যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা গতকাল বুধবার সর্বসম্মতিক্রমে এক রায়ে বলেছেন, সমতা আইনের আওতায় শুধু জৈবিক লিঙ্গের মাধ্যমেই কাউকে নারী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হবে। অর্থাৎ যাঁরা জন্মগতভাবে নারী, তাঁদেরই শুধু নারী হিসেবে গণ্য করা হবে। ট্রান্স বা রূপান্তরিতদের নারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের সমতা আইনকে ঘিরে যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি আইনি লড়াই চূড়ান্ত পরিণতি পেল। এই রায় স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে লিঙ্গভিত্তিক অধিকারগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের সমতা আইনের আওতায় নারীর সংজ্ঞায়ন প্রশ্নে স্কটল্যান্ড সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল ‘ফর উইমেন স্কটল্যান্ড’ নামের নারী অধিকারবিষয়ক একটি সংগঠন। তাদের যুক্তি ছিল, যাঁরা জন্মগতভাবে নারী, তাঁদের ক্ষেত্রেই কেবল লিঙ্গভিত্তিক সুরক্ষাগুলো প্রযোজ্য হওয়া উচিত। আদালত সংগঠনটির পক্ষে তাঁদের অবস্থান জানিয়েছেন।

তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লর্ড হজ মনে করেন, এই রায়কে এক পক্ষের বিরুদ্ধে অপর পক্ষের জয় হিসেবে দেখা উচিত নয়। তবে তিনি জোরালোভাবে বলেছেন, আইনটির আওতায় এখনো ট্রান্সজেন্ডারদের বৈষম্য থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে।

জিআরসি নামে পরিচিত ‘লৈঙ্গিক স্বীকৃতির সনদ’ থাকা রূপান্তরকামী নারীরা যুক্তরাজ্যের সমতা আইনের আওতায় জন্মগত নারীদের মতো করেই বৈষম্য থেকে সুরক্ষিত কি না, সে প্রশ্নটির সুরাহা করতে প্রতীক্ষিত রায়টি দেওয়া হয়েছে। কারও নতুন লিঙ্গ পরিচয়ের আইনি স্বীকৃতি প্রদানকারী একটি আনুষ্ঠানিক নথি হলো জিআরসি।

আদালতে স্কটল্যান্ড সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল, যেসব ট্রান্সজেন্ডারের জিআরসি আছেন, তাঁরা জন্মগত নারীদের মতো একই রকমের লিঙ্গভিত্তিক সুরক্ষা পাবেন।

২০১০ সালের সমতা আইনের সঠিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ফর উইমেন স্কটল্যান্ডের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। আইনটি যুক্তরাজ্যজুড়ে প্রযোজ্য হয়।

আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে গিয়ে লর্ড হজ বলেন, ‘আইনে “নারী” ও “লিঙ্গ” শব্দগুলো কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তা নির্ধারণ করাই ছিল আমাদের মূল কাজ।’

হজ আদালতকে বলেন, ‘এই আদালতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, ২০১০ সালের সমতা আইনে নারী এবং লিঙ্গ শব্দের মাধ্যমে যথাক্রমে জৈবিক নারী এবং জৈবিক লিঙ্গকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু আমরা এই রায়কে আমাদের সমাজের কোনো গোষ্ঠীর অধিকারকে জলাঞ্জলি দিয়ে অন্য এক বা একাধিক গোষ্ঠীর বিজয় হিসেবে না দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এই রায়ের অর্থ সেটা নয়।’

এই বিচারক আরও বলেন, আইনটি ট্রান্সজেন্ডারদের ‘লৈঙ্গিক পরিচয় পুনর্নির্ধারণের’ বৈশিষ্ট্যকেই কেবল সুরক্ষা দেয় না, বরং সব ধরনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বৈষম্য এবং তাদের রূপান্তরিত লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে যেকোনো ধরনের হয়রানির বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আইনে সেক্স বা লিঙ্গ শব্দটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে। এটি কি জন্মগতভাবে পাওয়া লিঙ্গ পরিচয় নাকি ২০০৪ সালের ‘জেন্ডার রিকগনিশন’ আইনে উল্লিখিত সনদধারী লিঙ্গ পরিচয়।

স্কটল্যান্ড সরকারের যুক্তি ছিল, কোনো ব্যক্তি জিআরসি সনদ পাওয়ার অর্থ হলো, তিনি যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন।

তবে নারী-পুরুষ শব্দ দুটির সাধারণ ব্যাখ্যাকে তুলে ধরে ফর উইমেন স্কটল্যান্ডের পাল্টা যুক্তি ছিল, লিঙ্গ একটি ‘অপরিবর্তনীয় জৈবিক অবস্থা’।

আদালতের রুলের পর সুপ্রিম কোর্টের বাইরে দেওয়া বক্তব্যে ফর উইমেন স্কটল্যান্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা সুসান স্মিথ বলেন, ‘আজ বিচারকেরা যা বলেছেন, তা আমরা সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি যে নারীরা তাঁদের জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে সুরক্ষিত থাকবেন।’

সংগঠনটির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। তারা মনে করে, এর মধ্যে দিয়ে জন্মগত নারীরা এখন নিরাপদ বোধ করতে পারেন যে নারীদের জন্য নির্ধারিত পরিষেবা ও স্থান নারীদের জন্যই সুরক্ষিত থাকবে।

স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি বলেছেন, স্কটিশ সরকার রায়টি মেনে নিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স কটল য ন ড র র আওত য় বল ছ ন র সমত আইন র জ আরস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’

৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।

লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।

আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’

এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’

লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’

আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫

জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ