টানা চার দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ভারত ও পাকিস্তান গত শনিবার (১০ মে) যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতায় এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে।

তবে পাকিস্তান দাবি করে বলছে যে, তারা যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি বরং ভারতীয়দের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে।

সোমবার (১২ মে) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

আরো পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার কেমন ক্ষতি হলো?

সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত: যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপের আহ্বান

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, “পাকিস্তান কখনো কোনো যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি।”

সশস্ত্র বাহিনীর কৌশলগত পদক্ষেপ ও যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানাতে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআর প্রধান বলেন,  “৬ ও ৭ মে রাতে, সেই জঘন্য ও কাপুরুষোচিত হামলার পর, ভারতীয়রা (যুদ্ধবিরতির) অনুরোধ করে। পাকিস্তান খুব স্পষ্টভাবে জানায়- এই পদক্ষেপের প্রাপ্য জবাব দেওয়ার পরেই আমরা বিবেচনা করবো।”

লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরীর মতে, ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’- এর অধীনে পাকিস্তান তাদের প্রতিশোধমূলক অভিযান পরিচালনা করার পরই ইসলামাবাদ ভারতীয় প্রস্তাবের প্রতি সাড়া দিয়েছে।

তিনি বলেন,  “সুতরাং ১০ মে, প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশোধের পরে.

..এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধ ও হস্তক্ষেপের ভিত্তিতে, আমরা ভারতীয়দের ইতিমধ্যেই করা অনুরোধের প্রতি সাড়া দিয়েছি।”

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভাইরাল দাবিরও জবাব দেন যে, পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে একজন ভারতীয় পাইলট আটক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পাকিস্তানে কোনো ভারতীয় পাইলট আটক নেই।” তিনি বলেন, “এগুলো সবই ভুয়া খবর এবং নেতিবাচক প্রচারণার অংশ, যা একাধিক ভারতীয় উৎস থেকে তৈরি করা হয়েছে।”

দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার উচ্চ ঝুঁকি তুলে ধরে, পাকিস্তান আইএসপিআর প্রধান ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের ধারণাটিকে ‘অকল্পনীয়’ এবং ‘নিছক বোকামি’ বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, “দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক শক্তির মধ্যে সংঘাতে...এই ধরনের সংঘাত আসলে একটি অযৌক্তিকতা।

তিনি আরো বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, এই ধরনের সংঘাত ১.৬ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের বিপদ ডেকে আনতে পারে।”

আইএসপিআর প্রধান বলেন, “বাস্তবে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের কোনো স্থান নেই এবং যদি কেউ যুদ্ধের জন্য এই স্থান তৈরি করতে চায়, তবে সে আসলে পারস্পরিক ধ্বংসের জন্য স্থান তৈরি করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী জানান, ভারতের উস্কানি সত্ত্বেও পাকিস্তান পুরো সংঘাত জুড়ে কৌশলগত পরিপক্কতার সঙ্গে কাজ করেছে। তিনি বলেন, “ভারতীয় আগ্রাসনের জবাব সতর্কতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে যাতে অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা এড়ানো যায় এবং একই সাথে প্রচলিত সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে ‘দ্বিগুণ’ উচ্চতর জবাব দেওয়া হয়েছে।”

আইএসপিআর প্রধান ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’কে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতি পাকিস্তানের একটি ব্যাপক জাতীয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “এই অভিযানের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী জাতির কাছে দেওয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে।”

তিনি বলেন, “অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস জাতীয় শক্তির সকল উপাদানের একত্রিত হওয়ার এক দুর্দান্ত উদাহরণ। পাকিস্তানি জনগণের অপ্রতিরোধ্য সমর্থনে, আমরা কার্যকরভাবে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং আমাদের মহান মাতৃভূমির প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি।” 

লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সংঘাতের শুরুতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী তিনটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল: “আমরা ভারতীয় আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেব। সেই জবাব আমাদের নিজস্ব পছন্দের সময়, স্থান এবং পদ্ধতিতে আসবে। এবং যখন আমরা পাল্টা আঘাত করব, তখন পুরো বিশ্ব জানবে- এটি এমন কিছু হবে না যা আপনাকে ভারতীয় মিডিয়ার কাছে বলতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এগুলো কেবল অভিপ্রায়ের বিবৃতি নয় বরং উদ্দেশ্য, যা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা এটাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এবং তা পূরণ করেছি।”

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সশস ত র ব হ ন র অন র ধ

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় সফরে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির সরকারি সফরে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সেখানে তিনি দেশটির উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি তিনি প্রবাসী পাকিস্তানিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছেন। আজ রোববার পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব খবর জানানো হয়।

গত জুনে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন আসিম মুনির। সে সময় তিনি হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিদেশি কোনো সেনাপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন কোনো প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম সরাসরি বৈঠক।

গত জুনের সফরে আসিম মুনির বলেছিলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে আরও বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক সম্পর্ক গড়ে তোলার বিপুল সম্ভাবনা’।

পাকিস্তান আইএসপিআরের আজকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ট্যাম্পায় সেনাপ্রধান সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) বিদায়ী কমান্ডার জেনারেল মাইকেল ই. কুরিলার অবসরগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। একই সঙ্গে অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপারের দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত কমান্ড পরিবর্তন অনুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন।

সেন্ট্রাল কমান্ড হলো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একটি প্রধান কমান্ড, যা মূলত মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর-পশ্চিম এশিয়া ও কেন্দ্রীয় এশিয়ার দেশগুলোতে মার্কিন সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কুরিলার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতা জোরদারে তাঁর অবদানের কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে অ্যাডমিরাল কুপারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যৌথ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

গত জুনে জেনারেল কুরিলা পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে ‘অসাধারণ অংশীদার’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তখন তিনি বেলুচিস্তানে সন্ত্রাস মোকাবিলা এবং ইসলামিক স্টেটসহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন।

আরও পড়ুনপাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির আবারও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন০৭ আগস্ট ২০২৫

ফিল্ড মার্শাল মুনির তখন যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে তাঁরা পারস্পরিক পেশাগত আগ্রহের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। এ সময় মুনির জেনারেল কেইনকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

আইএসপিআর জানায়, সেনাপ্রধান বৈঠকের ফাঁকে মিত্রদেশগুলোর প্রতিরক্ষাপ্রধানদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন।

পাকিস্তানি প্রবাসীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা রাখার পাশাপাশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান।

প্রবাসীরা পাকিস্তানের অগ্রগতি ও উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্পের শুল্ক শাস্তি, মোদির ভারতের সামনে সহজ কোনো পথ নাই
  • যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় সফরে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান