পুঁজিবাজারে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এডিএন টেলিকম লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের ব্যবহার এবং হাই-টেক পার্কে জমি উন্নয়ন ও বিনিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি এডিএন টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন: বিএসইসির উপ-পরিচালক মো.

মুস্তাফিজুর রহমান, সহকারী পরিচালক নিলয় কর্মকার এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপ-ব্যবস্থাপক উৎপল চন্দ্র দেবনাথ।

আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

তথ্যমতে, এডিএন টেলিকম পুঁজিবাজার থেকে ৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এ লক্ষ্যে বুক বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার ৩০ টাকা দরে বিক্রয় করে ৩৫ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ৭৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬টি শেয়ার ২৭ টাকা দরে বিক্রয় করে ২১ কোটি ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮২ টাকা সংগ্রহ করা হবে।

আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহীত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ভৌত কাঠামোর উন্নয়ন, ডাটা সেন্টার স্থাপন, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করেছে।

২০২৪ সালে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সিলেটে নতুন কারখানা তৈরি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল এডিএন টেলিকম। সিলেটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কে (বিএসএমএইচটিপি) প্রায় ১ দশমিক ৭৫ একর বা ৭ হাজার ৯৫ বর্গমিটার জমি বরাদ্দ পায় কোম্পানিটি। এরই ধরাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল জমির ইজারা চুক্তি সম্পন্ন হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে এডিএন টেলিকম।

এডিএনের জন্য বরাদ্দকৃত প্রতি বর্গমিটার জমির জন্য বার্ষিক ইজারা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ দশমিক ৫০ ডলার। প্রথম ১০ বছরের জন্য ১০ হাজার ৬৪২ ডলার ভাড়া বাবদ পরিশোধ করতে হবে। তিন বছর পরপর ভাড়া বাড়বে। প্রথম দশ বছরের পরবর্তী তিন বছর পরপর সিলেটের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে বরাদ্দকৃত জমির ইজারা ভাড়া সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়বে। 

এর আগে ২০২৩ সালে ভবিষ্যৎ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য জমি কেনার ঘোষণা দিয়েছিল কোম্পানিটি। গাজীপুরের প্রখ্যাত কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্কে ২৩৫ ডেসিমেল জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। জমি রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য খরচ ছাড়া জমি কিনতে ২ কোটি ৩০ লাখ ১১ হাজার টাকা ব্যয় হবে বলে জানায় কোম্পানিটি।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এডিএন টেলিকম লিমিটেডের আইপিও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের ব্যবহার এবং হাই-টেক পার্কে জমি উন্নয়নে বিনিয়োগের বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি

প্রোসপেক্টাসে বর্ণিত খাতগুলোতে কোম্পানিটি আইপিওর অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করেছি কি না, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।

এছাড়া বিভিন্ন হাই-টেক পার্কে কোম্পানিটি জমি লিজ নেওয়াসহ অন্যান্য বিনিয়োগ সঠিকভাবে করেছে কি না, তদন্ত কমিটি তাও যাচােই করে দেখবে।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এডিএন টেলিকম লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এই সময়ে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২.৩১ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০৪ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩১.৩৫ টাকা।

কোম্পানিটির শেয়ার ধারণ

২০১৯ সালের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এডিএন টেলিকম লিমিটেড। ‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৬৪ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি ৪৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৬৬টি। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪২.৮১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৩.৫৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৯৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১.৬৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনটি/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র ২০২৪ স ল ব যবহ র ব যবস থ তদন ত ক র জন য বর দ দ বছর র আইপ ও

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সমন্বিত রোডম্যাপে ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারের টেকসই পথ পুঁজিবাজার’
  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন