কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে চামড়া শিল্প রক্ষা কমিটি। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়।

সভায় মাওলানা আফজাল হোসেন বলেন, কোরবানির চামড়া ব্যবসা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চামড়ার শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে এ শিল্পকে বাঁচিতে  সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

চামড়া শিল্প রক্ষা কমিটির সদস্য আ ফ ম আকরাম হোসেন বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আগে প্রতিটি কোরবানির চামড়া ছিল সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। ধীরে ধীরে বিশেষ করে ১৫ থেকে ১৬ বছরে পরিকল্পিতভাবে চামড়ার দাম কমিয়ে আনা হয়েছে। যে চামড়া ২০০০ সালে ছিল পাঁচ হাজার টাকা, তার মূল্য এখন আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা। যেকোনো মূল্যে এই জায়গা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। 

সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি চামড়া শিল্পকে উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারকে আন্তরিক ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় চামড়া শিল্প রক্ষা কমিটি কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। 

কমিটির সভাপতি মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহিয়ার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মুফতি আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, আতিকুর রহমান আতিকী, মুফতি সুলতান মাহমুদ, ড.

শহীদুল ইসলাম ফারুকী, মুফতি আ ফ ম আকরাম হুসাইন, মাওলানা আ. গাফফার, মুফতি সালিমুল্লাহ খান মাওলানা মীর ইদরীস।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক রব ন র

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন ব্যাংক অধ্যাদেশের দ্রুত বাস্তবায়ন সময়ের দাবি

অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের কারণে দেশের প্রায় দুই ডজন ব্যাংক এখন রুগ্‌ণ। এ তালিকায় সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি, এমনকি কিছু আঞ্চলিক বিদেশি ব্যাংকও রয়েছে। বিগত দেড় দশকে লুণ্ঠিত রুগ্‌ণ ব্যাংকগুলোকে একীভূত কিংবা অধিগ্রহণ করার এখন ক্ষমতা পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ওই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।
৯৮টি ধারাবিশিষ্ট এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো তপশিলি ব্যাংক অকার্যকর হয়ে গেলে বা কার্যকর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা না গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রেজল্যুশনের অর্থ হচ্ছে, দেউলিয়াত্বের মুখে পড়া ব্যাংকের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষাই হবে এই ব্যাংক রেজল্যুশনের প্রধান উদ্দেশ্য।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, অকার্যকর বা অতি দুর্বল ব্যাংককে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তর আদেশ জারি করবে। তবে শেয়ারগ্রহীতাকে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি হতে হবে। কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করলে ও প্রতারণামূলকভাবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই ব্যাংককে রেজল্যুশনের আওতায় নিতে পারবে।

নতুন অধ্যাদেশটিকে ব্যাংক খাত সংস্কারে বড় ধরনের অগ্রগতি বলে মনে করছেন ব্যাংক মালিক কেউ কেউ। তাদের মতে, দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ৬১টি ব্যাংক থাকার পক্ষে নয়। রুগ্‌ণ ও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রেজল্যুশনের আওতায় এনে সংখ্যা কমিয়ে ফেলার এটিই উৎকৃষ্ট সময়। রেজল্যুশনের পর যে ব্যাংকগুলো থাকবে, সেগুলোর উদ্দেশ্য ও কর্মক্ষেত্র নির্দিষ্ট করে দেওয়া দরকার। 
সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে দুর্বল যে কোনো ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ওই অধ্যাদেশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যাংকের বিদ্যমান শেয়ারধারী বা নতুন শেয়ারধারীদের মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে। ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করার সুযোগও থাকবে। এতে করে পশ্চিমের মতো ‘গুড ব্যাংক, বেড ব্যাংক’ করে ব্যাংক সংস্কারের সুযোগ বাড়বে। বাড়তে পারে স্ট্র‍্যাটেজিক বা কৌশলগত বিনিয়োগ বা পুঁজি আনার সুযোগও। 

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করবে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত কাউকে অবসায়ক নিয়োগ দেবেন। অবসায়ন আদেশ কার্যকর হওয়ার পর কোনো ব্যাংকের দায়ের ওপর সুদ বা অন্য কোনো মাশুল কার্যকর হবে না। আবার কোনো ব্যাংক নিজে থেকেও অবসায়নের প্রক্রিয়ায় যেতে পারবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে না। লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমানত ও দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।
সাধারণত যে দেশের অর্থনীতি যত বেশি সুসংহত হয়, সে দেশে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ব্যাংকের সংখ্যাও তত কম হয়। এ ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার উদাহরণ প্রণিধানযোগ্য। এসব দেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় স্থানীয় ব্যাংকের সংখ্যা বাড়েনি। এসব দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় সেখানে বিদেশি ব্যাংকগুলোও আকর্ষণ বাড়াচ্ছে। থাইল্যান্ডের জিডিপির আকার ছাড়িয়েছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে সরকারি খাতে ৬টি এবং বেসরকারি খাতে ১২টি ব্যাংক। অর্থাৎ সব মিলিয়ে দেশটিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিজস্ব ব্যাংকের সংখ্যা ১৮। এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশ সিঙ্গাপুরে স্থানীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৫টি। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ায় স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮টি। অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় প্রতিনিয়ত দেশগুলোয় বিদেশি ব্যাংকগুলো শাখা খুলছে। থাইল্যান্ডে ৪৫টি, সিঙ্গাপুরে ২২টি ও মালয়েশিয়ায় ২৬টি বিদেশি ব্যাংক। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও আমাদের চেয়ে ব্যাংকের সংখ্যা কম। দেশটিতে ১২টি সরকারি ও ২২টি বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে। তবে ভারতে অঞ্চলভিত্তিক ৪৩টি ব্যাংকের পাশাপাশি ৪৬ বিদেশি ব্যাংকও কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এসব দেশের তুলনায় ব্যাংক খাতে বাংলাদেশের চিত্র পুরো উল্টো। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বিগত সরকার একের পর এক নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয় এবং এ সময়ে পরিচালনা পর্ষদসহ বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তন আনা হয়। সব ক্ষেত্রেই বিবেচনায় নেওয়া হয় রাজনৈতিক মতাদর্শ। ব্যাংকের সংখ্যা একদিকে বেড়েছে, অন্যদিকে লাগামহীন হয়েছিল দুর্নীতি। যারা পরিচালক ছিলেন, তারাই আবার ব্যাংকের মালিক এবং তারাই ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের কাজে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন। এতে ব্যাংক খাতে ক্ষত সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হয়েছে দেশে। কারণ একটি দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হিসেবে ব্যাংক খাতকে বিবেচনা করা হয়।

ফলে ব্যাংকগুলোয় অনাদায়ী ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং দেশের প্রায় সব ব্যাংকেরই মূলধন কাঠামো দুর্বল হতে থাকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাতের এ ধস আটকাতে পারেনি। বরং প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমতা ও নিয়মনীতি শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রাজনৈতিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে থাকে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন কতটা জরুরি, তা দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্ত থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কার দিকে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে দেশের ব্যাংক খাত অলিগার্কদের হাতে জিম্মি ছিল না। ব্যাংক খাতের মূল সম্পদ হলো ঋণ। আর ঋণের নামে দেশের ব্যাংক খাত লুণ্ঠন করেছে অলিগার্ক শ্রেণি। 

চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর গঠিত নতুন সরকার ব্যাংক খাতের সংস্কার ঘিরে জনমনে আশা সঞ্চার করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্যপ্রাপ্ত এ আইনি ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার তাই সময়ের দাবি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দ্রুত দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকৃত মন্দ ঋণের পরিমাণ জানতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে বিদ্যমান সংকটের সম্মুখীন আর না হতে হয়। সক্ষমতা বাড়াতে হলে সবার আগে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে ব্যাংক খাতের সংকট যত দীর্ঘায়িত হবে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতেও তত বেশি সময় লাগবে। 

মামুন রশীদ: ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ