‘আমি এত কিছু করতাছি, এত চাপ নিতাছি। আমারে ৫ লাখ টাকা দিয়া দেও। আমি ব্যাকআপ দিমু। তোমার হাতে নিয়া আসতে হবে। আমারে তো আর গেঞ্জি দিলা না!’ মোবাইল ফোনের এক প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি বলছিলেন এসব কথা। অপর প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়– ‘বাড়ির কাম করতে গিয়া খুব খারাপ অবস্থা। ঢাকা থেকে ফুলহাতা গেঞ্জি আইনা দিমুনে।’ 

গাজীপুরের শ্রীপুরে এমন কথোপকথনের একটি অডিও ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এ কথোপকথনের বিভিন্ন অংশ আজ সোমবার ফেসবুকে পোস্টও করেছেন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেলিম সিকদার নামে এক ঝুট ব্যবসায়ীর সঙ্গে লেনদেন বিষয়ে এসব কথা বলেছেন শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল। যদিও তিনি কথোপকথনটিকে অসত্য ও বানানো বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি তাঁর কণ্ঠ নয়। এডিট করে তৈরি করা হয়েছে। 

তবে শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে সেলিম সিকদার বলেন, এটি তাঁর সঙ্গে শ্রীপুর থানার ওসি জয়নালের কথোপকথনের রেকর্ড। জয়নাল শ্রীপুর থানায় যোগদানের পর তাঁকে ডেকে নিয়ে মাসে মাসে দেড় থেকে দুই লাখ করে টাকা নিয়েছেন। মাস দুয়েক আগে তাঁর কাছে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে তাঁকে ডেকে নিয়ে আটক করে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়াও হয়েছিল ওসিকে। তবুও ওসি তাঁকে ৫ আগস্টের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠান। রমজান মাসের ৬ দিন আগে ১ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আসেন তিনি। সেলিম সিকদার রিদিশা গ্রুপের রিদিশা ফর্মুলা ওয়ান কারখানায় ঝুট ব্যবসা করতেন। সেই ঝুট ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য ওসিকে বারবার টাকা দিতে হয়েছে। 

সেলিম সিকদার বলেন, ‘আমি জানতাম, ওসি আমাকে ব্যবসা করতে দেবে না। এ কথা ভেবেই তাঁর সঙ্গে কথোপকথন রেকর্ড করে রেখেছিলাম।’

ফাঁস হওয়া ওই অডিও কথোপকথনে টেলিফোনে ওসি জয়নালকে বলতে শোনা যায়, তিনি স্থানীয় একজনের মধ্যস্থতায় সেলিমকে কারখানা থেকে ঝুট বের করতে সহযোগিতা করছেন। স্থানীয় ওই ব্যক্তিকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিলে বিনা বাধায় ঝুট বের করে নিয়ে যেতে পারবেন বলে ওসি সেলিমকে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। কথোপকথনের শুরুর দিকেই ওসিকে বলতে শোনা যায়– ‘আমি আমিনুলকে বইলা দিছি। আমি বলছি ও (সেলিম) আমারে ১ লাখ ৩০ দেয়। .

.. ওগো সামনে দিয়া তুমি পেছনে থাকবা।’ এ সময় সেলিম বলেন, ‘আচ্ছা আমি পেছনে থাইকা অগো দিয়া করাইলাম তারপরও যদি ওরা গাড়ির সামনে খাড়ায় আপনি ব্যাকআপ দিবেন?’ ওসি বলেন, ‘খাড়াইবো না।’

এ প্রসঙ্গে শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘আমার কণ্ঠ এডিট করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করায় সেলিম আমার বিরুদ্ধে অডিও এডিট করে ভাইরাল করেছে। আমার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে।’ 

ওসি বলেন, প্রতিদিন শত শত ফোন আসে। অনেকে কাজের কথা বলে, অনেকে অকাজের কথাও তো বলে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ঝ ট ব যবস জয়ন ল

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে

১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।

এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ