ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর এই তিন উপজেলার ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ভারতের সঙ্গে। গত এক বছর এই তিন উপজেলার সীমান্তে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলি ও নির্যাতনে অন্তত সাত বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন। তাদের গুলিতে একজন ভারতীয় নাগরিকও আহত হন। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে সীমান্ত ঘেঁষা বাসিন্দাদের মধ্যে। 

এসব ঘটনায় বিএসএফকে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর না যাওয়ার পরামর্শ তাদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কসবার পুটিয়া সীমান্তে গরু চড়াতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নামে এক কৃষক নিহত হন। পরে পতাকা বৈঠক করে তার মরদেহ ফিরিয়ে আনে বিজিবি। গত ৮ এপ্রিল বিজয়নগরের সেজামুড়া সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে মৃত্যু হয় মুরাদুর রহমান নামে এক কৃষকের। গত ২৫ এপ্রিল আখাউড়ার ইটনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গুরুতর আহত হন আসাদুল ইসলাম নামে এক যুবক। 

আরো পড়ুন:

হবিগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার

বিজিবির অভিযানে এপ্রিলে শত কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী জব্দ

এছাড়া, ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কসবার পুটিয়া সীমান্তে ঘোরাফেরার সময় বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে হাসান নামে এক যুবককে। সেই বছরের ২৫ নভেম্বর কসবার বায়েক সীমান্তে ঘুরতে গিয়ে বিএসএফের ছুঁড়া গুলিতে আহত হন রুকন উদ্দিন ও জাকির হোসেন নামে আরো দুই যুবক। 

সবশেষ ৫ মে কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাকিব নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সুজন বর্মণ (৩৫) নামে এক ভারতীয় নাগরিকও গুলিবিদ্ধ হন।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক। চোরাকারবারি ধরার অজুহাতে নিজেদের সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশিদের হয়রানি করে বিএসএফ সদস্যরা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মূলত সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জমি চাষ করেন, চড়াতে দেন গবাধি পশু। ফলে শূন্যরেখায় আনাগোনা থাকে স্থানীয়দের।  

বিজয়নগরে বিএসএফের নির্যাতনে নিহত মুরাদুর রহমানের স্ত্রী রত্না বেগম বলেন, “আমার স্বামীকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যান। তাকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করে তারা। পরে বিএসএফ তাকে ধানের জমিতে ফেলে রেখে যায়। আমার স্বামী কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করেনি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।” 

নিহত আল-আমিনের বাবা সুলতান মিয়া জানান, বাড়ির একটি গরু ছুটে গেলে সেটিকে আনতে সীমান্ত এলাকায় যান তার ছেলে। এসময় ছেলেকে গুলি করা হয়।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, “আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে যখন ভেতরে চলে যায় তখন বিএসএফ বাধা দেয়। আমরা বারবার বলি সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর যাবেন না। ভেতরে গেলে সীমান্ত হত্যার একটা বিষয় থাকে। এখন আমরা বিএসএফের সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে কঠোরভাবে কথা বলছি।”

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৬০ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান জানান, “বিএসএফের প্রতিটি গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা হয়। কিভাবে কী ঘটেছে, সেগুলো জানার চেষ্টা করা হয়।”

ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ ব এসএফ র গ ল ব জয়নগর বর ড র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে কুপিয়ে ও তীর মেরে ৩ বাংলাদেশিকে হত্যা

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই এলাকায় কুপিয়ে ও তীর মেরে তিন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা বলে অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (৫৫ বিজিবি) পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

‘সাজিদ হত্যার ৯০তম দিন, এরপর কি আমি?’

দুই স্ত্রীর বিবাদে প্রাণ গেল যুবদল নেতার

নিহতরা হলেন- হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আলীনগর গ্রামের আশ্বব আলীর ছেলে জুয়েল মিয়া (৩২), বাসুল্লা গ্রামের কনা মিয়ার ছেলে পতি মিয়া (৪৫) ও কবিলাশপুর গ্রামের কদ্দুস মিয়ার ছেলে সজল মিয়া (২০)।  

ত্রিপুরার স্থানীয় দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাংবাদিক আশীষ চক্রবর্তী জানান, বুধবার সকালে খোয়াই জেলার বিদ্যাবিল এলাকায় পাহাড়ি আদিবাসীরা তিন বাংলাদেশিকে কুপিয়ে ও তীর মেরে হত্যা করে। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে খোয়াই থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তারেকুর রহমান বলেন, “রাতে বিজিবি নিহতদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে ভারতে পাঠিয়েছে। সেখান থেকে পাঠানো লাশের ছবিতে জুয়েল, পতি ও সজলকে শতভাগ শনাক্ত করা গেছে।”  

৫৫ বিজিবির (হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন) ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজিলুর রহমান বুধবার রাত ১২টায় বলেন, ‍“মরদেহগুলো বাংলাদেশি তিনজনের। বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের প্রক্রিয়া চলছে।”

ঢাকা/মামুন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে হত্যার শিকার ৩ বাংলাদেশির লাশ ফেরত
  • ত্রিপুরায় গরুচোর সন্দেহে ৩ বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যা
  • ভারতে কুপিয়ে ও তীর মেরে ৩ বাংলাদেশিকে হত্যা