মৌলভীবাজারে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মহিষের দুধ দিয়ে তৈরি ‘বর্নির ধুছনির দই’। কয়েক যুগ ধরে স্বাদে অতুলনীয় এই দই তৈরি হচ্ছে জেলার বড়লেখা উপজেলার বর্নি ইউনিয়নে। দইয়ের নামের সঙ্গে তাই ‘বর্নি’ যুক্ত হয়েছে। দই জমানোর গোলগাল পাত্রটিও ভিন্ন ধাঁচের- বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, যা ‘ধুছনি’ নামে পরিচিত।

বর্নি ইউনিয়নের হাওর হাকালুকি পারের গ্রাম নিহারী ফরিঙ্গা। এই গ্রামের নারীরা মহিষের দুধ দিয়ে তৈরি করছেন দইটি। 

গ্রামবাসী জানান, ভোর থেকেই মহিষের দুধ সংগ্রহে বের হন পুরুষরা। দুধ সংগ্রেহর পর তা তিন থেকে চার ঘণ্টা জাল দেন বাড়ির নারীরা। বাদামি রং ধারণ করলে গরম দুধ ঢেলে রাখা হয় বাঁশ বেতের তৈরি ময়দার প্রলেফ দেওয়া ঝুড়িতে, যার স্থানীয় নাম ধুছনি। কিছুক্ষণ পর জমাট বেধে সেই দুধ দইয়ে পরিণত হয়। যা সবার কাছে ‘বর্নির ধুছনির দই’ হিসেবে পরিচিত।

আরো পড়ুন:

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রী হলের খাবারে নখ কাটার যন্ত্র, অতঃপর…

ঘরেই তৈরি করুন ঐতিহ্যবাহী রামাসেরি ইডলি

দই প্রস্তুতকারীরা জানান, বাপ-দাদার আমাল থেকে তারা ধুছনির দই তৈরি করছেন। সম্প্রতি প্রচার মাধ্যমে আসায় দইয়ের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণ। বিয়ে থেকে শুরু করে অন্যান্য অনুষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী তারা সরবরাহ করছেন দই।মহিষের দুধে মাখনের উপস্থিতি বেশি থাকায় দইয়ের স্বাদও হয় বেশি। যে কারণে এর চাহিদা বেড়েছে।

বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি ধুছনিতে (ঝুড়ি) দই জমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন নারীরা 

দই প্রস্তুতকারী গৌরাঙ্গ দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ বেতের তৈরি ছোট ঝুড়ি, যা এলাকায় ধুছইন নামে পরিচিত। সেই ধুছনির গায়ে ময়দার প্রলেপ মাখিয়ে ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন এক নারী। তারপর সেই ধুছনিতে মহিষের দুধ ঢেলে দই পাতা হচ্ছে।

গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “এই পেশা আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসছে। এটা অরিজিনাল দুধের দই। এতে আমরা কোনো কিছু মিশাই না। হাকালুকি হাওর এলাকা হওয়ায় এখানে প্রাকৃতিকভাবে ঘাস-শালুকসহ নানা জাতের জলজ উদ্ভিদ ও লতাপাতার ব্যাপকতা রয়েছে। হাওর পারের লোকজন গরু-মহিষ পালন করেন। ফলে খাঁটি দুধ পাওয়া যায়।”

তিনি বলেন, “দই জমানোর পাত্র ও স্বাদে ভিন্নতা থাকায় এই দইয়ের কদর বেড়ে যাচ্ছে। অল্প দিনে সিলেট বিভাগে বর্নির ধুছনির দইয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “আমারা মিষ্টির দোকানে এবং বাড়ি থেকে দই বিক্রি করি। প্রতিকেজি দই ২০০ টাকা দরে বিক্রি করি। ধুছনিতে থাকা দই ওজনের পর দাম  নির্ধারণ হয়ে থাকে। অর্ডার থাকলে সে অনুযায়ী দই সরবরাহ করি।”

গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “সাধারণত দইতে মিষ্টি দেওয়া হয় না। কিন্তু কারও চাহিদা থাকলে চিনি মিশিয়ে দই মিষ্টি করার ব্যবস্থা করা হয়।”  

ধুছনি প্রস্তুতকারী বাসন্তি রানী বলেন, “আমরা অনেক আগ থেকেই বাঁশ বেত দিয়ে ধুছনি তৈরি করছি। দই প্রস্তুতকারীদের চাহিদামত ধুছনি সরবরাহ করি। প্রস্তুতকারীরা মাটির পাতিল বা প্লাস্টিক ব্যবহার না করায় এই দইয়ের আলাদা স্বাদ রয়েছে। ধুছনির দইয়ের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন।”

বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো.

জয়নাল আবেদীন বলেন, “অনেকদিন ধরে আমরা এই দই খাই। মহিষের দুধ ঘন হওয়ায় সহজে এই দই পাত্রে জমে যায়। এই দই শতভাগ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি। আমাদের স্বজনরা বাড়িতে আসলে তাদের এই দই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। ধুছনির দই একবার খেলে বার বার খেতে মন চাবে।”

বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসলাম সারোয়ার বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্নির ধুছনির দই যাতে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় সেই চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/আজিজ/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ত দইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • গ্রিস থেকে গ্যাস আমদানিতে সম্মত ইউক্রেন: জেলেনস্কি
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
  • ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া
  • চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো