ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত: বিএসএফের গুলি-নির্যাতনে এক বছরে হতাহত ৭
Published: 10th, May 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর এই তিন উপজেলার ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ভারতের সঙ্গে। গত এক বছর এই তিন উপজেলার সীমান্তে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলি ও নির্যাতনে অন্তত সাত বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন। তাদের গুলিতে একজন ভারতীয় নাগরিকও আহত হন। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে সীমান্ত ঘেঁষা বাসিন্দাদের মধ্যে।
এসব ঘটনায় বিএসএফকে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর না যাওয়ার পরামর্শ তাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কসবার পুটিয়া সীমান্তে গরু চড়াতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নামে এক কৃষক নিহত হন। পরে পতাকা বৈঠক করে তার মরদেহ ফিরিয়ে আনে বিজিবি। গত ৮ এপ্রিল বিজয়নগরের সেজামুড়া সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে মৃত্যু হয় মুরাদুর রহমান নামে এক কৃষকের। গত ২৫ এপ্রিল আখাউড়ার ইটনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গুরুতর আহত হন আসাদুল ইসলাম নামে এক যুবক।
আরো পড়ুন:
হবিগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার
বিজিবির অভিযানে এপ্রিলে শত কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী জব্দ
এছাড়া, ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কসবার পুটিয়া সীমান্তে ঘোরাফেরার সময় বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে হাসান নামে এক যুবককে। সেই বছরের ২৫ নভেম্বর কসবার বায়েক সীমান্তে ঘুরতে গিয়ে বিএসএফের ছুঁড়া গুলিতে আহত হন রুকন উদ্দিন ও জাকির হোসেন নামে আরো দুই যুবক।
সবশেষ ৫ মে কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাকিব নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সুজন বর্মণ (৩৫) নামে এক ভারতীয় নাগরিকও গুলিবিদ্ধ হন।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক। চোরাকারবারি ধরার অজুহাতে নিজেদের সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশিদের হয়রানি করে বিএসএফ সদস্যরা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মূলত সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জমি চাষ করেন, চড়াতে দেন গবাধি পশু। ফলে শূন্যরেখায় আনাগোনা থাকে স্থানীয়দের।
বিজয়নগরে বিএসএফের নির্যাতনে নিহত মুরাদুর রহমানের স্ত্রী রত্না বেগম বলেন, “আমার স্বামীকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যান। তাকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করে তারা। পরে বিএসএফ তাকে ধানের জমিতে ফেলে রেখে যায়। আমার স্বামী কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করেনি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।”
নিহত আল-আমিনের বাবা সুলতান মিয়া জানান, বাড়ির একটি গরু ছুটে গেলে সেটিকে আনতে সীমান্ত এলাকায় যান তার ছেলে। এসময় ছেলেকে গুলি করা হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, “আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে যখন ভেতরে চলে যায় তখন বিএসএফ বাধা দেয়। আমরা বারবার বলি সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর যাবেন না। ভেতরে গেলে সীমান্ত হত্যার একটা বিষয় থাকে। এখন আমরা বিএসএফের সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে কঠোরভাবে কথা বলছি।”
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৬০ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান জানান, “বিএসএফের প্রতিটি গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা হয়। কিভাবে কী ঘটেছে, সেগুলো জানার চেষ্টা করা হয়।”
ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ ব এসএফ র গ ল ব জয়নগর বর ড র
এছাড়াও পড়ুন:
ত্রিপুরা সীমান্তে জড়ো ৭৫০ জন ঠেলে দিতে পারে বাংলাদেশে
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় অন্তত ৭৫০ ‘সন্দেহভাজন বাংলাদেশি’কে আটক রাখা হয়েছে, যাদের পুশইন করা হতে পারে।
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে, রাজস্থান থেকে ‘বাংলাদেশি সন্দেহে’ আটক ১৪৮ জনকে গতকাল বৃহস্পতিবার আগরতলায় নেওয়া হয়। সেখানে আরও ছয় শতাধিক ‘সন্দেহভাজন বাংলাদেশি’ আটক ছিল। এদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতের নানা রাজ্যে ‘অনুপ্রবেশকারী’ খোঁজার অভিযান শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে ‘অবৈধভাবে’ ভারতে বসবাসকারী ‘বাংলাদেশি সন্দেহে’ অনেককে আটক করা হয়। অনেকে নির্যাতনের অভিযোগ করছেন। এদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। সমকালের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ দিনে পুশইনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪২-এ।
রাজস্থান পুলিশের বরাত দিয়ে জয়পুর থেকে বিবিসি জানায়, বুধবার পর্যন্ত ১০০৮ জনকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হয়েছে। চারটি ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ তাদের রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৬১ জনকে পুলিশ চিহ্নিত করেছে ‘বাংলাদেশি’ বলে। বাকিদের ভারতীয় পরিচয়পত্র দেখে ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ।
এদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আরও ৩০ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে আসা ১৪ জনের মধ্যে চারজন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার চরবিটারি এবং ১০ জন ফুলবাড়ী উপজেলার ধনীরাম গ্রামের বাসিন্দা। বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে বিকেলে বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি।
হিলি সীমান্তে ড্রোন উদ্ধার
দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে ধানক্ষেত থেকে একটি ড্রোন উদ্ধার করেছে বিজিবি ও থানা পুলিশ। হাকিমপুর থানার ওসি এস এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত বুধবার বিকেলে ক্ষেতে ড্রোন পড়ে থাকতে দেখে তা বাড়ি নিয়ে যান কৃষক। রাত ১০টার দিকে পুলিশ ও বিজিবি গিয়ে সেটি থানায় নিয়ে আসে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)