কুষ্টিয়া বিএনপিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে আবার বিক্ষোভের ঘোষণা পদবঞ্চিতের
Published: 12th, April 2025 GMT
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা আগামী বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন।
গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তখন তিন মাসের জন্য ওই কমিটি গঠন করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমান কমিটি দ্রুত বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন পদবঞ্চিত ব্যক্তিরা।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামিমুল হাসান বলেন, ‘বর্তমান কুতুব-জাকির কমিটিকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি বললে ভুল হবে না। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। আর চলতে পারে না, পারে না, পারে না। কুষ্টিয়া বিএনপির রাজনীতিকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। ভঙ্গুর কমিটি বাতিল করতে হবে।’ তিনি ‘বিতর্কিত’ কমিটি ভেঙে যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাদের নিয়ে দ্রুত নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পদবঞ্চিত নেতারা অভিযোগ করেন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কমিটি করা হয়েছে। বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর সার্চ কমিটি গঠনসহ যত কমিটি গঠন করেছে, সব কমিটিতে ত্যাগী বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের নেওয়া হয়েছে। এসব তাদের নিজেদের ‘পকেট কমিটি’।
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘কুতুব-জাকিরের কমিটি ব্যর্থ কমিটি। এই কমিটির দ্বারা কুষ্টিয়া বিএনপির এক বিন্দু সাংগঠনিক কিছু হয়নি। বরং কুষ্টিয়ায় চারটি আসনে যে শক্ত অবস্থান ছিল তা ভেঙে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে চারটি আসনই হারাতে হবে।’
জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মেজবাউর রহমান বলেন, কমিটি বাতিলের দাবিতে বারবার আন্দোলন করা হচ্ছে। অভিযোগ তুলে ধরা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও জানানো হচ্ছে।
দাবি আদায়ে আগামী বুধবার বেলা ১১টায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বশিরুল আলম (চাঁদ)। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রঘোষিত এক অনুষ্ঠান কুষ্টিয়ায় হয়। সেই অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে সবাই এক কাতারে ছিলাম। বলা হয়েছিল, অনুষ্ঠানের পর পদবঞ্চিতদের পদ দেওয়া হবে। কিন্তু আর যোগাযোগ করা হচ্ছে না।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তার আগে ২০১২ সালে গঠিত কমিটিতে এই দুজন একই পদে ছিলেন। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১২ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি বাতিল করা হয়। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না। কমিটি বাতিলের দাবিতে গত ৬ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। একই দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর শহরের এনএস রোডে দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এ ছাড়া ৮ জানুয়ারি দাবি আদায়ে তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক পদবঞ চ ত ন ত ন কম ট ক কম ট গঠন র গঠন ক আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।