ডলফিনকে কেন বুদ্ধিমান প্রাণী বলা হয়
Published: 15th, April 2025 GMT
ডলফিনের বুদ্ধি, সামাজিক আচরণ ও মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ডলফিনের মস্তিষ্ক অন্য অনেক প্রাণীর তুলনায় বেশ বড় ও জটিল। ডলফিনের সেরেব্রাল করটেক্স বা মস্তিষ্কের বহিরাবরণ ভাঁজযুক্ত যা জাইরিফায়েড নামে পরিচিত। মস্তিষ্কের এই গঠনের কারণে ডলফিন জটিল চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধান ও যোগাযোগ করতে পারে। আর তাই দেখতে ভীষণ আদুরে ডলফিনকে সমুদ্রের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী বলা হয়।
মানুষ ও অন্যান্য উচ্চ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রাণীর মস্তিষ্কে স্পিন্ডল নিউরন নামের বিশেষ কোষ রয়েছে। এই কোষ আবেগ, সামাজিক আচরণ, বিচার ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত। ডলফিনের মস্তিষ্কেও এই স্পিন্ডল নিউরন রয়েছে। এ ছাড়া ডলফিনের শ্রবণ ও শব্দ প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা বেশ শক্তিশালী। শুধু তা–ই নয়, দলবদ্ধভাবে শিকার করার পাশাপাশি একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে ডলফিন।
আরও পড়ুনডলফিন কি সত্যিই নিজেদের নাম ধরে ডাকতে পারে ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ডলফিন খেলাধুলাপ্রিয় ও কৌতূহলী প্রাণী। তারা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন বস্তু নিয়ে খেলা করে। এমন আচরণ ডলফিনের সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে এবং নতুন দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। ডলফিনরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য শিস, ক্লিক আর ব্রাস্ট পালস কৌশল ব্যবহার করে থাকে। ক্লিকের মাধ্যমে মূলত ইকো লোকেশন বা প্রতিধ্বনি দিয়ে দিক নির্ণয় করে শিকার খুঁজে বের করে ডলফিন।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, প্রতিটি ডলফিন স্বতন্ত্র শিস বাজাতে পারে, যা অনেকটা মানুষের নামের মতো কাজ করে। তারা একে অপরকে শনাক্ত ও সম্বোধন করতে এই শিস ব্যবহার করে। এমনকি মা ডলফিন বাচ্চাকে তার নিজস্ব শিস শিখিয়ে দেয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে ডলফিনরা বহু বছর পরও তাদের পুরোনো সঙ্গীদের শিস মনে রাখতে পারে। গুগলের গবেষণা প্রকল্প ডলফিনগামা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ডলফিনের ভাষার কাঠামো বোঝার চেষ্টা করছে।
সূত্র: ডলফিন ওয়ে ও উইকিপিডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ডলফ ন র
এছাড়াও পড়ুন:
টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট
এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।
আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:
হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।
মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।
প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।
কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?
Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?
হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।
বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?
জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।
তাহলে বাবা-মা কী করবেন?
শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।
একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।
তারা//