পুরোনো বছরের বিদায়ের আগে চৈত্রের শেষ খরতাপেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজির হয়েছিলেন সংগীতের অনুরাগীরা। বাঙালি, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, খাসিয়া, গারোসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দর্শকেরা গলা মিলিয়েছেন, নেচেছেন। সংগীতের মুহূর্তগুলোতে উপভোগ করেছেন। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গতকাল ‘চৈত্রসংক্রান্তি ব্যান্ড শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শেষে বিকেলে মঞ্চে আসে জনপ্রিয় ব্যান্ড দলছুট। মুহুর্মুহু করতালিতে দলছুটকে অভিবাদন জানান দর্শকেরা।

জনপ্রিয় গান ‘দিন বাড়ি যায়’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করে দলছুট। শেষ বিকেলটাকে রাঙিয়ে তোলে ব্যান্ডটি। সুরের মোহ ছড়িয়ে পড়ে, জড়িয়ে পড়েন শ্রোতারা। গানটির রেশ ফুরানোর আগেই ধরে ‘পরী’। গানটিও দলছুটের শ্রোতাদের মুখস্থ। সুরটাও চিরচেনা। এরপর ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ও ‘গাড়ি চলে না, চলে না’ দিয়ে পরিবেশনা শেষ করে ব্যান্ডটি।

হালে ওপেন এয়ার (খোলা আকাশের নিচে) কনসার্টের চল হারাতে বসেছে। কনসার্ট এখন চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে গেছে। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খোলা আকাশের নিচে গান শুনতে শ্রোতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত ছিল। শিল্পকলা একাডেমি বলছে, চৈত্রসংক্রান্তিতে এবারই প্রথমবার সমতল ও পাহাড়ের ব্যান্ড নিয়ে এমন আয়োজন করছে শিল্পকলা একাডেমি।
এদিন পাহাড় ও সমতলের এক ডজন ব্যান্ডের পরিবেশনা ছিল। দলছুটের আগে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ব্যান্ড ইমাং, খাসিয়া সম্প্রদায়ের ব্যান্ড ইউনিটি গান পরিবেশন করেছে। এরপর গেয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের ব্যান্ড চিম্বুক। ‘ফাইদি ফাইদি ও ববই বৈসু বেরেনি’ ও ‘ও জনি জং’ শিরোনামে দুটি গান পরিবেশন করেছে ইমাং। ত্রিপুরা ভাষা ‘ইমাং’ শব্দের অর্থ স্বপ্ন। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর স্বপ্ন পূরণ করতে গাইছে ব্যান্ডটি। চিম্বুক পাহাড়ের নামে গড়ে উঠেছে মারমা সম্প্রদায়ের ব্যান্ড চিম্বুক। ব্যান্ডটি সাংগ্রাই গান পরিবেশন করেছে। বিকেল চারটায় ঢাকঢোলের তালে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এ সময় মঞ্চে আসেন ৫০ জনের মতো ঢুলি, বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢোলের পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়েছেন শহুরে দর্শকেরা। এরপর লাঠিখেলা পরিবেশন করেন একদল লাঠিয়াল।

এদিন সন্ধ্যার পর ওয়ারফেজ, ভাইকিংস, অ্যাভোয়েড রাফা, লালন, আর্টসেল, স্টোনফ্রি, চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যান্ড ইনভোকেশন ও গারো সম্প্রদায়ের ব্যান্ড এফ মাইনরের গাওয়ার কথা ছিল।

আয়োজনের শুরুতে বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন এবং শিল্পকলার সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন জোনাকি জ্যোতি ও সাকিব।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে থাকছে ড্রোন শো ও কনসার্ট। নববর্ষ ১৪৩২ উদ্‌যাপন উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় চীনা দূতাবাস, ঢাকার কারিগরি সহায়তায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ‘ড্রোন শো’ ও ‘নববর্ষ কনসার্ট’ আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার বিকেল তিনটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ।
নববর্ষ কনসার্টে শুরুতেই রয়েছে ‘বেসিক গিটার লার্নিং স্কুল’ বান্দরবান। এরপর গারো জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ড ‘এফ মাইনর’ দুটি সংগীত পরিবেশন করবে। সমবেত সংগীত ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি উপস্থিত সব শিল্পী পরিবেশন করবেন। দুটি একক সংগীত পরিবেশন করবে মিঠুন চক্র এবং ‘দেওরা’সহ আরও একটি ঐতিহ্যবাহী পালা পরিবেশন করবেন ইসলামউদ্দিন পালাকার।

এরপর দ্বৈত ও দুটি একক সংগীত পরিবেশন করবেন রাকিব ও সাগর দেওয়ান এবং দুটি দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করবেন রাকিব ও আরজ আলী ওস্তাদ। ‘চলো নীরালায়’সহ তিনটি একক সংগীত পরিবেশন করবেন আতিয়া আনিশা, ‘মাঝে মাঝে তুমি এলে’, ‘মানুষ কেন এ রকম’ ও ‘গল্প না’ নামের গান তিনটি পরিবেশন করবেন আহমেদ হাসান সানি এবং জুলাই আন্দোলনের গানসহ ৩টি গান পরিবেশন করবেন পারশা । এরপর ‘ব্যান্ড সংগীত’ পরিবেশন করবেন অ্যাশেজ ব্যান্ড।
সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে আকর্ষণীয় ‘ড্রোন শো’। সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী রাত ১০টা ১৮ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ড্রোন শোর কিছু ছবি শেয়ার করেন। ফারুকী লেখেন, ‘আজকের ড্রোন শোর কিছু ঝলক! এটি পুরো শোর কেবল এক ঝলকমাত্র। ১৪ এপ্রিল, বেলা তিনটায়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ড্রোন শো আর লাইভ মিউজিকের অসাধারণ এক প্রদর্শনী দেখার আমন্ত্রণ রইল।’ তিনি আরও জানান, ‘এই ড্রোন শো চীনের দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি উপহার।’

এর আগে গত শনিবার সংসদ ভবনের সামনে মহড়ায় দেখা যায় মুগ্ধকর ড্রোন শোয়ের ঝলক।  প্রথমবারের মতো আকাশে ভেসে ওঠে ড্রোনচিত্র ও রঙিন লেজার রশ্মি। এই শোতে ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালকে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন প্রতিকৃতির মাধ্যমে। উঠে আসে ‘২৪-এর বীর’, পায়রার খাঁচা ভাঙা থিম, ফিলিস্তিনের জন্য প্রার্থনা এবং বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের শুভেচ্ছাবার্তা। সেদিনের মহড়ায় উপস্থিত মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আন্দোলনকারী আবু সাঈদ, পানির বোতল হাতে প্রতীকী মুগ্ধতা, আর ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানানো বার্তা। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনের প্রসঙ্গ ও গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার প্রতিবাদও শোতে স্থান পেয়েছে প্রতীকীভাবে। বিভিন্ন বার্তায় আয়োজকেরা জানিয়েছে, এই ড্রোন শো কেবল বিনোদনের নয়, বরং এটি বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে গণ–আন্দোলন, মানবিক বিপর্যয় এবং আশা-ভবিষ্যতের ইঙ্গিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ব য ন ডট কনস র ট শ ল পকল এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া

আজ ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অসংখ্য নীরব ত্যাগের মধ্যদিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কুষ্টিয়া থেকে বিতাড়িত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কালেক্টরেট চত্বরে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। 

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই কুষ্টিয়া ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে এখানে ইপিআর, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর

৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর

কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিরোধে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীতে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস জুড়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা, সম্মুখযুদ্ধ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় চূড়ান্ত মুক্তির পথ।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর সুসজ্জিত ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালান। পাকবাহিনীর ক্যাম্প, ব্রিজ, সড়ক ও রসদ সরবরাহ লাইনে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিটি যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তারা কুষ্টিয়ায় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার আশপাশে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের প্রচণ্ড গর্জনে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। কৌশলগত স্থানে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে দেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে ও আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দিনটিকেই ‘কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত কুষ্টিয়া শহরের কালেক্টরেট চত্বরে তৎকালীন রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থেকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। এই পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই প্রতীকীভাবে স্বাধীন কুষ্টিয়ার জন্ম এবং মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর সূচনা ঘটে। ।

প্রতি বছরের মতো এবারো কুষ্টিয়া মুক্তদিবস উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত, র‌্যালি পরবর্তী শহীদ স্মৃতিস্মম্ভ চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। শহীদ পরিবার ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছেন। 

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ শেষ হচ্ছে কম্পিউটার সিটির মেলা
  • ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো
  • ‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মরণ
  • মওলানা ভাসানী মজলুমদের পক্ষে ছিলেন, কখনো আপোষ করেননি: টুকু 
  • বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসে বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচি
  • আজ মওলানা ভাসানীর ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী
  • অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যথাযথ প্রচারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
  • ২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া
  • বিজয় দিবসে উপলক্ষে তিন দিনের নাট্যোৎসব আয়োজন করছে ডাকসু
  • টোকেন মূল্যে বৈষম্যের অভিযোগ ইবি ছাত্রদলের