আমার ছেলেবেলায় পয়লা বৈশাখের বড় একটা অংশজুড়ে ছিল কেনাকাটা। ১০-১৫ দিন আগে থেকেই বাবা আর কাকার সঙ্গে ‘এটা কিনে দাও, সেটা কিনে দাও’ বলে দেনদরবার চলত। এখনো বাড়িতে কেনাকাটার রীতি আছে। তবে এখন আর জোর করার প্রয়োজন হয় না। উল্টো যদি বলি, ‘লাগবে না, সেদিনই না কিনলাম’ বাবা রাগ করেন, শোনেন না। এবারও বিকাশে টাকা পাঠিয়ে বললেন, ‘কিছু কিনে নিও।’

পরপরই ফোনে মা আর বোনের হুমকি, ‘কিনে ছবি পাঠাবি। না কিনলে কিন্তু খবর আছে!’

বাড়ির একেবারে কাছেই বড় বটগাছটার নিচে বেশ কয়েকটা দোকান ছিল। একই পাড়ায় আমরা যাঁরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়তাম, অনেকেই দলবেঁধে বটগাছের নিচে ক্রিকেট, হাডুডুসহ বিভিন্ন খেলা খেলতাম। সংগত কারণেই দোকানি কাকুরা আমাদের চিনতেন। পয়লা বৈশাখের দিন কোনো না কোনো দোকানে হালখাতা থাকতই। দোকানের সামনের দিকটা রঙিন কাগজ আর কাগজের ফুল দিয়ে সাজানোর দায়িত্ব আমাদের ওপর পড়ত। নববর্ষের দিন সকালে দলবেঁধে দোকান সাজানোর কাজ করতাম। বিকেলে বন্ধুরা মিলে মেলায় যেতাম। নাগরদোলা, গানবাজনা, ম্যাজিক শো—কত–কী যে থাকত, গেলেই প্রাণ জুড়িয়ে যেত।

বন্ধুরা মিলে একবার ঠিক করলাম, মেলায় আমরাও দোকান দেব। তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। কিন্তু দোকান দিতে হলে মেলার আয়োজকদের কাছ থেকে জায়গা বরাদ্দ নিতে হবে, তা ছাড়া দোকান নিতে হলে নির্দিষ্ট টাকাও দিতে হবে। শুরুতেই নিজেদের টিফিনের জমানো টাকা থেকে একটা তহবিল তৈরি করা হলো। কিন্তু অনুমতি?

সেবার মেলার মাতব্বর ছিলেন আমাদের বান্ধবী মৌবনী ভদ্রের কাকা। মৌবনীর সঙ্গে পড়ালেখা নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। জানতাম, সে আমাকে ঈর্ষা করে। তাই কথাটা তাকে বলব কি বলব না যখন ভাবছি, তখনই বন্ধুরা এসে নিয়ে গেল মৌবনীর কাছে। শুরুতে যদিও বলেছিল, ‘ছোট্ট পোলাপানের আবার দোকান কি রে!’

কিন্তু পরপরই হেসে বলেছিল, ‘চিন্তা করিস না, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে আমিও তোদের সঙ্গে থাকব। কাজ তেমন কিছু করতে পারব না। শুধু ভাগের টাকাটা দেব, পরে লাভ যা হবে, ভাগ দিবি।’

অগত্যা রাজি হতে হলো। ৫০ শতাংশ ছাড়ে মৌবনীর তরফে জায়গা বরাদ্দ পেলাম আমরা। দোকানের নাম রাখা হলো, ‘দুই দিনের দোকানি’।

আমার নিয়মিত বাজারে যাতায়াত ছিল। বাবার পরিচিত বড় দোকানও ছিল কয়েকটা। মেলার আগের দিন গিয়ে, বিক্রি না হলে ফেরত নেওয়ার শর্তে মালামাল নিয়ে এলাম। দোকানটাকে সবাই মিলে সাজালাম। ঝড়ের দিনে তালগাছ থেকে বাবুই পাখির বাসা নিচে পড়ত। সুমিতের সংগ্রহে ছিল। সুমিত নিয়ে এল। মৌবনী ভালো আঁকতে পারত। সুন্দর পাটির পরে ‘শুভ নববর্ষ/দুই দিনের দোকানির থেকে শুভেচ্ছা নিন’ লিখে দোকানের সামনে টানিয়ে দিল। মেলার ওই দুই দিন সেবার কি যে হইচই আর আনন্দে কেটেছিল, লিখে প্রকাশ করা কঠিন। আমাদের লাভও হয়েছিল। ৪২১ টাকা।

মৌবনী, সুমিত, রুদ্র সবাই কি খুশি! জীবনের প্রথম উপার্জন, তা–ও আবার বছরের পয়লা দিনে। চোখ বুজে পেছনে ফিরে তাকালে সব স্পষ্ট ভেসে ওঠে। বৃষ্টির প্রথম ফোঁটার মতো প্রবল মায়ায় হৃদয় তখন সিক্ত হয়ে যায়।

আরও পড়ুনগামছা কীভাবে বাঙালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হয়ে উঠল১৪ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘হাদির ওপর হামলাকারীর শেকড় যতই শক্তিশালী হোক উপড়ে ফেলা হবে’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘‘ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীর শেকড় যতই শক্তিশালী হোক না কেন তা উপড়ে ফেলা হবে। হাদি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক। আজ তিনি সন্ত্রাসীদের গুলিতে চিকিৎসাধীন। আমরা তার জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করি।’’

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মালিথিয়া গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজনে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

হাদির ওপর গুলির ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে পতিত স্বৈরাচারের সন্ত্রাসী বাহিনী টার্গেট করেছে। কিন্তু, তারা সফল হবে না।’’

আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন বদ্ধ পরিকর। আগামী নির্বাচনে মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এবারের নির্বাচনে।’’

ঢাকা/শাহরিয়ার/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ