বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “নির্বাচন যতটা সহজ ভাবছেন, ততটা সহজ নয়।” দেশের সামনে কঠিন নির্বাচন ও কঠিন সময়—এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘দেশকে পরিবর্তন করতে হলে আবেগ নয়, প্রয়োজন সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ, বাস্তবধর্মী চিন্তা এবং জনগণের প্রত্যাশা গভীরভাবে বোঝার ক্ষমতা।’’

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালী যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ কর্মসূচিতে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

আরো পড়ুন:

‘খালেদা জিয়ার সুস্থতার ওপর দেশের অনেক কিছু নির্ভর করে’ 

মিরসরাইয়ে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে যুবক নিহত

তারেক রহমান বলেন, “আমাদের দেশকে ভালো করতে হলে দেশ নিয়ে ভাবতে হবে। কাকে সাইজ করবো—এই চিন্তায় থাকলে দেশ এগোবে না। দেশের উন্নতির জন্য জনগণের কথা বুঝতে হবে, তাদের কাছে যেতে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘এখনও যদি দলীয় নেতাকর্মীরা দায়িত্বশীল ও সিরিয়াস না হন, তাহলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। মানুষ আমাদের সুযোগ দেবে—কিন্তু আমাদের নিজেদের দায়িত্ব বুঝতে হবে, পরিকল্পনা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।”

বক্তব্যে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা স্বপ্ন দেখাতে চাই না; যা বলবো, তা বাস্তবায়ন করবো। আবোলতাবোল জনপ্রিয়তার কথা বলে লাভ নেই, বাস্তবতা তুলে ধরতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক শক্তি দেশের প্রকৃত মৌলিক ইস্যুগুলো নিয়ে কথা বলছে না।

তিনি বলেন, “কৃষক, নারী, শিশু, আবহাওয়া, কর্মসংস্থান—এসব নিয়ে কথা হচ্ছে কোথায়? মানুষের মৌলিক অধিকার কোথায়? এসব নিয়ে কথা বলছে কে? এই মুহূর্তে বিএনপি ছাড়া কেউই জনগণের বাস্তব সমস্যা নিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না। অনেকে খুন হয়েছেন, গুম হয়েছেন। আমার নিজের কষ্টের কথা বলছি না। আমার মা অসুস্থ। আমি যদি নিজের কষ্ট নিয়ে কথা বলি, তাহলে সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা কারা বলবে? তাদের  কষ্টের কথা কারা শুনবে?’’

বিগত সরকারের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “স্বৈরাচার দেশের অর্থনৈতিক, সমাজ ব্যবস্থা, কৃষি খাতে ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। দেশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থার মতো করে দিয়েছে। আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশকে পুনর্গঠন করবো। আমাদের পরিকল্পনা দেশের জন্য, মানুষের জন্য। জনগণের সামনে এগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলেই ধানের শীষ জয়ী হবে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “একটি দল মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আপনাদের মিথ্যা বলার দরকার নেই। সত্য তুলে ধরুন, বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরুন।”

তিনি বলেন, “সবার ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার দরকার নেই। কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাজ করতে হবে। দক্ষ যুবসমাজই দেশকে এগিয়ে নেবে। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া একা নন—আমরা সবাই মিলে জাতীয়তাবাদী দল। ১/১১ মোকাবিলা করতে পেরেছেন, স্বৈরাচার মোকাবিলা করতে পেরেছেন—এখন কেন পারবেন না? পারবেন, এবং এই নির্বাচনে পারতেই হবে।”

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, “আপনার লড়াইয়ের সামনে থাকবে ধানের শীষ। মানুষের কাছে যান, তাদের আস্থা অর্জন করুন, দেশ গড়ার পরিকল্পনা তুলে ধরুন।”

‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। 

ঢাকা/আলী//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ত র ক রহম ন ব এনপ র জনগণ র আম দ র ন ত কর রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি আবার দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দুর্নীতি লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দম বন্ধ করে ফেলেছে। বহু বছর অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসই প্রমাণ করে, যখন সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন একসঙ্গে আসে, তখন পরিবর্তন অসম্ভব নয়। জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়, বিএনপি আবার সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।

আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন। তিনি তাঁর পোস্টে দুর্নীতির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিএনপি কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয় নিয়েও লেখেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘দুর্নীতি কীভাবে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, তা বুঝতে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া একজন গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে কথা বললেই বুঝবেন। মাসের পর মাস ধরে একটি সাধারণ সরকারি সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষকের দিকে তাকান। হাসপাতালে গিয়ে এক তরুণের পরিবার কীভাবে ভোগান্তিতে পড়ে, সেটা শুনুন। অথবা ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া উদ্যোক্তাদের ভোগান্তি দেখুন।’

দুর্নীতি লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দম বন্ধ করে ফেলেছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, খাবারের দাম কেন বাড়ে, স্কুলে ভালো পড়াশোনা কেন মেলে না, রাস্তায় কেন নিরাপত্তা নেই—সবকিছুর পেছনে সেই একই কারণ, দুর্নীতি।

বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন নয় বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা বহু যুগের আলোচনার বিষয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আমাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, আর মনে করিয়ে দেয় সেই সময়টাও, যখন বাংলাদেশ সত্যিকারের অগ্রগতি করেছিল। আর সেই সময়টা এসেছে মূলত বিএনপির আমলে।’

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো, পরিচ্ছন্ন সরকারি সেবা আর অর্থনীতিকে মুক্ত করার কাজে হাত দিয়েছিলেন, যা অনিয়ম-ক্ষমতার অপব্যবহার কমিয়ে দিয়েছিল। তারপর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আধুনিকায়ন শুরু হয়। নতুন ক্রয় নীতিমালা, কঠোর আর্থিক আইন, শক্তিশালী অডিট ব্যবস্থা, আর স্বচ্ছ নজরদারি কার্যকর করা হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল ২০০৪ সালে দুদক গঠন। এটি এমন এক স্বাধীন কমিশন, যেখানে সরকার চাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্বব্যাংক, এডিবি—সবাই বলেছিল, এটি বাংলাদেশের জবাবদিহির বড় অগ্রগতি।

তারেক রহমান বলেন, টিআইবির জরিপেও দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষ নিজেরাই বলেছে, দুর্নীতি কমেছে। এটা কোনো গল্প নয়, এটা তখনকার সংস্কারের প্রমাণ।

তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বাজেট নিয়ন্ত্রণ, অডিট, ব্যাংকিং ও মানি লন্ডারিংবিরোধী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ও নিয়মের মধ্যে সরকারি স্বচ্ছ ক্রয়নীতি চালু করে, যা পরবর্তী সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় স্বচ্ছতার আইনের ভিত্তি তৈরি করে। টেলিকম, মিডিয়া, বিমান পরিবহন খাতে উন্মুক্ত বাজার গড়ে তোলে প্রতিযোগিতা বাড়ানো হয়। ফলে দুর্নীতি কমে, সাধারণ মানুষের সুযোগ বাড়ে। এ ছাড়া প্রশাসনের জটিলতা কমিয়ে এবং জবাবদিহি বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে এমন কিছু বড় পরিবর্তন ঘটেছে, যার জন্য তাঁর দল গর্ব করতে পারে। দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক রেকর্ড একমাত্র বিএনপিরই আছে।

আগামী দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও শক্তভাবে চালাতে বিএনপির কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন তারেক রহমান। সেগুলো হলো—

১. প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা: আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি সেবা; কেউই যেন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে না থাকে।

২. পুরোপুরি স্বচ্ছতা: উন্মুক্ত দরপত্র, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল–টাইম অডিট ও শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন।

৩. বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার: পেশাদার পুলিশিং, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ।

৪. ই-গভর্ন্যান্স: লাইসেন্স, জমি, পেমেন্ট—সব অনলাইনে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো (বিশ্বমান অনুযায়ী ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ দুর্নীতি কমতে পারে)।

৫. হুইসলব্লোয়ার সুরক্ষা: অনিয়ম ফাঁস করতে যারা সাহস দেখায়, তাদের নিরাপত্তা প্রদান।

৬. নৈতিক শিক্ষা: স্কুল-কলেজ থেকেই সততার চর্চা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা।

৭. শক্তিশালী আর্থিক নজরদারি: ডিজিটাল ব্যয় ট্র্যাকিং ও স্বাধীন অডিট এবং সংসদের কঠোর তদারকি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে: নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল
  • বাবুগঞ্জে এবি পার্টির ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে: গয়েশ্বর
  • যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান 
  • মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি: তারেক রহমান
  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসংহতি আন্দোলনের ১১ দফা প্রস্তাব
  • আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই: হাসনাত
  • জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি আবার দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত: তারেক রহমান