বালতিতে ককটেল নিয়ে ‘খইয়ের মতো’ ফোটানোর ঘটনার পর শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিলাসপুর, যে স্থানটি কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান ককটেল–সন্ত্রাসের শিকার, তা একদিকে যেমন সমাজের নৃশংস চিত্রের প্রতিফলন, তেমনি এটি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সক্ষমতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অঙ্গীকারের সংকটের প্রতীকও বটে।

গত ২৫ বছরে ককটেল বিস্ফোরণের ফলে বিলাসপুরে সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে যে হতাশাজনক বিষয়টি বারবার সামনে আসে, তা হলো প্রশাসন ও রাজনীতিকেরা একে অপরকে দোষারোপ করলেও সহিংসতাকে দমন করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন কেন এই অব্যাহত সহিংসতা দমন করতে পারছে না? বিশেষত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কী ধরনের অক্ষমতা বিদ্যমান, যার কারণে ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটে আসছে?

বিলাসপুরের ককটেল–সন্ত্রাসের বিষয়টি কেবল প্রশাসনিক দুর্বলতার ফল নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে একটি দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, যা সময়ের সঙ্গে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই সহিংসতার কেন্দ্রে আছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী এবং পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জলিল মাদবর—দ্বিধাবিভক্ত দুটি রাজনৈতিক পক্ষ। এই পক্ষগুলো একে অপরের রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। 

প্রশাসনের ‘অতি শিগগির তদন্ত’ ও ‘দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা’ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি, যেগুলো কেবল রাজনৈতিক কাগুজে প্রতিশ্রুতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোনো কার্যকর ফলাফল আনতে পারেনি।

তবে বর্তমানে কেবল প্রশাসনিক পদক্ষেপেই সমাধান সম্ভব নয়। এখন প্রয়োজন ককটেল তৈরির স্থানগুলোর সঠিক শনাক্তকরণ এবং এর পেছনে থাকা শক্তিশালী চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। তবে এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর হবে তখনই, যখন প্রশাসন রাজনৈতিক প্রভাব অতিক্রম করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে।

এটি স্পষ্ট, একমাত্র প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন রাজনীতিকেরা এই সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন।

প্রশাসন, রাজনীতি ও সমাজ—এই তিন স্তম্ভের সমন্বয়ে বিলাসপুরের মতো অস্থির অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট, কার্যকর পদক্ষেপ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যা প্রশাসন, রাজনীতিক ও সমাজের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে সম্ভব হবে। সুষ্ঠু আইনি কাঠামো, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রশাসনিক উদ্যোগের মাধ্যমে যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, কেবল তাতেই স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

যত দিন পর্যন্ত না প্রশাসন ও রাজনীতি একত্রে কাজ করে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসবে, তত দিন পর্যন্ত বিলাসপুরের ককটেল–সন্ত্রাসের মতো ঘটনা অব্যাহত থাকবে এবং আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক পদক ষ প ক র যকর ককট ল

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ