Prothomalo:
2025-12-13@19:09:02 GMT

ইউনূস-মোদি বৈঠকের ফলাফল কী

Published: 9th, April 2025 GMT

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক বা দেখাসাক্ষাৎ আয়োজনের চেষ্টা বাংলাদেশ বেশ কিছুদিন ধরেই করে যাচ্ছিল। ভারতের তরফে সাড়া পাওয়া যায়নি। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় বাংলাদেশের তরফে এমন চেষ্টার উদ্যোগ ছিল। মার্চে মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের আগে মোদির সঙ্গে বৈঠক হোক, সেই চেষ্টাও বাংলাদেশ করেছে, ভারত রা করেনি।

এরপর ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে এমন একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ভারতকে অনুরোধ করে। শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হয়েছে। ভারত বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়েছে, বিষয়টি নিশ্চয়ই তা নয়, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।

গত ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর ভারত যে অবস্থান নিয়েছে, তাতে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে বাংলাদেশের জনগণ তাদের ওপর চেপে বসা দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে যেন বিশাল এক অপরাধ করে ফেলেছে। অথচ ব্যাপারটি হওয়ার কথা ছিল উল্টো। কারণ, ভারত বাংলাদেশে এই স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে সরাসরি প্রভাব খাটিয়েছে।

৯ মাস ধরে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুরাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে না। কারণ, শেখ হাসিনার পতনকে ভারত তাদের পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলের সমস্যা বা ভুল হিসেবে বিবেচনা না করে সম্ভবত পরাজয় হিসেবে দেখছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের এই বোধোদয় হচ্ছে না যে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা একটি দল ও সেই দলের একজন নেতার ওপর ভরসা করা তাদের ঠিক হয়নি। কোনো বড় রাষ্ট্রের এ ধরনের পররাষ্ট্রনীতি বা কৌশল নেওয়ার নজির দেখা যায় না। বাংলাদেশে স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখার নীতি যে তাদের ভুল ছিল, তা ভারত বুঝতে পেরেছে বলেও মনে হয় না।

শেখ হাসিনার পতনের পর তাই তারা উল্টো শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের তারা ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। চিকিৎসার জন্য যারা ভারতে যায়, তাদের জন্যও ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতজুড়ে শুরু হয় বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা। দেশটির অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমও এর অংশ হয়ে পড়ে।

মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের কাছে যে বিষয়গুলো তুলেছেন, তার মধ্যে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া ছাড়া বাকি সব কটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা পুরোনো ইস্যু। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দেওয়ার পরও ভারত সীমান্তে হত্যা বন্ধ করেনি। তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তি তারা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখেছে। গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, তার মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে, বাংলাদেশ খুব স্বাভাবিকভাবেই এর নবায়ন চায়।

ভারতের এই রাষ্ট্রীয় অবস্থান সেখানকার জনতুষ্টিবাদী, জাতীয়তাবাদী বা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পালে হাওয়া দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে এর মধ্য দিয়ে ভারত কূটনৈতিকভাবে কতটা লাভবান হবে, ভবিষ্যৎই তা বলে দেবে।

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এমন আচরণের পরও বাংলাদেশ কেন ইউনূস-মোদি বৈঠকে জন্য এতটা তৎপর ছিল, সেই প্রশ্ন কেউ তুলতে পারেন। ভারতে যেমন বাংলাদেশ বিরোধিতা বেড়েছে, বাংলাদেশেও ভারত বিরোধিতা বেড়েছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ যে সদিচ্ছা দেখাচ্ছে ও উদ্যোগ নিয়েছে, কূটনৈতিক বিবেচনায় তাকে পরিপক্ব অবস্থান হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইউনূস-মোদি বৈঠকের ফলাফল কী? বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় চলে এসেছে, তখন এই দুজন একটি বৈঠকে বসেছেন, এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশের দিক থেকে দেখলে বলতে হয়, এই বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশের আগ্রহ ও চেষ্টার ফল হিসেবে এবং এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের সদিচ্ছার প্রমাণ দেওয়া গেছে।

বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধিতা থাকলেও সরকারের এই উদ্যোগের প্রতি কোনো বিরোধিতা দেখা যায়নি। অথচ ভারতের কূটনৈতিক মহলের কেউ কেউ বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠকে বসা ঠিক হয়নি। দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সাবেক ও অভিজ্ঞ কূটনীতিককে উদ্ধৃত করেছে। একজন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মোদির বৈঠকটি ছিল খারাপ সিদ্ধান্ত।

ইউনূস-মোদি বৈঠকের কিছু দিক আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জেনেছি। এখানেও দুই দেশের সংবাদমাধ্যমের খবরের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দেখা গেছে। সবকিছু মিলিয়ে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস কিছু প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদিও ভারতের পক্ষ থেকে কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। এখানে নতুন কোনো ইস্যু নেই, কিন্তু কোন বিষয়গুলো তাঁরা তুলবেন, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল।

মুহাম্মদ ইউনূস ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন, গঙ্গার পানি ভাগাভাগি চুক্তির নবায়ন ও তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলেছেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি ভবিষ্যতে একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের কাছে যে বিষয়গুলো তুলেছেন, তার মধ্যে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া ছাড়া বাকি সব কটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা পুরোনো ইস্যু। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দেওয়ার পরও ভারত সীমান্তে হত্যা বন্ধ করেনি। তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তি তারা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখেছে। গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, তার মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে, বাংলাদেশ খুব স্বাভাবিকভাবেই এর নবায়ন চায়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন স ম দ ক টন ত ক অবস থ ন ইউন স র দ ইউন স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছি’

পাবনার নবাগত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ বলেছেন, “পুলিশ যে সুশৃঙ্খল ও সুশিক্ষিত সেটা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে সেটা প্রকাশ পাবে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক অবস্থানে থাকবে। যারা স্বপ্ন দেখছেন ভোট দেবেন, আমরা সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছি। যে কোন ধরনের নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সর্বদা সজাগ আছি এবং থাকব।” 

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পাবনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার। 

ক্লাবের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইয়াদ আলী মৃধা পাভেলের সঞ্চালনায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য দেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ প্রফেসর শিবজিত নাগ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) মশিউর রহমান মন্ডল, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান ও সাবেক সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন। 

মতবিনিময় সভায় নবাগত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, “সদাচরণ, আইনের শক্ত প্রয়োগ আমার মূল লক্ষ্য। সামনের দিনগুলোতে পুলিশ বাহিনীর কাজ দেখতে পাবেন। আইনপরিপন্থী চ্যালেঞ্জগুলো অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা বর্তমান পুলিশের বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এজন্য জনগণ, জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন তথা সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতাও লাগবে।” 

এসময় কিশোর গ্যাং, মাদক, ছিনতাই, সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী নানা অপরাধ ও কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। 

মতবিনিময় সভায় বক্তারা পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “দল দাস হবেন না। পূর্ববর্তী শিক্ষা নিয়ে পুলিশ বাহিনীকে সামনে আগাতে হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আপনাদের উপর অর্পিত আইন শৃঙ্খলা দমন ও জনগণের জানমাল হেফাজতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।”

মতবিনিময় সভায় স্থানীয় দৈনিকসহ জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/শাহীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রথম রাজনৈতিক সাক্ষাৎকার
  • খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এটিএম কামালের দোয়া মাহফিলে মাসুদুজ্জামান   
  • ভোটের মাঠে জোটের ভিড়ে জনপ্রত্যাশা কোথায় গেল 
  • পার্বত্য ৩ আসনে প্রার্থী না দিতে জাতীয় দলগুলোর প্রতি আহ্বান ইউপিড
  • ‘আমরা ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছি’
  • শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান ইসলামী ফ্রন্টের
  • তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • ‘নির্বাচন সহজ হবে না, পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামতে হবে’
  • আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে: নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল
  • বাবুগঞ্জে এবি পার্টির ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল