বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে প্রবেশ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা একদল জেলের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্তবর্তী কালিন্দি নদীর বয়ারসিং সংলগ্ন উলোখালীর চর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

এসময় জেলেদের মারধর করে তাদের দু’টি নৌকা বিএসএফ সদস্যরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা। 

হামলার সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া জেলেরা সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে লোকালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন বলে দাবি তাদের স্বজনদের।

বিএসএফের হামলার শিকার জেলেরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের মোহাম্মদের ছেলে রমজান, শাহাজান, ফরেজ গাজীর ছেলে শাহাদাৎ, শাহাজান, আতাউর, সৈয়দ গাজীর ছেলে আব্দুল, মানিকপুর গ্রামের কেরামত ও কৈখালীর নুর মোহাম্মদ। 

ঘটনার শিকার শাহাদাৎ হোসেন জানান, পশ্চিম সুন্দরবনের কৈখালী স্টেশন থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে চারদিন আগে তারা সুন্দরবনে যান। তিনটি নৌকার ১২ জন জেলে দু’দিন ধরে বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত উলোখালীর চরে পাটা জাল পেতে মাছ ধরছিলেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দু’টি স্পিডবোট নিয়ে বিএসএফ সদস্যরা আকস্মিকভাবে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের মারধর শুরু করেন।

শাহাদাৎ হোসেন আরও বলেন, এসময় তারা পেতে রাখা জাল ও সেখানে থাকা নৌকা ফেলে বনের মধ্যে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। এসময় জাল একইভাবে পাতা থাকলেও নৌকা দু’টি নিয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত বিএসএফ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। বর্ডার এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়ার কারণে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

স্থানীয় রমজাননগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ লাল্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিএসএফের মারধরের শিকার আট জেলের মধ্যে ছয়জন তার এলাকার। বিএসএফ নৌকা নিয়ে উলোখালীর চর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় তারা উপায়ন্তর না পেয়ে পায়ে হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে লোকালয়ে ফিরছেন। পরে বেশি লোকজন ও নৌকা নিয়ে গিয়ে সেখানে পেতে রাখা জাল উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। জেলেরা এলাকায় ফিরলে বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের জানানো হবে।

এ বিষয়ে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান জানান, এখনো কেউ বিষয়টি তাদের অবহিত করেনি। খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজিবি কৈখালী ক্যাম্পের সুবেদার আবু বক্কার জানান, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বিষয়টি তাদের অবহিত করেছেন। ঘটনাটি বয়ারসিং এলাকার হওয়ায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ জানাতে সেখানকার বিজিবি (রিভারাইন) ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এসএফ স ন দরবন ব এসএফ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন

ভোলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১৯ জেলে ৯৭ দিন ভারতে আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন। গত বুধবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন।

দেশে ফেরত জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে তাঁদের বহনকারী ট্রলার ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে যায়। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের আটক করে।

দেশে ফেরা জেলেরা হলেন সফিজল ব্যাপারী (মাঝি), শাহে আলম, ছিডু মুন্সি, রাজীব চন্দ্র দাস, আক্তার হোসেন, মিন্টু হাওলাদার, মো. ফরিদ, মো. আলমগীর, মোহাম্মদ ফরিদ, মো. ইউনুছ, মো. বাবুল সরদার, মো. নিরব হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. শাহ আলম হাওলাদার, গৌতম চন্দ্র দাস, জাকির হোসেন, সগির সিকদার, মো. টুটুল ও শহীদুল ইসলাম। তাঁরা সবাই ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

জেলে ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর শান্তির হাট ঘাট এলাকা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যান ওই জেলেরা। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিক হারিয়ে তাঁরা ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করেন। বিএসএফ তাঁদের আটক করে সুন্দরবনের কোস্টাল থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাঁদের আলীপুর সদর ও পরে বারাইপুর জেলে পাঠানো হয়। দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারিতে হস্তান্তরের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের সহায়তায় বুধবার সন্ধ্যায় মোংলা বন্দরে পৌঁছান তাঁরা। পরে দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরেন।

জেলেরা ফিরলেও মাছ ধরার নৌকাটি ফেরত দেওয়া হয়নি দাবি করেন সফিজল মাঝির ছেলে হোসাইন স্বাধীন। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফিশিং বোটটি ফেরত পাইনি। নৌকাটি না পেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’

আরও পড়ুনবঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার বিকল, ভোলার ১৯ জেলে ভারতের কারাগারে২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জেলে মো. শাহে আলম বলেন, সাগর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় প্রশাসন মাছসহ ফিশিং বোট নিয়ে গেছে।

ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই জেলেদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির ভোলা সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন শেখ। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন আর কোনো জেলেকে এভাবে নির্যাতন না করা হয়, সেই অনুরোধ জানাই।’

আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১২ দিন ধরে ১৫ জেলে নিখোঁজ২২ নভেম্বর ২০২৫

আল মামুন শেখ বলেন, জেলেরা আটক হওয়ার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছ থেকে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে দীর্ঘ ৯৭ দিন পর কোস্টগার্ডের সহায়তায় ওই জেলেরা দেশে ফিরেছেন।

কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বন্দিবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশ ৪৭ ভারতীয় জেলেকে ও ভারত ৩২ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দেয়।

ভোলা সদর ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ৯৭ দিনের মাথায় তাঁরা ফিরেছেন। আটক থাকা অবস্থায় তাঁদের পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

আরও পড়ুনভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী০১ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের লাশ হস্তান্তর
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিল বিএসএফ
  • অসহায় রিকশাচালক পরিবারের মুখে হাসি ফোটালো নারায়ণগঞ্জ বসুন্ধরা শুভসংঘ
  • ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন
  • অনুচ্ছেদে বিরামচিহ্ন বসাও
  • নবাগত সদর ইউএনও’র সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়