এবার কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ ১৫ জনকে পুশইন
Published: 8th, May 2025 GMT
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের দলই সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ ১৫ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত বুধবার ভোরে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের আটক করে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও ৩ শিশু রয়েছে।
এর আগে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে বুধবার খাগড়াছড়ির তিন সীমান্ত দিয়ে ৮১ জন এবং কুড়িগ্রামের রৌমারি সীমান্ত দিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে ৩০ জনকে পুশ ইন করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পাঁচ বছর ধরে তারা ভারতের আসামে বসবাস করছেন। হঠাৎ ভারতীয় পুলিশ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরার মানিক ভান্ডার এলাকায় নিয়ে এসে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। তাদের বাড়ি নড়াইল, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় বলে দাবি করেছেন।
আটক ব্যক্তিরা আরও জানান, তাদের সঙ্গে আরও অনেকে ছিলেন। এই সংখ্যা তিন শতাধিক হবে। বিএসএফ তাদের কয়েকজনকে কমলগঞ্জের দলই সীমান্ত দিয়ে গেট খুলে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। তবে অন্যদের কোন সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তোরা কিছু বলতে পারেননি।
মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত নারী সদস্য বিনা রানী দেব জানান, আটক লোকদের প্রথমে বিজিবি ক্যাম্প থেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তোলার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। তবে পরবর্তীতে তাদের আর থানায় নেওয়া হয়নি।
মাধবপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শীব নারায়ন শীল বলেন, বিএসএফ ১৫ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে। বিজিবি তাদের আটক করে নিয়ে গেছে। এদিকে সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য অনেক লোক জড়ো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
শ্রীমঙ্গলের ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, শুনেছি, বিজিবি ১৫ জনকে আটক করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত থানায় হস্তান্তর করেনি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, এ বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কমলগঞ জ ব এসএফ ১৫ জনক
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন
ভোলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১৯ জেলে ৯৭ দিন ভারতে আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন। গত বুধবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন।
দেশে ফেরত জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে তাঁদের বহনকারী ট্রলার ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে যায়। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের আটক করে।
দেশে ফেরা জেলেরা হলেন সফিজল ব্যাপারী (মাঝি), শাহে আলম, ছিডু মুন্সি, রাজীব চন্দ্র দাস, আক্তার হোসেন, মিন্টু হাওলাদার, মো. ফরিদ, মো. আলমগীর, মোহাম্মদ ফরিদ, মো. ইউনুছ, মো. বাবুল সরদার, মো. নিরব হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. শাহ আলম হাওলাদার, গৌতম চন্দ্র দাস, জাকির হোসেন, সগির সিকদার, মো. টুটুল ও শহীদুল ইসলাম। তাঁরা সবাই ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
জেলে ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর শান্তির হাট ঘাট এলাকা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যান ওই জেলেরা। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিক হারিয়ে তাঁরা ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করেন। বিএসএফ তাঁদের আটক করে সুন্দরবনের কোস্টাল থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাঁদের আলীপুর সদর ও পরে বারাইপুর জেলে পাঠানো হয়। দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারিতে হস্তান্তরের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের সহায়তায় বুধবার সন্ধ্যায় মোংলা বন্দরে পৌঁছান তাঁরা। পরে দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরেন।
জেলেরা ফিরলেও মাছ ধরার নৌকাটি ফেরত দেওয়া হয়নি দাবি করেন সফিজল মাঝির ছেলে হোসাইন স্বাধীন। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফিশিং বোটটি ফেরত পাইনি। নৌকাটি না পেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’
আরও পড়ুনবঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার বিকল, ভোলার ১৯ জেলে ভারতের কারাগারে২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫জেলে মো. শাহে আলম বলেন, সাগর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় প্রশাসন মাছসহ ফিশিং বোট নিয়ে গেছে।
ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই জেলেদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির ভোলা সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন শেখ। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন আর কোনো জেলেকে এভাবে নির্যাতন না করা হয়, সেই অনুরোধ জানাই।’
আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১২ দিন ধরে ১৫ জেলে নিখোঁজ২২ নভেম্বর ২০২৫আল মামুন শেখ বলেন, জেলেরা আটক হওয়ার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছ থেকে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে দীর্ঘ ৯৭ দিন পর কোস্টগার্ডের সহায়তায় ওই জেলেরা দেশে ফিরেছেন।
কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বন্দিবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশ ৪৭ ভারতীয় জেলেকে ও ভারত ৩২ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দেয়।
ভোলা সদর ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ৯৭ দিনের মাথায় তাঁরা ফিরেছেন। আটক থাকা অবস্থায় তাঁদের পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুনভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী০১ ডিসেম্বর ২০২৫