ইসরায়েলিদের বাকিংহাম প্যালেসে কেন ঢুকতে দিতেন না রানি এলিজাবেথ
Published: 16th, April 2025 GMT
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড লেমি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডনে তাঁরা গোপনে এ বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ডেভিড লেমির নিন্দা করেছেন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদেরা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের এ অবস্থান নতুন নয়। প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও ইসরায়েলকে পছন্দ করতেন না।
ইসরায়েলের সাবেক প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন নিজেই এ কথা স্বীকার করেছেন। বেশ কয়েক মাস আগে লন্ডনে হাইফা টেকনিয়ন ইনস্টিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, প্রয়াত রানি মনে করতেন প্রত্যেক ইসরায়েলি ‘একজন সন্ত্রাসী নয়তো সন্ত্রাসীর সন্তান।’ শুধু তা–ই নয়, তিনি বাকিংহাম প্যালেসে কোনো ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে ঢুকতেও দিতেন না।
যুক্তরাজ্যের বাকিংহাম প্যালেসে রাজা বা রানিসহ রাজপরিবারের সদস্যরা থাকেন। বর্তমানে রাজা তৃতীয় চার্লস রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে এখানেই থাকেন।
ইসরায়েলের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেছিলেন, ‘রানি এলিজাবেথ ও আমাদের (ইসরায়েল) মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা জটিল ছিল।’
রিভলিন ইসরায়েলের দশম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অন্যদিকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০২২ সালে মারা যান।
সাবেক এই ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তিনি (রানি এলিজাবেথ) আন্তর্জাতিক কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া প্যালেসের (বাকিংহাম) ভেতরে কোনো ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে ঢুকতে দিতেন না।’
মাঝেমধ্যেই মনে করা হতো, রানি এলিজাবেথের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল।
রানি এলিজাবেথ ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে মারা যান। ৭০ বছর সিংহাসনে থাকাকালে তিনি ১২০টির বেশি দেশ ঘুরেছেন। জীবদ্দশায় লাখ লাখ মাইল ভ্রমণ করলেও কখনো ইসরায়েলে যাননি।
আরও পড়ুনদ্বিতীয় এলিজাবেথ যেভাবে ব্রিটেনের রানি হয়ে উঠলেন০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪রানির মৃত্যুর পর প্রভাবশালী কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব ইসরায়েল গ্রুপের অনারারি প্রেসিডেন্ট স্টুয়ার্ট পলক দাবি করেছিলেন, ‘রাজপরিবারের সদস্যদের ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’
রানি এলিজাবেথের ইসরায়েল সফর না করা নিয়ে ২০১২ সালে লিখেছিলেন দেশটির প্রভাবশালী সংবাদপত্র হারেৎজের সাবেক এডিটর–ইন–চিফ ডেভিড লানদাও। তিনি লিখেছিলেন, ‘যদি তিনি (রানি) ইহুদি রাষ্ট্র সফর করতে চাইতেন অথবা তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেউ সেখানে যেতে চাইতেন, তাহলে তিনি জোর করে তা করতে পারতেন এবং নিজের ইচ্ছাপূরণ করতে পারতেন।’
কারও কারও ধারণা, ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণার আগে ১৯৪০-এর দশকে ফিলিস্তিনে যুক্তরাজ্যের ম্যান্ডেটের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহিংস বিদ্রোহের কারণে ইসরায়েলের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণে করতেন রানি এলিজাবেথ।
১৯৮৪ সালে জর্ডান সফর করেন রানি এলিজাবেথ। এ সময় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দখলকৃত পশ্চিম তীরের আকাশে উড়ে যেতে দেখে ‘কতটা ভীতিকর’ ছিলেন তা নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনরানি প্রথম এলিজাবেথের ছিল বিশাল গুপ্তচর বাহিনী ০১ জুলাই ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র পর ব র র এল জ ব থ কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে থাকা শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেসরকারি এই প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে দেখিয়ে আবাসন বৃত্তি থেকে তাঁদের বঞ্চিত করছে, এমন অভিযোগে আজ বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে অবস্থান নেন।
এর আগে দুপুর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাঁদের স্লোগানের মধ্যে ছিল: ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, ভুজুংভাজুং ছেড়ে দে’, ‘এক দুই তিন চার, বৃত্তি আমার অধিকার’ এবং ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, নইলে গদি ছেড়ে দে’।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নীতিমালায় আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে তাঁরা আবাসন বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পটি বেসরকারি হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হল না হওয়ায় তাঁদের বৃত্তি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোনো হল নেই। আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের মেধাবী প্রজেক্ট নামের একটি প্রকল্প আমাদের জন্য করেছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যত কোনো হল নয়।’
শিক্ষার্থী সুমন আরও বলেন, ‘বৃত্তি নীতিমালায় সুকৌশলে আস–সুন্নাহ প্রজেক্টকে হল হিসেবে উপস্থাপন করে বৃত্তি থেকে আমাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এ পাঁয়তারাকে রুখে দিতে প্রতিবাদ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্প থেকে যখন আগামী জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাবে, তখন তাদের আশ্রয়স্থল কোথায়? আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা আরও কঠিন আন্দোলন করব।’
শিক্ষার্থীরা প্রায় বিকেল চারটা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে থাকেন। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে ফিরে যান।
জানা যায়, আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত মেধাবী প্রকল্পের আওতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে থাকেন। এই প্রকল্পে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।