Prothomalo:
2025-06-15@22:48:39 GMT

ইউনূস-মোদি বৈঠকের ফলাফল কী

Published: 9th, April 2025 GMT

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক বা দেখাসাক্ষাৎ আয়োজনের চেষ্টা বাংলাদেশ বেশ কিছুদিন ধরেই করে যাচ্ছিল। ভারতের তরফে সাড়া পাওয়া যায়নি। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় বাংলাদেশের তরফে এমন চেষ্টার উদ্যোগ ছিল। মার্চে মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের আগে মোদির সঙ্গে বৈঠক হোক, সেই চেষ্টাও বাংলাদেশ করেছে, ভারত রা করেনি।

এরপর ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে এমন একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ভারতকে অনুরোধ করে। শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হয়েছে। ভারত বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়েছে, বিষয়টি নিশ্চয়ই তা নয়, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।

গত ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর ভারত যে অবস্থান নিয়েছে, তাতে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে বাংলাদেশের জনগণ তাদের ওপর চেপে বসা দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে যেন বিশাল এক অপরাধ করে ফেলেছে। অথচ ব্যাপারটি হওয়ার কথা ছিল উল্টো। কারণ, ভারত বাংলাদেশে এই স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে সরাসরি প্রভাব খাটিয়েছে।

৯ মাস ধরে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুরাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে না। কারণ, শেখ হাসিনার পতনকে ভারত তাদের পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলের সমস্যা বা ভুল হিসেবে বিবেচনা না করে সম্ভবত পরাজয় হিসেবে দেখছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের এই বোধোদয় হচ্ছে না যে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা একটি দল ও সেই দলের একজন নেতার ওপর ভরসা করা তাদের ঠিক হয়নি। কোনো বড় রাষ্ট্রের এ ধরনের পররাষ্ট্রনীতি বা কৌশল নেওয়ার নজির দেখা যায় না। বাংলাদেশে স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখার নীতি যে তাদের ভুল ছিল, তা ভারত বুঝতে পেরেছে বলেও মনে হয় না।

শেখ হাসিনার পতনের পর তাই তারা উল্টো শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের তারা ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। চিকিৎসার জন্য যারা ভারতে যায়, তাদের জন্যও ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতজুড়ে শুরু হয় বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা। দেশটির অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমও এর অংশ হয়ে পড়ে।

মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের কাছে যে বিষয়গুলো তুলেছেন, তার মধ্যে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া ছাড়া বাকি সব কটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা পুরোনো ইস্যু। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দেওয়ার পরও ভারত সীমান্তে হত্যা বন্ধ করেনি। তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তি তারা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখেছে। গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, তার মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে, বাংলাদেশ খুব স্বাভাবিকভাবেই এর নবায়ন চায়।

ভারতের এই রাষ্ট্রীয় অবস্থান সেখানকার জনতুষ্টিবাদী, জাতীয়তাবাদী বা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পালে হাওয়া দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে এর মধ্য দিয়ে ভারত কূটনৈতিকভাবে কতটা লাভবান হবে, ভবিষ্যৎই তা বলে দেবে।

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এমন আচরণের পরও বাংলাদেশ কেন ইউনূস-মোদি বৈঠকে জন্য এতটা তৎপর ছিল, সেই প্রশ্ন কেউ তুলতে পারেন। ভারতে যেমন বাংলাদেশ বিরোধিতা বেড়েছে, বাংলাদেশেও ভারত বিরোধিতা বেড়েছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ যে সদিচ্ছা দেখাচ্ছে ও উদ্যোগ নিয়েছে, কূটনৈতিক বিবেচনায় তাকে পরিপক্ব অবস্থান হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইউনূস-মোদি বৈঠকের ফলাফল কী? বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় চলে এসেছে, তখন এই দুজন একটি বৈঠকে বসেছেন, এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশের দিক থেকে দেখলে বলতে হয়, এই বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশের আগ্রহ ও চেষ্টার ফল হিসেবে এবং এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের সদিচ্ছার প্রমাণ দেওয়া গেছে।

বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধিতা থাকলেও সরকারের এই উদ্যোগের প্রতি কোনো বিরোধিতা দেখা যায়নি। অথচ ভারতের কূটনৈতিক মহলের কেউ কেউ বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠকে বসা ঠিক হয়নি। দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সাবেক ও অভিজ্ঞ কূটনীতিককে উদ্ধৃত করেছে। একজন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মোদির বৈঠকটি ছিল খারাপ সিদ্ধান্ত।

ইউনূস-মোদি বৈঠকের কিছু দিক আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জেনেছি। এখানেও দুই দেশের সংবাদমাধ্যমের খবরের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দেখা গেছে। সবকিছু মিলিয়ে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস কিছু প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদিও ভারতের পক্ষ থেকে কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। এখানে নতুন কোনো ইস্যু নেই, কিন্তু কোন বিষয়গুলো তাঁরা তুলবেন, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল।

মুহাম্মদ ইউনূস ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন, গঙ্গার পানি ভাগাভাগি চুক্তির নবায়ন ও তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলেছেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি ভবিষ্যতে একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের কাছে যে বিষয়গুলো তুলেছেন, তার মধ্যে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া ছাড়া বাকি সব কটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা পুরোনো ইস্যু। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দেওয়ার পরও ভারত সীমান্তে হত্যা বন্ধ করেনি। তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তি তারা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখেছে। গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, তার মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে, বাংলাদেশ খুব স্বাভাবিকভাবেই এর নবায়ন চায়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন স ম দ ক টন ত ক অবস থ ন ইউন স র দ ইউন স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক দেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক অচলাবস্থা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করবে বলে আশা করছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। আজ শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।

লন্ডনে দুই নেতার বৈঠকের বিস্তারিত সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করারও আহ্বান জানিয়েছেন সাইফুল হক।

সরকারের এই উদ্যোগ বিলম্বিত বোধদয়ের ফল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সাইফুল হক বলেন, আরও আগে সরকারের এই বোধদয় হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিরোধ এড়িয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ মৌলিক কাজে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া যেত।

সব অংশীজনকে আস্থায় নিয়ে সরকারকে কাজ করার আহ্বান জানান সাইফুল হক। তিনি বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের রাস্তা সুগম হলো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তি অর্জনে তাঁর দল জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আগামীতে আপসহীন ধারায় সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক। সমাবেশে সংহতি জানান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহবায়ক শেখ আবদুর নূর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম মীর, রেজাউল আলম, ফিরোজ আলী, কেন্দ্রীয় সংগঠক আইয়ুব আলী, বাবর চৌধুরী, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা মো. সালাউদ্দীন, মিজারুল রহমান ডালিম, আরিফুল ইসলামসহ পার্টির ঢাকা মহানগরের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান সাবেক শাহের পুত্রের
  • আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন
  • আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন
  • আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা ইশরাকের
  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
  • জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
  • সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ