Prothomalo:
2025-09-18@00:01:04 GMT

জামিল স্যার

Published: 28th, April 2025 GMT

জামিল স্যারকে (জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী) আমি ঠিক কবে থেকে চিনি, মনে করতে পারব না। তবে ২০১১ সালে আমার লেখা ৮টি ভ্রমণকাহিনির সংকলন প্রকাশনার উৎসবে প্রধান অতিথি হয়ে যখন অনুষ্ঠানে আসেন, সেদিন তাঁকে আমার সবচেয়ে কাছ থেকে দেখা। এরপর আরও ভালো করে দেখার সুযোগ পেলাম যখন ২০১৬ সালে তাঁকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র বানাতে হুকুম দিল বুয়েট অ্যালামনাই। একুশে পদকপ্রাপ্তির সম্মাননা অনুষ্ঠানে এটা দেখানো হয়। এরপর তাঁকে আরও কয়েকবার আমার ক্যামেরায় নিয়েছি। কখনো তিনি ডেকে নিয়েছেন কোনো কিছু রেকর্ড করতে, কখনোবা অন্যরা বলেছে তাঁর কিছু ধারণ করে দিতে।

বুয়েট অ্যালামনাই একটা বড় রকমের প্রামাণ্যচিত্র আমাকে দিয়ে বানায়। ‘আমাদের বুয়েট, আগামীর বুয়েট’ নামে এই প্রামণ্যচিত্র বানানোর কাজের জন্য প্রায় এক মাস একসঙ্গে কয়েকবার আমাদের বসা হয়েছে। ২০১৬ সালে বুয়েটকাল নামে আমার যে স্মৃতিচারণামূলক বই প্রকাশিত হয়, তার পেছনের ফ্ল্যাপের জন্য তিনি লিখেও দেন। এরপর প্রথম আলো একবার ঢাকার নগরায়ণ বিষয়ে তাঁর একটা সাক্ষাৎকার নিতে আমাকে পাঠায় তাঁর কাছে। সেখানেও তিনি অকুতোভয় অনেক কথা খোলামেলা বলেন। সবশেষে তাঁর সঙ্গে আমার মোলাকাত হয় ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি। সিলেট মহানগরীতে একটা বড় পরিসরের ডিজাইন করেছে আমাদের প্রতিষ্ঠান। সিলেটের মেয়র ঢাকায় এসেছেন এ বিষয়ে তাঁর মতামত নিতে। তিনি ঢাকার সব বড় বড় স্থপতিকে নিয়ে এটা দেখে মতামত দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন। এ–ই শেষ। আর দেখা হলো না।

২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত কাছাকাছি থেকে তাঁকে যেমন দেখেছি, তাতে আমার যা মনে হয়েছে, তা হলো—

● প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী।

● ছোটবেলায় খেলোয়াড় ছিলেন।

● ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যানুরাগী ছিলেন এবং শেষ বয়সেও প্রতিদিন কিছু না কিছু অকারিগরিবিষয়ক লেখা পড়তেন।

● আগাগোড়া মেধাবী।

● শুধু কারিগরি বিষয়ই নয়, সমসাময়িক যেকোনো বিষয়েই তিনি অগাধ জ্ঞান রাখতেন।

● কোনো বিষয়ে বা কারও সম্পর্কে কথা বলতে গেলে আগে তিনি অনেক হোমওয়ার্ক করে যান।

● তাঁর বন্ধু কেমন আছে জানি না, তবে তাঁর কোনো নিন্দুক আমি খুঁজে পাইনি।

● তাঁর ব্যক্তিগত সততা কখনোই প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুনিনি।

● তাঁর অনেকগুলো কথা আমার কাছে রেকর্ড করা আছে। কথা বলেছিলাম রাজউক, ভূমি ব্যবস্থাপনা আর নগরায়ণ নিয়ে। খুব স্পস্ট কথা বলতেন তিনি।

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিকে নগরাঞ্চলে পানির গতি রোধ করতে পারে, এমন কিছু স্থাপনা থাকতে পারবে না বলে একটা সুপারিশ করেছিলেন। এটা বাস্তবায়নের কথা ছিল রাজউকের। কিন্তু তিনি দেখলেন, রাজউক নিজেই ডেভেলপার হয়ে সেখানে পানির প্রবাহ বন্ধ করে হাউজিং করে ফেলেছে। পরিষ্কারভাবে এটা স্বার্থের সংঘাত। তিনি তখন বলেছিলেন, রাজউক কিন্তু গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন। এখন মন্ত্রী যদি নির্দেশ দেন এটা করেন, তারা করে ফেলে। তাদের হয়তো দ্বিমত ব্যক্ত করার সুযোগ আছে, ক্ষমতা আছে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—তারা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই চলে।

ভূমিদস্যুদের নিয়েও তাঁর খেদ ছিল। বলেছিলেন, ২০১১ সালে একবার মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ল্যান্ড ডেভেলপারদের বলেছিলেন, ‘আপনারা ভূমিদস্যুরা রাত্রে ঘুমান কীভাবে?’ তার কিছুদিন পর দেখি তিনি অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। আমরা বলেছিলাম, বেআইনিভাবে যেগুলোতে মাটি ভরাট করা হয়েছে, কোনো দালান বানানো হয়নি, সেগুলোতে মাটিটা সরিয়ে ফেললেই হয়। পেশায় আইনজীবী মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বললেন, আমাদের আইনে একটা কথা আছে, ‘একটা অবৈধ শিশু যদি জন্মগ্রহণ করে, তাঁর বেঁচে থাকার অধিকার আছে, তাকে বেচে থাকার সুযোগ দিতে হবে।’ তারপর তো আর এই ড্যাপের বাস্তবায়ন হলো না। ল্যান্ড ডেভেলপারস আর এক্সট্রিমলি পাওয়ারফুল। এদের বিরুদ্ধে কথা বললে জীবনের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে।

জামিল স্যার খেদ করে রাজউক নিয়ে বলেছিলেন, টাকাপয়সা বা ক্ষমতার বিনিময়ে যেকোনো কিছুর অনুমোদন আনা যায়। 

দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থাও দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে, এ অভিযোগ সরকার থেকেই আসছে।

জামিল স্যার নেই আজ পাঁচ বছর। আমাদের রাজউক, আমাদের ভূমিদস্যু— এদের তেমন পরিবর্তন দেখতে পেলে হয়তো জামিলুর রেজা চৌধুরীর আত্মা শান্তি পেত।

শাকুর মজিদ: স্থপতি, লেখক ও নির্মাতা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ল ন মন ত র আম দ র র জউক

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার