রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং: অশালীন অঙ্গভঙ্গি ও অশ্লীল কবিতা পড়তে জোরাজুরি
Published: 5th, May 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একই বিভাগের অনুজ দুই শিক্ষার্থীকে র্যাগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ছাদে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই দুই শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম রাব্বী, মাহাবুব হোসেন, মেহেদী হাসান, শাহ পরান ও শাহাদাত হোসেন। এ ছাড়া ঘটনার সময় তাঁদের ব্যাচের ২০ থেকে ২৫ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থী হলেন একই বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আবদুল্লাহ শেখ ও মেজবাহ দেওয়ান।
অভিযোগে লেখা হয়েছে, ‘শনিবার সন্ধ্যায় আমাদের বিভাগের সদ্য সিনিয়র কয়েকজন ভাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ছাদে আমাদের কয়েকজন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সামনে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এ সময় তারা আমাদের বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ করে। এরপর আমাদের দিয়ে বিভিন্ন অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করে। সেই সঙ্গে আমাদের দিয়ে অশ্লীল কবিতা আবৃত্তি করার পাশাপাশি কুকুরের মতো হয়ে যৌন অঙ্গভঙ্গি দেখানোর জন্য বাধ্য করে। এতে আমরা অনাগ্রহ প্রকাশ করলে আমাদের মা–বাবা তুলে গালিগালাজ করে, যা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য চরম অবমাননাকর।’
লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সিনিয়র ভাইয়েরা আমাদের মোবাইল ফোন জমা রেখে এসব কর্মকাণ্ড করেছে, যাতে কেউ কোনো প্রমাণ রাখতে না পারে। তারা এ-ও বলেছে, এগুলো নিয়ে অভিযোগ দিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। গতকালের বিষয়টি আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গতকালের ঘটনাটি আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক ও ভীতিকর অভিজ্ঞতা।’ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
অভিযোগের বিষয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের গোলাম রাব্বী বলেন, ‘খেলায় জয়ী হওয়ায় খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা সবাই একাডেমিক ভবনের ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। নাচ-গান ও খাওয়াদাওয়ার বাইরে সেখানে অন্য কিছু হয়নি।’ আরেক অভিযুক্ত মাহাবুব হোসেনও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘জুনিয়র শিক্ষার্থীরা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফলে তাদের নিয়ে আড্ডা ও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ মেহেদী হাসান মিঠুও একই সুরে কথা বলে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, র্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে দুজন শিক্ষার্থী অভিযোগ জমা দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ছাড়া ওই ব্যাচের ক্লাস ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদেরও সঙ্গে কথা বলে মূল ঘটনা জানার চেষ্টা করা হবে। যদি র্যাগিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, সে যে–ই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে থাকা শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেসরকারি এই প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে দেখিয়ে আবাসন বৃত্তি থেকে তাঁদের বঞ্চিত করছে, এমন অভিযোগে আজ বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে অবস্থান নেন।
এর আগে দুপুর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাঁদের স্লোগানের মধ্যে ছিল: ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, ভুজুংভাজুং ছেড়ে দে’, ‘এক দুই তিন চার, বৃত্তি আমার অধিকার’ এবং ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, নইলে গদি ছেড়ে দে’।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নীতিমালায় আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে তাঁরা আবাসন বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পটি বেসরকারি হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হল না হওয়ায় তাঁদের বৃত্তি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোনো হল নেই। আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের মেধাবী প্রজেক্ট নামের একটি প্রকল্প আমাদের জন্য করেছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যত কোনো হল নয়।’
শিক্ষার্থী সুমন আরও বলেন, ‘বৃত্তি নীতিমালায় সুকৌশলে আস–সুন্নাহ প্রজেক্টকে হল হিসেবে উপস্থাপন করে বৃত্তি থেকে আমাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এ পাঁয়তারাকে রুখে দিতে প্রতিবাদ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্প থেকে যখন আগামী জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাবে, তখন তাদের আশ্রয়স্থল কোথায়? আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা আরও কঠিন আন্দোলন করব।’
শিক্ষার্থীরা প্রায় বিকেল চারটা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে থাকেন। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে ফিরে যান।
জানা যায়, আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত মেধাবী প্রকল্পের আওতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে থাকেন। এই প্রকল্পে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।