হাঁপানি আছে বুঝবেন কীভাবে, চিকিৎসা কী
Published: 6th, May 2025 GMT
অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন সরকার, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টারভেনশনাল পালমনোলজি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ সোসাইটি (বিপস)
আজ বিশ্ব অ্যাজমা দিবস। অ্যাজমা বা হাঁপানি নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে ১৯৯৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতিবছরের মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাজমা ডে’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইনহেলার চিকিৎসা সবার নাগালে রাখুন’।
হাঁপানি শ্বাসনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ। পৃথিবীতে প্রায় ২৬ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর এ রোগে ভুগে সাড়ে চার লাখ মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় এক কোটি মানুষ হাঁপানির সমস্যায় ভুগছে।
হাঁপানিতে ১ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। হাঁপানি চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ইনহেলার। এককভাবে স্টেরয়েড ইনহেলার বা উপশমকারী ওষুধের মিশ্রণে ইনহেলার অ্যাজমা চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ চিকিৎসা।
হাঁপানি কীভাবে বুঝবেনহাঁপানি শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এর মূল উপসর্গগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া, বুকে চাপ অনুভূত হওয়া বা দমবন্ধভাব। বছরে বেশ কয়েকবার, বিশেষত অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলেই এসব উপসর্গ শুরু হয়ে যায়। হাঁপানি রোগীরা বিভিন্ন পদার্থের প্রতি অতি সংবেদনশীল থাকেন। সেসব জিনিসের সংস্পর্শে তাঁদের উপসর্গ বাড়ে।
বেশির ভাগ রোগীর শৈশব বা অল্প বয়স থেকেই হাঁপানি, অ্যালার্জি, অতি সংবেদনশীলতার ইতিহাস থাকে। এ ধরনের রোগের ইতিহাস থাকে পরিবারেও। কারও যদি হাঁপানির লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা ও ইতিহাস বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে অ্যাজমায় আক্রান্ত হলে বুকের এক্স-রে করানো উচিত। রক্তে অ্যালার্জির মাত্রা, ফেনো, স্পাইরোমেট্রি বা শ্বাসের পরীক্ষা ইত্যাদি করাতে হতে পারে।
কেন হয় অ্যাজমা১.
অ্যালার্জেন: ঘরে বা বাইরে মোল্ড, ফুলের রেণু, পশুপাখির লোম বা পাখা ইত্যাদি বস্তুর প্রতি অনেকের ক্ষেত্রে অতি সংবেদনশীলতাকারক হিসেবে কাজ করে।
২. সংক্রমণ: ফ্লু বা ভাইরাস সংক্রমণ উপসর্গ বাড়ায়।
৩. ধোঁয়া, ধুলা, ঠান্ডা আবহাওয়ার নানা তারতম্য অ্যাজমার তীব্রতা বাড়াতে কাজ করে।
৪. ওষুধ: ব্যথানাশক রক্ত তরল করার ওষুধ উপসর্গ বাড়াতে পারে।
৫. ব্যায়াম, দৌড়, খেলাধুলা বা অতি পরিশ্রমের পর হাঁপানির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৬. অতিরিক্ত আবেগ, হাসি, কান্না, মানসিক চাপ হাঁপানির সমস্যা বাড়াতে পারে।
চিকিৎসা কীহাঁপানির চিকিৎসা জীবনব্যাপী চলবে। কারণ, এই রোগ কখনোই পুরোপুরি সেরে যায় না। কিন্তু এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। হাঁপানির ওষুধ প্রধানত দুই ধরনের। উপশমকারী: যেমন সালবিউটামল এবং প্রতিরোধকারী যেমন লিউকোট্রিন অ্যান্টাগনিস্ট, স্টেরয়েড ইনহেলার, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসনালি সংকোচনরোধক ইনহেলার, ডক্সিসাইক্লিন ইত্যাদি।
এ ছাড়া রোগীকে এই রোগের সঙ্গে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে শিখতে হবে। একে বলা হয় শ্বাসযন্ত্রের পুনর্বাসন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপসর গ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগছেন? কারণ ও প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন
শীতের শুরুতে তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়। কেউ কেউতো এই ঋতুতে প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগতে থাকেন। কারণ এই সময় ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সহজে ছড়িয়ে পড়ে। গলার স্নায়ু ও টিস্যুতে জ্বালা, খসখসে ভাব এবং ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। গলা ব্যথা ছোট একটি সমস্যা মনে হলেও, এটি কথা বলা, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি ঘুমের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শীতকালে এই ধরনের অস্বস্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। বিভিন্ন কারণে গলা ব্যথা হয়।
ভাইরাসজনিত সংক্রমণ
সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) এবং কোভিড-১৯ সবচেয়ে বেশি গলা ব্যথার কারণ হয়ে থাকে। এসব ভাইরাস গলার ভেতরের টিস্যুকে আক্রান্ত করে ব্যথা, জ্বালাপোড়া বা খসখসে ভাব তৈরি করে।
আরো পড়ুন:
পেটে ভর দিয়ে ঘুমানোর প্রভাব
শীতকালে কত সময় ধরে গোসল করা ভালো
ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ
স্ট্রেপ থ্রোট নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ তীব্র গলা ব্যথার জন্য দায়ী। এতে গলায় প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বর এবং লালচে ভাব দেখা যায়।
অ্যালার্জি
ধুলোবালি, পোলেন, পশুর লোম ইত্যাদির প্রতি অ্যালার্জি থাকলে নাক ও গলা দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরা বাড়ে, যা গলা ব্যথার কারণ হতে পারে।
শুষ্ক বাতাস
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় এবং ঘরের ভেতরে হিটার ব্যবহারের কারণে পরিবেশ আরও শুষ্ক হয়। এতে গলার টিস্যু শুকিয়ে গিয়ে জ্বালা ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।
ধূমপান
ধোঁয়ার রাসায়নিক উপাদান গলার ভেতরের অংশকে উত্তেজিত করে। এতে গলা শুকিয়ে যায় এবং ব্যথা বাড়ে।
অ্যাসিড রিফ্লাক্স
পেটের এসিড গলার দিকে উঠে আসলে সেখানকার টিস্যুতে জ্বালা ধরায় এবং ব্যথা হয়।
গলা ব্যথার সাধারণ উপসর্গ
গলায় ব্যথা বা খসখসে অনুভূতি গিলতে সমস্যা বা গলায় চাপ অনুভব গলা বা চোয়ালের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া মুখের ভেতর লালভাব বা প্রদাহ স্বর ভাঙ্গা, কর্কশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া কখনো কখনো হালকা জ্বর, কাশি বা নাক বন্ধ হওয়াগলা ব্যথা প্রতিরোধে কার্যকর উপায়
নিয়মিত হাত ধোওয়া
২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুলে সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। বাইরে থেকে এসে, খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত ধোওয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রচুর পানি ও গরম পানীয় পান
শীতকালে শরীর সহজে পানিশূন্য হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি, স্যুপ বা গরম পানীয় পান করলে গলা আর্দ্র থাকে এবং ব্যথা কম হয়।
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার
ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ালে গলার শুষ্কতা কমে যায়। বিশেষ করে ঘুমের সময় হিউমিডিফায়ার ব্যবহার খুব উপকারী।
জ্বালামূলক উপাদান থেকে দূরে থাকা
ধোঁয়া, কড়া গন্ধের ক্লিনার, স্প্রে, ধুলোবালি এগুলো গলা উত্তেজিত করে। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো
ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
গলা ব্যথা উপশমে ঘরোয়া কার্যকর উপায়
লবণ-পানির গার্গল: গরম পানিতে অল্প লবণ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল করলে গলার ফোলা কমে এবং ব্যথা হ্রাস পায়।
মধু: এক চামচ মধু গলার ভেতরকে নরম করে এবং আরাম দেয়। তবে এক বছরের নিচের শিশুদের কখনো মধু দেওয়া যাবে না।
হার্বাল চা: ক্যামোমাইল, আদা বা লাইকোরিস রুট চা গলার প্রদাহ কমায় এবং শরীরকে আর্দ্র রাখে।
লজেন্স বা হার্ড ক্যান্ডি: এগুলো লালা নিঃসরণ বাড়ায়, যা গলা আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
সাধারণত গলা ব্যথা কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে নিচের অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি—
• গলা ব্যথা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে
• উচ্চতাপমাত্রার জ্বর, শ্বাস নিতে সমস্যা বা তীব্র ব্যথা থাকলে
• গিলতে খুব বেশি কষ্ট হলে
• গলায় সাদা দাগ বা পুঁজ দেখা দিলে
সূত্র: ফ্যামিলি কেয়ার সেন্টার
ঢাকা/লিপি