নতুন সংবিধান প্রণয়নে ২–৩ বছর সময় লাগতে পারে: উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
Published: 11th, May 2025 GMT
নতুন সংবিধান প্রণয়নে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, নতুন সংবিধান প্রণয়নে পার্শ্ববর্তী দেশে এমন উদাহরণ আছে যে আট থেকে নয় বছর লেগেছে।
আজ রোববার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব নিয়ে এ আলোচনার আয়োজন করে ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ে এই প্ল্যাটফর্ম গঠিত।
আলোচনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নাগরিক কোয়ালিশনের সহ-আহ্বায়ক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। এতে সংবিধান সংস্কার নিয়ে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। এসব প্রস্তাব কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ও লেখক জিয়া হাসান।
নতুন সংবিধান প্রণয়নে সময় লাগবে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন এ জন্য কি আমি বাহাত্তরের সংবিধান কন্টিনিউ করব (অব্যাহত রাখব)?’ তিনি বলেন, নতুন সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত যে সংসদ থাকবে, সে সংসদটা সংবিধান সংসদ হিসেবে কাজ করবে। এই সংসদ বাহাত্তরের সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনগুলো করে ফেলবে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, যখন একটা সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান প্রণয়ণের কাজ করে, তখন কিন্তু সেটি খুব অল্প সময় দিতে পারবে। যেমন কখনো কখনো এ রকম করা হয় যে সপ্তাহে দুই দিন তারা সংবিধান পরিষদের কাজ করবে; একটা বা চারটা সেশন করবে। এতে সংবিধান প্রণয়নে কম সময় পাওয়া যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ রকম একটা সংবিধান পরিষদ ৯০ দিনে সংবিধান রচনা করে ফেলবে, এটা একটু উচ্চাশা।
সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা সভায় উপস্থিত দর্শকদের একাংশ। আজ রোববার সকালে রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ধ ন প রণয়ন নত ন স ব ধ ন প প রস ত ব উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন: প্রধান উপদেষ্টা
দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংকট নিরসনে সাত দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
তিনি বলেন, “অর্থায়ন কমে আসছে। একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা।”
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা এই প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, “গণহত্যা শুরুর আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেই। আন্তর্জাতিক অর্থায়নও মারাত্মক ঘাটতিতে ভুগছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সমাধানও সেখানেই নিহিত।”
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “এটাই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় জিম্মি করে রাখা উচিত নয়।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার তুলনায় প্রত্যাবাসনে অনেক কম সম্পদের প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গারা বরাবরই নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চেয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ সংকটের শিকার। আমাদের সামাজিক, পরিবেশগত ও আর্থিকভাবে বিপুল চাপ সহ্য করতে হচ্ছে।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমাদের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ—যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য—বিবেচনায় দেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।”
টেকসই সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাত দফা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেন—
প্রথমত, রাখাইন অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু।
তৃতীয়ত, রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড় এবং তা পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
চতুর্থত, রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় স্থায়ী অন্তর্ভুক্তির জন্য আস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ।
পঞ্চমত, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
ষষ্ঠত, জবাবদিহি ও পুনর্বাসনমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
সপ্তম, মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরার জন্য অপেক্ষায় রাখার সামর্থ্য রাখে না।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ আমাদের সংকট সমাধানে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”
ঢাকা/ইভা