মধ্যপ্রাচ্যে কেন মার্কিন ঘাঁটি, কোন কোন দেশে রয়েছে এসব ঘাঁটি
Published: 12th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়েছেন, ‘আমি ইরানের হাতে পারমাণবিক বোমা চাই না। পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখার জন্য তাদের চুক্তি করতে হবে। তারা যদি চুক্তি না করে, তাহলে আমরা ইরানে বোমা ফেলব। আমরা এমনভাবে বোমা হামলা চালাব, যা তারা আগে কখনো দেখেনি।’
এমন এক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আজ শনিবার ওমানের রাজধানী মাসকাটে বৈঠক শুরু করেছেন। এই বৈঠক ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন চুক্তির আলাপ শুরুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমাদের আশঙ্কা, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, অন্য ১০টি দেশের মতো তারাও শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনা করতে চায়।
ইরানে হামলা চালানোর ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুমকি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো ইরানে হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু অঞ্চলটির অনেক দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের কোন কোন দেশে কত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আছে, তাদের সক্ষমতা কেমন, তা সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি
যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করছে। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে কাতারে। এটির নাম আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঘাঁটিতে বিপুলসংখ্যক মার্কিন সেনা রয়েছেন।
অঞ্চলটির আরও যেসব দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, সেগুলো হলো বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
এসব ঘাঁটিতে সাধারণ সময়ে প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন সেনা থাকেন। কিন্তু বড় কোনো অভিযানের সময়ে তা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে হামলা শুরুর পর ২০১১ সাল নাগাদ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে মার্কিন সেনাসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল এক লাখের বেশি। আর ২০০৩ সালে ইরাক হামলার পর ২০০৭ সালের মধ্যে এসব ঘাঁটিতে মার্কিন সেনাসংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি।
উল্লিখিত দেশগুলোর বাইরে সিরিয়ার ছোট ছোট দু–একটি ঘাঁটিতে প্রায় দুই হাজার মার্কিন সেনা রয়েছেন, যাঁদের অধিকাংশই উত্তর–পূর্ব সিরিয়ায় অবস্থান করছেন।
ইরাকে রয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা। যাঁদের একটি বড় অংশ থাকেন রাজধানী বাগদাদের তৃতীয় ইউএস ইউনিয়ন বা ফরোয়ার্ড অপারেটিং বেজে (এফওবি)।
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের শক্তি বৃদ্ধি
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সদর দপ্তর পেন্টাগন সম্প্রতি বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ট্রাম্প গত কয়েক সপ্তাহে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গত মার্চে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র–ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটিতে অতিরিক্ত ছয়টি বি–২ বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে পেন্টাগন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে না দিলে এখান থেকে ইরানে দ্রুত হামলা চালাতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, ‘আমরা যে দিয়েগো গার্সিয়ায় বোমারু বিমান মোতায়েন করেছি, সেটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে, সেটা ইরানের ওপর নির্ভর করছে।’
পেন্টাগন জানিয়েছে, তারা দিয়েগো গার্সিয়ায় নিজেদের সামরিক ঘাঁটিতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাটালিয়ন প্যাট্রিয়টসহ অন্যান্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠিয়েছে। প্রয়োজনীয় অন্যান্য উড়োজাহাজও সেখানে পাঠানো হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির পাশাপাশি বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি উড়োজাহাজবাহী যুদ্ধবিমান রয়েছে। প্রতিটিতে রয়েছে কয়েক হাজার সেনা ও বিপুলসংখ্যক যুদ্ধবিমান।
আরও পড়ুনপারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ন্যায্য ও সম্মানজনক চুক্তি চায় ইরান৪ ঘণ্টা আগেমধ্যপ্রাচ্যে যে কারণে মার্কিন সেনা
সুনির্দিষ্ট কোনো কারণে নয়; বরং ভিন্ন একাধিক কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সেনা মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরাকের মতো কিছু দেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেখানে অবস্থানকারী মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে ইরানের সমর্থনপুষ্ট সেনারা হামলা চালিয়েছেন। ফলে তাঁদের ওপরও পাল্টা হামলা চালিয়েছেন মার্কিন সেনারা।
অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র জর্ডানে কয়েক শ মার্কিন প্রশিক্ষক অবস্থান করছেন। তাঁরা বছরজুড়ে ব্যাপক মহড়ার আয়োজন করে থাকেন।
কাতার ও ইউএইতে মূলত দেশ দুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন সেনা রাখা হয়েছে। তাঁরা দেশ দুটির সেনাদের প্রশিক্ষণ দেন। দেশ দুটি মার্কিন সেনা রাখার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, অঞ্চলটি সামরিক কোনো অভিযানে প্রয়োজন হলে তাঁদের সহায়তা নেওয়া।
ট্রাম্প গত মাসে ইয়েমেনের হুতিদের ওপর বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে। এসব বোমা হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমানগুলো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করেছে। তবে কোন কোন দেশ থেকে এসব উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করেছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
‘টাওয়ার ২২’ নামে পরিচিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটির স্যাটেলাইটে ধারণ করা দৃশ্য। জর্ডানের রওয়াইশ ডিস্ট্রিক্টের রুকবানে, ১২ অক্টোবর ২০২৩.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।
আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।