বেশি রামনবমীর শোভাযাত্রা বের হবে পুরুলিয়ায়। শোভাযাত্রার সংখ্যা ২৯২। এরপর বীরভূমে ২২২টি, ইসলামপুরে ১৮০টি, আসানসোলে ১৮৮টি শোভাযাত্রা বের করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
কয়েক বছর ধরে যেসব জেলায় গোলোযোগ হয়েছিল বেশি, সেসব বিবেচনা করে এবার হাওড়া, আসানসোল, বারাকপুর, চন্দননগরের মতো পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বেশি। একই সঙ্গে কোচবিহার, মালদহ, ইসলামপুর, হাওড়া, শিলিগুড়ি, চন্দননগর ও বারাকপুরের বিভিন্ন এলাকায় আজ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন নিয়োজিত আইপিএস কর্মকর্তাদের।
আর কলকাতায় কাল ৬০–এর বেশি রামনবমীর শোভাযাত্রা বের হওয়ার কথা রয়েছে। পুলিশও কলকাতার নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। পর্যবেক্ষণে রাখা থাকবে ড্রোনও।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।