ছাত্রী হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ আসামির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
Published: 17th, April 2025 GMT
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে জান্নাতি বেগম (১১) নামে এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে ভোটমারী ইউনিয়নের শৈলমারী চরের একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় জান্নাতির দুই হাত পিঠমোড়া করে বাঁধা ছিল। একটি হাত ও একটি পা মুচড়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মুখে গুঁজে দেওয়া হয়েছে বালু ও মাটি। কানেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভুট্টাক্ষেতে মৃত জান্নাতির মুখ থেকে গলা পর্যন্ত মাটি ঢোকানো ছিল।
জান্নাতি চর ভোটমারী গ্রামের ফজলুল হকের মেয়ে। সে স্থানীয় ভোটমারী এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এ ব্যাপারে পুলিশ বেলাল হোসেন নামে এক যুবককে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে। সে একই গ্রামের আবু তালেবের ছেলে। বৃহস্পতিবার তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। এর আগে জান্নাতির বাবা ফজলুল হক বাদী হয়ে বেলালের নামে এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
এদিকে জান্নাতি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো জেলা। তিস্তা চরাঞ্চলের জান্নাতি হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ভোটমারী এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে জান্নাতির সহপাঠী ও শিক্ষকরা এবং ভোটমারী বাজারে মানববন্ধন করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। কালীগঞ্জ থানা ঘেরাও করে লালমনিরহাট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, জান্নাতির পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা গ্রেপ্তার যুবকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়।
মামলা থেকে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যার দিকে জান্নাতির অসুস্থ নানিকে দেখতে যান তার মা। এ সময় সে বাড়িতে একা ছিল। নানির বাড়ি থেকে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন মা। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশের ভুট্টাক্ষেত থেকে বেলালসহ চার-পাঁচজনকে বেরিয়ে যেতে দেখে সন্দেহ হয়। পরে সেখানে মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখে তিনি থানায় খবর দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় বেলালের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন মেয়েটির বাবা ফজলুল হক। পুলিশ রাতেই অভিযুক্ত যুবক বেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি সেলিম মালিক বলেন, ‘জান্নাতির মুখ থেকে গলা পর্যন্ত মাটি ঢুকিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে ঘাতকরা। তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা, তদন্তের পর জানা যাবে। তবে নিহতের ভাইয়ের সঙ্গে গ্রেপ্তার যুবকের ভাইয়ের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি। তাদের দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার বেলালকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ র ব যবস থ ভ টম র
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫